ঢাকা ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কাজের চিহ্ন হল চোখের মণি বড় হয়ে ওঠা

  • আপডেট সময় : ০৭:৩১:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: চোখের মণির প্রসারণ বা বড় হয়ে ওঠাকে মস্তিষ্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক কার্যক্রম অর্থাৎ ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’ বা মানুষের কাজের স্মৃতির সঙ্গে যোগ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্ক যখন অস্থায়ীভাবে কোনো তথ্য মনে রেখে কাজ করে তখন চোখের মণি সামান্য বড় হয়ে যায়। চোখের মণির এই বড় হওয়া হচ্ছে একটি সংকেত, যে মস্তিষ্ক তখন তথ্য ধরে রাখছে ও তা প্রক্রিয়া করছে।
রান্নাঘরে কাজের সময় দুটি কাজ একসঙ্গে ঘটে। একদিকে বিভিন্ন প্লেট ঝনঝন শব্দ করে ডিশওয়াশারে পড়ে আর অন্যদিকে সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় ডিশওয়াশ শেষ হয়ে আসছে।
এ সময় মস্তিষ্ক কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুই ভাবনাই ধরে রাখে। যেমন– হাত দুটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে এবং বাজারের তালিকাও আপডেট করে নেয়। অর্থাৎ মস্তিষ্ক একই সময়ে একাধিক কাজ সামলাতে পারে, বিশেষ করে একদিকে শারীরিক কার্যকলাপ, অন্যদিকে মানসিক পরিকল্পনা।
বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এই দ্রুত ও সাময়িকভাবে তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতাকে বলছেন ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’। তবে বেশিরভাগ মানুষ এ বিষয়টিকে সহজভাবে বোঝে ‘এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা’ হিসাবে। দশকের পর দশক ধরে মস্তিষ্কের এই ‘মানসিক খসড়া প্যাড’ বা ওয়ার্কিং মেমোরি কেমন কাজ করে তা বিশ্লেষণ করে আসছেন গবেষকরা। এরপরও মস্তিষ্কের এমন অদ্ভুত ও জটিল আচরণ এখনও বিস্মিত করে চলেছে তাদের। সম্প্রতি এ রহস্যের সূত্র মিলেছে মানুষের চোখে। নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, একজন ব্যক্তি কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিলে তার চোখের মণি যেভাবে পরিবর্তিত হয় তা থেকে ইঙ্গিত মেলে, তার মস্তিষ্কের ‘মানসিক খসড়া প্যাড’ বা ওয়ার্কিং মেমোরি কতটা ভালোভাবে কাজ করছে।
ওয়ার্কিং মেমোরি কেন গুরুত্বপূর্ণ: ওয়ার্কিং মেমোরি কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার কাজই করে না; বরং এটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে। যেমন-ফোন নম্বর মনে রাখে যতক্ষণ না তা ডায়াল করা হচ্ছে, কারও বলা কোনো কথার অশগুলো মনে রাখে যতক্ষণ না তার অর্থ পুরো বোঝা যায় এবং সমস্যা সমাধানের সময় অসম্পূর্ণ বিভিন্ন চিন্তাও অস্থায়ীভাবে ধরে রাখে এটি।
গবেষকরা বলছেন, ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’ হচ্ছে আমাদের চিন্তা ও কাজের মধ্যে তাৎক্ষণিক যোগসূত্র তৈরির ক্ষমতা। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতির মতো নয়। ওয়ার্কিং মেমোরি খুব সীমিত সময়ের জন্য কাজ করে, কেবল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। এর ধারণক্ষমতাও সীমিত, সাধারণত এ সময় একসঙ্গে তিন থেকে সাতটি তথ্য ধরে রাখতে পারে মস্তিষ্ক। এ সামান্য সীমাবদ্ধতার কারণেই ওয়ার্কিং মেমোরির দক্ষতায় ছোটখাটো পার্থক্যও অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন-কোনো পড়া, অংকের সমস্যা সমাধান ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এসব কিছুর বেলায়।
