ঢাকা ০২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

মহামারিকালের মাধ্যমিকে রেকর্ড ৯৩.৫৮% পাস

  • আপডেট সময় : ০২:৫৮:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ মহামারিকালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও সমমানের পরীক্ষায় এবছর এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেছেন। চলতি বছর পাস করেছেন ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এবার মোট পাস করেছেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন পেয়েছে জিপিএ ৫, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ হাজার ৪৪২ জন। গত বছর মাধ্যমিকে পাস করেছিলেন ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবারের মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করেন।
মূল অনুষ্ঠানটি হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। বেলা ১১টায় সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এবার ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক ও সমমানের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন পাস করেছে। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ বোর্ডে ৯৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে ৯৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
রেকর্ড পাসের ৩ কারণ বললেন শিক্ষামন্ত্রী : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে রেকর্ড ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ পাসের পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়ার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মহামারির কারণে এবার কেবল তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেই পরীক্ষা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর। প্রশ্নপত্রে বিকল্প ছিল অনেক বেশি। “এসব কারণেই হয়ত আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো করেছে, তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চেয়ে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর স্কুলের গ-ি অতিক্রম করা এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ হাজার ৪৪২ জন।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।
মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি বাড়ায় তুলনামূলকভাবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মোট সংখ্যাও বেড়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী। আর ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে মহামারীর মধ্যে ‘বাড়তি’ মানসিক চাপকে বড় কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন। দীপু মনি বলেন, “পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে, সেটা ভালো। আবার এই সময়ে মানসিক চাপের মধ্য দিয়েও আমাদের পরীক্ষার্থীরা গিয়েছে, পারিবারিক থেকে শুরু করে নানান ধরনের সমস্যা ছিল।
“কোভিডের কারণে বাড়তি অনেক চাপ ছিল, অনেক ট্রমার মধ্য দিয়েও গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন বা পরিবারের কাউকে হারিয়েছে তারা। এই রকম অনেক অবস্থা ছিল, সেগুলোকেও আমাদের বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অনেকের অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে, অনেকের প্রতিবন্ধিতা থাকে, অনেকের অনেক সমস্যা থাকে। কেউ পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে যায়, কেউ পরীক্ষার সময় হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায়, অনেক রকম কারণে হতে পারে। “আমরাও আমাদের জীবনে অনেক দূর পার করে এসেছি, আমাদের জীবনেও সব সময় এক রকম হয় না। এমনকি ভালো পড়াশোনা করেছে, প্রস্তুতি ছিল, তারপরেও অনেক সময় পরীক্ষা ভালো হয় না। এটি ঘটে।”
যেভাবে হল সাবজেক্ট ম্যাপিং : মহামারীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি করে নির্বাচিত বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়নে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে পরীক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডেসির ফলাফল, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং।’ সব মিলিয়েই এবারের পরীক্ষা ফল ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যেগুলো নৈর্বাচনিক বিষয়, সেগুলোর তো পরীক্ষা হয়েছে। যেগুলো আবশ্যিক বিষয়, যেমন ধরুন বাংলা বা ইংরেজিতে সরাসরি জেএসসি-জেডেসিতে যে নম্বরগুলো পেয়েছে, সেগুলো নেওয়া হয়েছে।
“চতুর্থ বিষয়ের ক্ষেত্রে, যে তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো ছাড়া চতুর্থ বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জেএসসি বা জেডেসি পর্যায়ের আবশ্যিক বিষয় থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, “যেমন ধরুন, যার চতুর্থ বিষয় উচ্চতর গণিত ছিল, তারতো জেএসসি-জেডিসিতে উচ্চতর গণিত বলে কিছু ছিল না। সে জেএসসি-জেডেসিতে গণিতে যা পেয়েছে সেই নম্বরটি থেকে আমরা এখানে নম্বর নিয়ে এসেছি। “আবার, যে চতুর্থ বিষয় জীববিজ্ঞান, তার জেএসসি-জেডেসির বিজ্ঞানের নম্বরটি সেটাকে আমরা নিয়ে এসেছি। সাবজেক্ট ম্যাপিংটা এভাবে হয়েছে।”
