ঢাকা ০৬:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
বিশেষ সম্পাদকীয়

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে নবচিন্তা

  • আপডেট সময় : ০৩:১৯:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

সুখদেব কুমার সানা

স্বাধীনতা ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে কেন স্বীকার করতে চায়নি আওয়ামী লীগ- তা এক বিরাট প্রশ্ন। আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে মনে হয়েছে, এই একটি কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হতে পারেনি। জাতিগত ও রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে ওঠেনি। অথচ যেকোনো ভূখণ্ড- দেশ ও তার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয় হলো- ঐক্য।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি করতে করতে কারিগর এখন ক্লান্ত- নির্বাসিত!
এখন দেশে একটা অবস্থান খুব স্পষ্ট হয়েছে। লাখো মানুষের জীবন, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রম আর লাখো মানুষের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ করে ৭১-এ যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছিলাম, তা জাতির একটা বড় অংশের কাছেই তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বিষয় ও বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে!
প্রচণ্ড রকমের অনৈক্য, বিভক্তি-বিভাজন আর দীর্ঘ দুঃশাসনের অনিবার্য পরিণতি আজ এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ এবং এক ঝাঁক সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গড়ে তোলা বিএনপিকে।
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার নেতা ও ঘোষক নিয়ে টানাহেঁচড়া; ক্ষমতার চেয়ারে বসে কাউকে হিরো কাউকে জিরো বানানোর অপরাজনীতি আর হা/না/হা/নির খেসারত দিতে হচ্ছে আজ প্রধান দুই দল, তাদের কোটি কোটি সমর্থক এবং সাধারণ মানুষকে।
সুশাসন কী–৫৪ বছরেও তা দেখানোর ক্ষমতা প্রদর্শন না করে, কেবলই অতি বিভাজন দ্বন্দ্ব সংঘাত হানাহানি টানাটানির প্রদর্শনী করেছে দল দুইটি।
জাতি আজ ক্লান্ত!
স্বাধীনতা বিপন্ন!
রক্ষার শেষ সুযোগটুকু দয়া করে নষ্ট করবেন না।
নীতির ব্যাপক পরিবর্তন করতে হবে। যেকোনো মূল্যেই কাছাকাছি আসতে হবে–এবং তা খুব সহসাই, দ্রুততম সময়ে। সততা আর ঐক্যের বিকল্প নেই। বিকল্পে অগ্রসর হতে গেলেই ফাঁদে পড়তে হবে!
