ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

মহাকাশ গিয়ে ফেরার পথে বিস্ফোরিত মঙ্গলযাত্রার ‘স্টারশিপ’

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রকেট বুধবারের উৎক্ষেপণে মহাকাশে পৌঁছাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত এটি ফেরার পথে আকাশেই বিস্ফোরিত হয়েছে।

বিস্ফোরিত হলেও একে ‘এখন পর্যন্ত চালানো সবচেয়ে দীর্ঘ ও উন্নত পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ’ বলে বর্ণনা করেছে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস।

মঙ্গলবার (২৭ মে) যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের স্টারবেইস থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৩৭ মিনিট) উৎক্ষেপণ করা হয় রকেটটি। এটি ছিল নবম পরীক্ষামূলক ফ্লাইট। স্টারশিপ উৎক্ষেপণের লাইভ সম্প্রচার দেখা গেছে স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে।

মহাকাশের পানে ছুটে যাওয়া অবস্থাতেই রকেটের প্রপেলান্টে লিক ধরা পড়ে। ফলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাক খেতে থাকে। এ সময় এর যাত্রীবাহী অংশ যার নাম স্টার শিপ, সেটি অক্ষতই ছিল। কিন্তু ফেরার সময় এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় তীব্র তাপে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে, যেটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে অনেক দূরে।

ইলন মাস্কের মঙ্গল যাত্রার স্বপ্ন সফল করতে হলে স্টারশিপে, বিশেষ করে এর শীর্ষ অংশে এখনো অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে বলে মন্তব্য উঠে এসেছে টাইমসের প্রতিবেদনে।

এবারের ফ্লাইট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে রয়েছে নতুন প্রজন্মের স্টারলিংক স্যাটেলাইটের সিমুলেটর কক্ষপথে স্থাপন এবং রকেটের হিট শিল্ড কতটা উন্নত করা সম্ভব হয়েছে তার মূল্যায়ন। তবে, রকেটের পেলোড ডোর খোলেনি, ফলে এই পরীক্ষাগুলো আর করা সম্ভব হয়নি। এসবের পরও বেশ কিছু সাফল্যও যোগ হয়েছে বুধবারের প্রচেষ্টায়। সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে, আগের দুবারের মতো এবার রকেট যাওয়ার পথে বিস্ফোরিত হয়নি। আরেকটি বড় সাফল্য হচ্ছে এবারের বুস্টার আগেও ব্যবহৃত হয়েছিল। এক বড় এক উন্নয়ন হিসাবে দেখছে স্পেসএক্স। যদিও এ সাফল্যও অসম্পূর্ণ।

পুনঃব্যবহৃত বুস্টারটি উৎক্ষেপণের সময় কাজ করলেও, ফেরার পথে তিনটি ইঞ্জিন ব্যবহার করে অবতরণের অনুকরণ করতে গিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ হারায় ও উপসাগরীয় এলাকায় ভেঙে পড়ে।

স্পেসএক্স বলেছে, তিন ইঞ্জিনের বিষয়টি পরীক্ষারই একটি অংশ ছিল এবং কোম্পানিটি বুস্টারের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা চালাচ্ছিল। এর আগের দুটি উৎক্ষেপণ চেষ্টায় উপরের স্তরের রকেটগুলি আকাশেই বিস্ফোরিত হয়েছে। সপ্তম ফ্লাইটে অতিরিক্ত কম্পনের কারণে প্রপেলান্ট লিক হয়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। আর অষ্টম ফ্লাইটে ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। তবে, আগের কিছু ফ্লাইট — বিশেষত চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ফ্লাইটে এটি মহাকাশে গিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসে সিমুলেটেড ল্যান্ডিংয়ে সফল হয়েছিল।

এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট স্টারশিপের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে ‘সুপার হেভি বুস্টার’ নামের তরল গ্যাসের জ্বালানিচালিত রকেট। আর অপর অংশটি হল ‘স্টারশিপ’ নামের মহাকাশযান, যা এই ‘সুপার হেভি বুস্টারের’ ওপর বসানো আছে। এতে আছে ৩৩ টি ইঞ্জিন, যা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টেমিস রকেটের দ্বিগুণ শক্তিশালী।

সর্বশেষ স্টারশিপ পরীক্ষা হয়েছিল গত মার্চ মাসে, যেখানে ১২৩ মিটার দীর্ঘ রকেটটি উৎক্ষেপণের ১০ মিনিট পরই বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে ফ্লোরিডা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আকাশপথে উড়োজাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছিল। ওই সময় প্লেনের ফ্লাইট বন্ধের জন্য “মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ পড়ে যাওয়ার”কে দায়ী করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা এফএএ। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে তদন্তও শুরু করেছিল সংস্থাটি। গত সপ্তাহে এ নিয়ে তদন্ত শেষ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্পেসএক্সকে উন্নত সংস্করণের স্টারশিপ উৎক্ষেপণেরও অনুমতি দিয়েছে। নতুন স্টারশিপ রকেটটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিল স্পেসএক্স, যাতে এটি আরো নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে ও এতে আর কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।

সর্বশেষ এই উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টার আগে এক ব্লগ পোস্টে স্পেসএক্স লিখেছে, “আমরা যত বেশিবার রকেটটিকে উৎক্ষেপণের পরীক্ষা করব, তত দ্রুত শিখতে পারব ও প্রয়োজনমতো এর ডিজাইনে পরিবর্তন আনতে পারবো। এর ফলে স্টারশিপকে সম্পূর্ণ ও দ্রুত পুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান হিসেবে চালু করা সম্ভব হবে। তবে, সংজ্ঞা অনুসারে, যে কোনো পরীক্ষাতে স্বাভাবিকভাবেই অনিশ্চয়তা থাকে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মহাকাশ গিয়ে ফেরার পথে বিস্ফোরিত মঙ্গলযাত্রার ‘স্টারশিপ’