জিপিএ-৫ এ শীর্ষে ঢাকা, পাসের হারে ময়মনসিংহ : মহামারিতে নয় মাস বিলম্বিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাশের হার বরিশাল বোর্ডে, ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতবছর পাশের হারে পিছিয়ে থাকা সিলেট বোর্ড এবার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে। এরপরই রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড, তাদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগে টানা আটবার পাসের হারে শীর্ষ ছিল রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। এবার এ বোর্ডের ৯৪ দশমিক ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। প্রতিবারের মত এবারও জিপিএ-৫ এ সবার উপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, এ শিক্ষা বোর্ডের ৪৯ হাজার ৫৩০ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।
২০০১ সালে এসএসসিতে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর থেকেই এই স্থানটি ধরে রেখেছে ঢাকার শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডের ৪ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, জিপিএ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। সে হিসেবে এবার পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই বেড়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার নয় মাস পিছিয়ে গত ১৪ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। সব বোর্ড মিলিয়ে এ বছর ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে অংশ নেয়। এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা, ইংরেজির মত আবশ্যিক বিষয়গুলোতে পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। শিক্ষামন্ত্রী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানান, এবার তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হলেও অন্যান্য বিষয়গুলোতে জেএসসি ও জেডিসি ফলাফলের ভিত্তিতে ফলাফল দেয়া হয়েছে।
শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে মেয়েরা : এসএসসিতে এবারও পাসের হারে ছেলেদের পেছনে ফেলেছে মেয়েরা, জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়েও তারা এগিয়ে আছে। চলতি বছর ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে বড় ব্যবধানে। জিপিএ-৫ পাওয়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯ হাজার ৭৬২ জন ছাত্র; আর ১ লাখ ৩ হাজার ৫৭৮ জন ছাত্রী। সেই হিসেবে ২৩ হাজার ৮১৬ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাধ্যমিকের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। গতবছর এ পরীক্ষায় ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। গত চার বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। গতবছর ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৮২ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছিল; ছাত্রীদের মধ্যে পাস করেছিল ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর গতবার জিপিএ ৫ পাওয়া এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন ছিল ছাত্র এবং ৭০ হাজার ১৪৪ জন ছাত্রী। ২০২১ সালের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৪ জন, পাস করেছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৮ জন। অন্যদিকে ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৩০১ জন ছাত্রীর মধ্যে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। চলতি বছর ৯টি সাধারণ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছাত্র ও ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। মানবিকে ৯২ দশমিক ০৯ শতাংশ ছাত্র ও ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ ছাত্রী এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ ছাত্র ও ৯৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে।
ভালো ফলে এবারও এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের হিসাবে বরাবরের মতই এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ভালো ফলে পিছিয়ে থাকলেও এবার মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে উত্তীর্ণের হার বেড়েছে। নয়টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৬ দশমিক ০৩ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৯৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে ৯৩ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর বিজ্ঞান বিভাগে ৯৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মানবিকে ৭৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৮৪ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। চলতি বছরের বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দেওয়া ৫ লাখ ৫ হাজার ২৪৪ জনের মধ্যে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৭৬ জন, মানবিকে ৯ লাখ ২১ হাজার ১২২ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪৬ জনের মধ্যে পাস করেছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৮১ জন। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন, ফেল করেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪৯ জন শিক্ষার্থী। এবার পাশের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। গত বছর ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।