আওয়ামী লীগ আর তার নেতা শেখ হাসিনা যা করতে পারতেন তা না করে যা করেছেন, তা বস্তুত ক্ষমার অযোগ্য। ১৫ বছরের ১০ বছর এক প্রকার ভোট ছাড়াই শাসন, যা জনগণ প্রকারান্তরে মেনেই নিয়েছিল। ২০২৪ এর নির্বাচনেও বিরোধীদের না আনা ছিল রাজনীতির সবচেয়ে জঘন্য ও চরম অপরিণামদর্শী দৃষ্টান্ত। তার শাসনকাল কেমন হতে পারতো আর কেমন হয়ে গেলো–এই বোধ ও মূল্যায়ন যদি আওয়ামী লীগের নেতারা না করতে পারেন, তাদের আর রাজনীতিতে থাকা মোটেই উচিৎ না।
বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে জাতির যে প্রত্যাশা তা অধরাই থেকে গেছে। কিছু দৃশ্যমান উন্নয়নের নাম সুশাসন না।
হাসিনার একেকজন পুলিশ, একেকজন মন্ত্রী, একেকজন এমপি, একেকজন ব্যবসায়ী, একেকজন পিয়ন যে পরিমাণ লুটতরাজ করেছেন, তা বিশ্বে বিরল!
আমার মতে, বাঙালির অবিসংবাদিত ‘বাজে নেতা’ শেখ হাসিনা! এত সুযোগ পেয়েও তিনি তার বিন্দু পরিমাণ কাজে না লাগিয়ে এক তরফা গোয়ার্তমি করে গেছেন। কোনো দেশ ও তার জনগণ এমন গোয়ার্তমি কী চিরকাল মেনে নেয়?
বিএনপি ক্ষমতার বাইরে প্রায় ১৯ বছর। ২০০১ থেকে ২০০৬ তাদের শাসনের কথা এখনো ভুলে যাইনি মানুষ। যে কারণে হাসিনার এত এত দুঃশাসনের মধ্যেও বিএনপি রাজনৈতিকভাবে তাদের পতন ঘটাতে পারেনি। তবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকায় ঘায়েল ও ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে মূলত বিএনপিকেই। অন্যান্য বিরোধী দলও কম বেশি ঘায়েল হয়েছে।
২০২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুতনের মধ্য দিয়ে হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। আসে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
কী ঘটলো, কী ঘটছে–দগদগ করছে সব সদ্য ঘটনা।
আওয়ামী লীগ চায় না বড় একটি অংশ। তারা আবার বলে-আওয়ামী লীগ আর বিএনপি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। মানে তারা বিএনপিও চায় না।
কথা তো তেমন অসত্য নয়। তাদের মনস্তত্ত্ব ও যুক্তিতে বরং সেটাই খাঁটি কথা। প্রথম কারণ- বঙ্গবন্ধু আর জিয়াকে তারা অনেকটাই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ভাবতেই পারেন। তাই বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার একটা অনিবার্য সমার্থক মনস্তাত্ত্বিকভাবে জিয়ার মাজারও ভাঙা!
বিএনপি ক্ষমতায় না আসতে পারলে মাজারটির কী পরিণতি হবে- তা জাতি দেখতে পাবে নিশ্চিত।
দ্বিতীয় কারণ- দুই পরিবারের ধারাবাহিক রাজনীতি ও ধারাবাহিক দুঃশাসন জাতি আর কতকাল মেনে নিয়ে চলবে?
তাহলে বিকল্প কী?
সময় এখন-আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নিগূঢ় আত্মোপলব্ধির।
৭১ বিপন্ন!!!
সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি বি ন ম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, আজকের প্রত্যাশা।
ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিশেষ সম্পাদকীয়