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রকেট বুধবারের উৎক্ষেপণে মহাকাশে পৌঁছাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত এটি ফেরার পথে আকাশেই বিস্ফোরিত হয়েছে।

বিস্ফোরিত হলেও একে ‘এখন পর্যন্ত চালানো সবচেয়ে দীর্ঘ ও উন্নত পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ’ বলে বর্ণনা করেছে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস।

মঙ্গলবার (২৭ মে) যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের স্টারবেইস থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৩৭ মিনিট) উৎক্ষেপণ করা হয় রকেটটি। এটি ছিল নবম পরীক্ষামূলক ফ্লাইট। স্টারশিপ উৎক্ষেপণের লাইভ সম্প্রচার দেখা গেছে স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে।

মহাকাশের পানে ছুটে যাওয়া অবস্থাতেই রকেটের প্রপেলান্টে লিক ধরা পড়ে। ফলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাক খেতে থাকে। এ সময় এর যাত্রীবাহী অংশ যার নাম স্টার শিপ, সেটি অক্ষতই ছিল। কিন্তু ফেরার সময় এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় তীব্র তাপে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে, যেটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে অনেক দূরে।

ইলন মাস্কের মঙ্গল যাত্রার স্বপ্ন সফল করতে হলে স্টারশিপে, বিশেষ করে এর শীর্ষ অংশে এখনো অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে বলে মন্তব্য উঠে এসেছে টাইমসের প্রতিবেদনে।

এবারের ফ্লাইট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে রয়েছে নতুন প্রজন্মের স্টারলিংক স্যাটেলাইটের সিমুলেটর কক্ষপথে স্থাপন এবং রকেটের হিট শিল্ড কতটা উন্নত করা সম্ভব হয়েছে তার মূল্যায়ন। তবে, রকেটের পেলোড ডোর খোলেনি, ফলে এই পরীক্ষাগুলো আর করা সম্ভব হয়নি। এসবের পরও বেশ কিছু সাফল্যও যোগ হয়েছে বুধবারের প্রচেষ্টায়। সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে, আগের দুবারের মতো এবার রকেট যাওয়ার পথে বিস্ফোরিত হয়নি। আরেকটি বড় সাফল্য হচ্ছে এবারের বুস্টার আগেও ব্যবহৃত হয়েছিল। এক বড় এক উন্নয়ন হিসাবে দেখছে স্পেসএক্স। যদিও এ সাফল্যও অসম্পূর্ণ।

পুনঃব্যবহৃত বুস্টারটি উৎক্ষেপণের সময় কাজ করলেও, ফেরার পথে তিনটি ইঞ্জিন ব্যবহার করে অবতরণের অনুকরণ করতে গিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ হারায় ও উপসাগরীয় এলাকায় ভেঙে পড়ে।

স্পেসএক্স বলেছে, তিন ইঞ্জিনের বিষয়টি পরীক্ষারই একটি অংশ ছিল এবং কোম্পানিটি বুস্টারের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা চালাচ্ছিল। এর আগের দুটি উৎক্ষেপণ চেষ্টায় উপরের স্তরের রকেটগুলি আকাশেই বিস্ফোরিত হয়েছে। সপ্তম ফ্লাইটে অতিরিক্ত কম্পনের কারণে প্রপেলান্ট লিক হয়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। আর অষ্টম ফ্লাইটে ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। তবে, আগের কিছু ফ্লাইট — বিশেষত চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ফ্লাইটে এটি মহাকাশে গিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসে সিমুলেটেড ল্যান্ডিংয়ে সফল হয়েছিল।

এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট স্টারশিপের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে ‘সুপার হেভি বুস্টার’ নামের তরল গ্যাসের জ্বালানিচালিত রকেট। আর অপর অংশটি হল ‘স্টারশিপ’ নামের মহাকাশযান, যা এই ‘সুপার হেভি বুস্টারের’ ওপর বসানো আছে। এতে আছে ৩৩ টি ইঞ্জিন, যা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টেমিস রকেটের দ্বিগুণ শক্তিশালী।

সর্বশেষ স্টারশিপ পরীক্ষা হয়েছিল গত মার্চ মাসে, যেখানে ১২৩ মিটার দীর্ঘ রকেটটি উৎক্ষেপণের ১০ মিনিট পরই বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে ফ্লোরিডা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আকাশপথে উড়োজাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছিল। ওই সময় প্লেনের ফ্লাইট বন্ধের জন্য “মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ পড়ে যাওয়ার”কে দায়ী করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা এফএএ। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে তদন্তও শুরু করেছিল সংস্থাটি। গত সপ্তাহে এ নিয়ে তদন্ত শেষ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্পেসএক্সকে উন্নত সংস্করণের স্টারশিপ উৎক্ষেপণেরও অনুমতি দিয়েছে। নতুন স্টারশিপ রকেটটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিল স্পেসএক্স, যাতে এটি আরো নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে ও এতে আর কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।

সর্বশেষ এই উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টার আগে এক ব্লগ পোস্টে স্পেসএক্স লিখেছে, “আমরা যত বেশিবার রকেটটিকে উৎক্ষেপণের পরীক্ষা করব, তত দ্রুত শিখতে পারব ও প্রয়োজনমতো এর ডিজাইনে পরিবর্তন আনতে পারবো। এর ফলে স্টারশিপকে সম্পূর্ণ ও দ্রুত পুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান হিসেবে চালু করা সম্ভব হবে। তবে, সংজ্ঞা অনুসারে, যে কোনো পরীক্ষাতে স্বাভাবিকভাবেই অনিশ্চয়তা থাকে।