বাস চাপায় নিহত মাঈনউদ্দিন এসএসসিতে পেল জিপিএ ৪.১৭ : একমাস আগে রাজধানীর রামপুরায় বাস চাপায় নিহত মাঈনউদ্দিন জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান হাওলাদার বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য জানান। অনটনের সংসারে দুই ভাই আর এক বাক প্রতিবন্ধী বোনের মধ্যে কিশোর মাঈনউদ্দিন ছিল সবার ছোট। বাবা আব্দুর রহমান ভা-ারী রাস্তার পাশে টং দোকানে চা-পান বিক্রি করেন। বড় ভাই প্রাইভেট কার চালান। মাঈনউদ্দিন শিক্ষাজীবন শেষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনবে এই স্বপ্ন ছিল সবার। কিন্তু ২৯ নভেম্বর রাতে বাস তাদের সবার স্বপ্ন চাপা দিয়ে যায়। মাঈনউদ্দিনের এসএসসির ফল শুনে মা রাশেদা বেগম ও বাবা আব্দুর রহমান ভা-ারী শুনে কেঁদেছেন বলে জানান তার ভগ্নিপতির ভাই বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, মাঈনউদ্দিনের মা-বাবা দুপুরেই ফলাফল জেনেছেন, ছেলে পাস করেছেন শুনে হাউমাউ করে তারা কেঁদেছেন। সান্ত¡না দেওয়ার মত অবস্থা নেই।
“ছেলেটিকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে পড়াশোনা শেষ করে একটি ভাল চাকরি করবে, এদের অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে, এমনই আশা ছিল তাদের। কিন্তু সেই দিনের একটি ঘটনা সব শেষ হয়ে গেছে।” একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, এবার তাদের বিদ্যালয়ের ১৫৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৪ জন পাস করেছে। এদের মধ্যে মাঈনউদ্দিনও আছেন। তিনি বলেন, “মাঈনউদ্দিন একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি করতো। অনটনের সংসারে থেকে কিছু আয় করে পড়াশোনা করতো। পড়াশোনায় আরও বেশি সময় দিতে পারলে হয়তো ওর ফলাফল আরও ভাল হতে পারতো। এখন তো সে দুনিয়াতেই নেই।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বজ্রপাতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

মহামারিকালের মাধ্যমিকে রেকর্ড ৯৩.৫৮% পাস

আপডেট সময় : ০২:৫৮:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ মহামারিকালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও সমমানের পরীক্ষায় এবছর এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেছেন। চলতি বছর পাস করেছেন ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এবার মোট পাস করেছেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন পেয়েছে জিপিএ ৫, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ হাজার ৪৪২ জন। গত বছর মাধ্যমিকে পাস করেছিলেন ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবারের মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করেন।
মূল অনুষ্ঠানটি হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। বেলা ১১টায় সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এবার ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক ও সমমানের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন পাস করেছে। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ বোর্ডে ৯৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে ৯৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
রেকর্ড পাসের ৩ কারণ বললেন শিক্ষামন্ত্রী : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে রেকর্ড ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ পাসের পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়ার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মহামারির কারণে এবার কেবল তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেই পরীক্ষা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর। প্রশ্নপত্রে বিকল্প ছিল অনেক বেশি। “এসব কারণেই হয়ত আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো করেছে, তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চেয়ে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর স্কুলের গ-ি অতিক্রম করা এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ হাজার ৪৪২ জন।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।
মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি বাড়ায় তুলনামূলকভাবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মোট সংখ্যাও বেড়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী। আর ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে মহামারীর মধ্যে ‘বাড়তি’ মানসিক চাপকে বড় কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন। দীপু মনি বলেন, “পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে, সেটা ভালো। আবার এই সময়ে মানসিক চাপের মধ্য দিয়েও আমাদের পরীক্ষার্থীরা গিয়েছে, পারিবারিক থেকে শুরু করে নানান ধরনের সমস্যা ছিল।
“কোভিডের কারণে বাড়তি অনেক চাপ ছিল, অনেক ট্রমার মধ্য দিয়েও গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন বা পরিবারের কাউকে হারিয়েছে তারা। এই রকম অনেক অবস্থা ছিল, সেগুলোকেও আমাদের বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অনেকের অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে, অনেকের প্রতিবন্ধিতা থাকে, অনেকের অনেক সমস্যা থাকে। কেউ পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে যায়, কেউ পরীক্ষার সময় হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায়, অনেক রকম কারণে হতে পারে। “আমরাও আমাদের জীবনে অনেক দূর পার করে এসেছি, আমাদের জীবনেও সব সময় এক রকম হয় না। এমনকি ভালো পড়াশোনা করেছে, প্রস্তুতি ছিল, তারপরেও অনেক সময় পরীক্ষা ভালো হয় না। এটি ঘটে।”
যেভাবে হল সাবজেক্ট ম্যাপিং : মহামারীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি করে নির্বাচিত বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়নে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে পরীক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডেসির ফলাফল, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং।’ সব মিলিয়েই এবারের পরীক্ষা ফল ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যেগুলো নৈর্বাচনিক বিষয়, সেগুলোর তো পরীক্ষা হয়েছে। যেগুলো আবশ্যিক বিষয়, যেমন ধরুন বাংলা বা ইংরেজিতে সরাসরি জেএসসি-জেডেসিতে যে নম্বরগুলো পেয়েছে, সেগুলো নেওয়া হয়েছে।
“চতুর্থ বিষয়ের ক্ষেত্রে, যে তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো ছাড়া চতুর্থ বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জেএসসি বা জেডেসি পর্যায়ের আবশ্যিক বিষয় থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, “যেমন ধরুন, যার চতুর্থ বিষয় উচ্চতর গণিত ছিল, তারতো জেএসসি-জেডিসিতে উচ্চতর গণিত বলে কিছু ছিল না। সে জেএসসি-জেডেসিতে গণিতে যা পেয়েছে সেই নম্বরটি থেকে আমরা এখানে নম্বর নিয়ে এসেছি। “আবার, যে চতুর্থ বিষয় জীববিজ্ঞান, তার জেএসসি-জেডেসির বিজ্ঞানের নম্বরটি সেটাকে আমরা নিয়ে এসেছি। সাবজেক্ট ম্যাপিংটা এভাবে হয়েছে।”
জিপিএ-৫ এ শীর্ষে ঢাকা, পাসের হারে ময়মনসিংহ : মহামারিতে নয় মাস বিলম্বিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাশের হার বরিশাল বোর্ডে, ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতবছর পাশের হারে পিছিয়ে থাকা সিলেট বোর্ড এবার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে। এরপরই রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড, তাদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগে টানা আটবার পাসের হারে শীর্ষ ছিল রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। এবার এ বোর্ডের ৯৪ দশমিক ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। প্রতিবারের মত এবারও জিপিএ-৫ এ সবার উপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, এ শিক্ষা বোর্ডের ৪৯ হাজার ৫৩০ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।
২০০১ সালে এসএসসিতে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর থেকেই এই স্থানটি ধরে রেখেছে ঢাকার শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডের ৪ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, জিপিএ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। সে হিসেবে এবার পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই বেড়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার নয় মাস পিছিয়ে গত ১৪ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। সব বোর্ড মিলিয়ে এ বছর ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে অংশ নেয়। এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা, ইংরেজির মত আবশ্যিক বিষয়গুলোতে পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। শিক্ষামন্ত্রী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানান, এবার তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হলেও অন্যান্য বিষয়গুলোতে জেএসসি ও জেডিসি ফলাফলের ভিত্তিতে ফলাফল দেয়া হয়েছে।
শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে মেয়েরা : এসএসসিতে এবারও পাসের হারে ছেলেদের পেছনে ফেলেছে মেয়েরা, জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়েও তারা এগিয়ে আছে। চলতি বছর ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে বড় ব্যবধানে। জিপিএ-৫ পাওয়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯ হাজার ৭৬২ জন ছাত্র; আর ১ লাখ ৩ হাজার ৫৭৮ জন ছাত্রী। সেই হিসেবে ২৩ হাজার ৮১৬ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাধ্যমিকের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। গতবছর এ পরীক্ষায় ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। গত চার বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। গতবছর ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৮২ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছিল; ছাত্রীদের মধ্যে পাস করেছিল ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর গতবার জিপিএ ৫ পাওয়া এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন ছিল ছাত্র এবং ৭০ হাজার ১৪৪ জন ছাত্রী। ২০২১ সালের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৪ জন, পাস করেছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৮ জন। অন্যদিকে ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৩০১ জন ছাত্রীর মধ্যে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। চলতি বছর ৯টি সাধারণ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছাত্র ও ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। মানবিকে ৯২ দশমিক ০৯ শতাংশ ছাত্র ও ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ ছাত্রী এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ ছাত্র ও ৯৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে।
ভালো ফলে এবারও এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের হিসাবে বরাবরের মতই এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ভালো ফলে পিছিয়ে থাকলেও এবার মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে উত্তীর্ণের হার বেড়েছে। নয়টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৬ দশমিক ০৩ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৯৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে ৯৩ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর বিজ্ঞান বিভাগে ৯৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মানবিকে ৭৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৮৪ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। চলতি বছরের বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দেওয়া ৫ লাখ ৫ হাজার ২৪৪ জনের মধ্যে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৭৬ জন, মানবিকে ৯ লাখ ২১ হাজার ১২২ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪৬ জনের মধ্যে পাস করেছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৮১ জন। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন, ফেল করেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪৯ জন শিক্ষার্থী। এবার পাশের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। গত বছর ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।
বাস চাপায় নিহত মাঈনউদ্দিন এসএসসিতে পেল জিপিএ ৪.১৭ : একমাস আগে রাজধানীর রামপুরায় বাস চাপায় নিহত মাঈনউদ্দিন জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান হাওলাদার বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য জানান। অনটনের সংসারে দুই ভাই আর এক বাক প্রতিবন্ধী বোনের মধ্যে কিশোর মাঈনউদ্দিন ছিল সবার ছোট। বাবা আব্দুর রহমান ভা-ারী রাস্তার পাশে টং দোকানে চা-পান বিক্রি করেন। বড় ভাই প্রাইভেট কার চালান। মাঈনউদ্দিন শিক্ষাজীবন শেষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনবে এই স্বপ্ন ছিল সবার। কিন্তু ২৯ নভেম্বর রাতে বাস তাদের সবার স্বপ্ন চাপা দিয়ে যায়। মাঈনউদ্দিনের এসএসসির ফল শুনে মা রাশেদা বেগম ও বাবা আব্দুর রহমান ভা-ারী শুনে কেঁদেছেন বলে জানান তার ভগ্নিপতির ভাই বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, মাঈনউদ্দিনের মা-বাবা দুপুরেই ফলাফল জেনেছেন, ছেলে পাস করেছেন শুনে হাউমাউ করে তারা কেঁদেছেন। সান্ত¡না দেওয়ার মত অবস্থা নেই।
“ছেলেটিকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে পড়াশোনা শেষ করে একটি ভাল চাকরি করবে, এদের অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে, এমনই আশা ছিল তাদের। কিন্তু সেই দিনের একটি ঘটনা সব শেষ হয়ে গেছে।” একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, এবার তাদের বিদ্যালয়ের ১৫৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৪ জন পাস করেছে। এদের মধ্যে মাঈনউদ্দিনও আছেন। তিনি বলেন, “মাঈনউদ্দিন একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি করতো। অনটনের সংসারে থেকে কিছু আয় করে পড়াশোনা করতো। পড়াশোনায় আরও বেশি সময় দিতে পারলে হয়তো ওর ফলাফল আরও ভাল হতে পারতো। এখন তো সে দুনিয়াতেই নেই।”