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে নবচিন্তা

আপডেট সময় : ০৩:১৯:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

সুখদেব কুমার সানা

স্বাধীনতা ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে কেন স্বীকার করতে চায়নি আওয়ামী লীগ- তা এক বিরাট প্রশ্ন। আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে মনে হয়েছে, এই একটি কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হতে পারেনি। জাতিগত ও রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে ওঠেনি। অথচ যেকোনো ভূখণ্ড- দেশ ও তার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয় হলো- ঐক্য।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি করতে করতে কারিগর এখন ক্লান্ত- নির্বাসিত!
এখন দেশে একটা অবস্থান খুব স্পষ্ট হয়েছে। লাখো মানুষের জীবন, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রম আর লাখো মানুষের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ করে ৭১-এ যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছিলাম, তা জাতির একটা বড় অংশের কাছেই তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বিষয় ও বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে!
প্রচণ্ড রকমের অনৈক্য, বিভক্তি-বিভাজন আর দীর্ঘ দুঃশাসনের অনিবার্য পরিণতি আজ এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ এবং এক ঝাঁক সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গড়ে তোলা বিএনপিকে।
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার নেতা ও ঘোষক নিয়ে টানাহেঁচড়া; ক্ষমতার চেয়ারে বসে কাউকে হিরো কাউকে জিরো বানানোর অপরাজনীতি আর হা/না/হা/নির খেসারত দিতে হচ্ছে আজ প্রধান দুই দল, তাদের কোটি কোটি সমর্থক এবং সাধারণ মানুষকে।
সুশাসন কী–৫৪ বছরেও তা দেখানোর ক্ষমতা প্রদর্শন না করে, কেবলই অতি বিভাজন দ্বন্দ্ব সংঘাত হানাহানি টানাটানির প্রদর্শনী করেছে দল দুইটি।
জাতি আজ ক্লান্ত!
স্বাধীনতা বিপন্ন!
রক্ষার শেষ সুযোগটুকু দয়া করে নষ্ট করবেন না।
নীতির ব্যাপক পরিবর্তন করতে হবে। যেকোনো মূল্যেই কাছাকাছি আসতে হবে–এবং তা খুব সহসাই, দ্রুততম সময়ে। সততা আর ঐক্যের বিকল্প নেই। বিকল্পে অগ্রসর হতে গেলেই ফাঁদে পড়তে হবে!
আওয়ামী লীগ আর তার নেতা শেখ হাসিনা যা করতে পারতেন তা না করে যা করেছেন, তা বস্তুত ক্ষমার অযোগ্য। ১৫ বছরের ১০ বছর এক প্রকার ভোট ছাড়াই শাসন, যা জনগণ প্রকারান্তরে মেনেই নিয়েছিল। ২০২৪ এর নির্বাচনেও বিরোধীদের না আনা ছিল রাজনীতির সবচেয়ে জঘন্য ও চরম অপরিণামদর্শী দৃষ্টান্ত। তার শাসনকাল কেমন হতে পারতো আর কেমন হয়ে গেলো–এই বোধ ও মূল্যায়ন যদি আওয়ামী লীগের নেতারা না করতে পারেন, তাদের আর রাজনীতিতে থাকা মোটেই উচিৎ না।
বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে জাতির যে প্রত্যাশা তা অধরাই থেকে গেছে। কিছু দৃশ্যমান উন্নয়নের নাম সুশাসন না।
হাসিনার একেকজন পুলিশ, একেকজন মন্ত্রী, একেকজন এমপি, একেকজন ব্যবসায়ী, একেকজন পিয়ন যে পরিমাণ লুটতরাজ করেছেন, তা বিশ্বে বিরল!
আমার মতে, বাঙালির অবিসংবাদিত ‘বাজে নেতা’ শেখ হাসিনা! এত সুযোগ পেয়েও তিনি তার বিন্দু পরিমাণ কাজে না লাগিয়ে এক তরফা গোয়ার্তমি করে গেছেন। কোনো দেশ ও তার জনগণ এমন গোয়ার্তমি কী চিরকাল মেনে নেয়?
বিএনপি ক্ষমতার বাইরে প্রায় ১৯ বছর। ২০০১ থেকে ২০০৬ তাদের শাসনের কথা এখনো ভুলে যাইনি মানুষ। যে কারণে হাসিনার এত এত দুঃশাসনের মধ্যেও বিএনপি রাজনৈতিকভাবে তাদের পতন ঘটাতে পারেনি। তবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকায় ঘায়েল ও ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে মূলত বিএনপিকেই। অন্যান্য বিরোধী দলও কম বেশি ঘায়েল হয়েছে।
২০২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুতনের মধ্য দিয়ে হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। আসে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
কী ঘটলো, কী ঘটছে–দগদগ করছে সব সদ্য ঘটনা।
আওয়ামী লীগ চায় না বড় একটি অংশ। তারা আবার বলে-আওয়ামী লীগ আর বিএনপি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। মানে তারা বিএনপিও চায় না।
কথা তো তেমন অসত্য নয়। তাদের মনস্তত্ত্ব ও যুক্তিতে বরং সেটাই খাঁটি কথা। প্রথম কারণ- বঙ্গবন্ধু আর জিয়াকে তারা অনেকটাই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ভাবতেই পারেন। তাই বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার একটা অনিবার্য সমার্থক মনস্তাত্ত্বিকভাবে জিয়ার মাজারও ভাঙা!
বিএনপি ক্ষমতায় না আসতে পারলে মাজারটির কী পরিণতি হবে- তা জাতি দেখতে পাবে নিশ্চিত।
দ্বিতীয় কারণ- দুই পরিবারের ধারাবাহিক রাজনীতি ও ধারাবাহিক দুঃশাসন জাতি আর কতকাল মেনে নিয়ে চলবে?
তাহলে বিকল্প কী?
সময় এখন-আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নিগূঢ় আত্মোপলব্ধির।
৭১ বিপন্ন!!!
সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি বি ন ম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, আজকের প্রত্যাশা।