মনোবিজ্ঞানীরা একই বয়সী মানুষের মধ্যে ওয়ার্কিং মেমোরির তুলনা করে বলছেন, মানুষের দক্ষতায় বড় পার্থক্য থাকতে পারে। এসব পার্থক্যের কিছু মূল কারণ হচ্ছে জিনগত বৈশিষ্ট্য, ঘুমের মান ও চাপ বা স্ট্রেসের মাত্রা। কারো ওয়ার্কিং মেমোরি কত ভালোভাবে কাজ করছে তা কেবল শেখার বা অভ্যাসের ওপর নয়, জৈবিক ও মানসিক অবস্থার ওপরও নির্ভর করে। গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষ করে একজন ব্যক্তি ঠিক সেই মুহূর্তে কতটা সুক্ষ্ণভাবে মনোযোগ দিতে পারছেন, তার ওপর। তবে মস্তিষ্কের এমন ক্ষণস্থায়ী মনোযোগের ওঠানামা ধরতে পারা বেশ কঠিন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চোখের এই সরল ও অজান্তেই ঘটে যাওয়া সংকেত বা মণির বড় হয়ে ওঠার ওপর মনোযোগ দিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’ আর্লিংটন ক্যাম্পাসের গবেষকদের একটি দল।
মনোযোগের মাত্রা জানায় চোখ: গবেষণার জন্য ১৭৯ জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস আর্লিংটন’-এর সিএএম ল্যাবের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ম্যাথিউ রবিসন ও পিএইচডি শিক্ষার্থী লরেন ডি. গার্নার। অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সামনে এমন এক ধরনের মেমোরি চ্যালেঞ্জ রাখা হয়, যা কেবল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় অর্থাৎ খুব দ্রুত ও স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হয় তাদের।
গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে এক ধরনের ‘আই-ট্র্যাকিং’ ক্যামেরা, যা চোখের মণির আকার পরিমাপ করে, চোখের ডাক্তার যেমনটি ব্যবহার করেন তেমন। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে একটি স্ক্রিনে রং, আকার বা অক্ষর দেখতে দেন গবেষকরা এবং তাদের তা মনে রাখতে বলেন তারা।

এ পরীক্ষাটি অন্ধকার ল্যাবে হওয়ার কারণে গবেষকরা ভেবেছেন, কারো চোখের মণি বড় না-ও হতে পারে। তবে দেখা গিয়েছে, মস্তিষ্কে কাজের চাপের মাত্রা অনুসারে চোখের মণির আকার ওঠানামা করছে।
রবিসন বলেছেন, “আমরা দেখেছি, যারা এসব কাজে সবচেয়ে কম দক্ষতা দেখিয়েছেন তাদের চোখের মণি তুলনামূলকভাবে কম প্রসারিত বা বড় হয়েছে। যারা এ কাজে সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়েছেন তাদের চোখের মণি মোটামুটি বড় ও তাদের যেসব তথ্য মনে রাখার জন্য বলেছি আমরা সেগুলোকে নিয়ে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করেছেন তারা।
ওয়ার্কিং মেমোরি ও বড় চোখের মণি: চোখের মণির এমন প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের ‘অটোমেটিক নার্ভাস সিস্টেম’। এ অংশটি সচেতন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করে। এ স্নায়ুতন্ত্রই স্ট্রেসের সময় মানুষের হৃদস্পন্দন দ্রুত করার বেলাতেও কাজ করে। আগের গবেষণায় উঠে এসেছিল, মানুষ যখন মানসিক হিসাব বা জটিল কাজ করে তখন তাদের চোখের মণি ছটফট করে। এ ছটফট থেকে ইঙ্গিত মেলে, মস্তিষ্কের কগনিটিভ লোড বা মানসিক চাপ বাড়ছে। এ নতুন গবেষণা প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে, চোখের মণির শারীরিক প্রতিক্রিয়া সরাসরি ওয়ার্কিং মেমোরি’র নির্ভুলতার সঙ্গে যুক্ত। যারা সঠিকভাবে তথ্য মনে রাখতে পেরেছে, তাদের ক্ষেত্রে চোখের মণির প্রসারণ বেশি দেখা গিয়েছে এবং এমনটি হয়েছে যখন তাদের মনোযোগ বা স্মরণশক্তির চাপ বেশি ছিল। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাটেনশন, পার্সেপশন অ্যান্ড সাইকোফিজিক্স’ জার্নাল-এ। গবেষণার মূল বার্তাটি হচ্ছে, চোখের মণির পরিবর্তনের মাধ্যমে ওয়ার্কিং মেমোরি’র দক্ষতার পরিমাপ সম্ভব।
ওয়ার্কিং মেমোরিকে সচল রাখার উপায়: ভবিষ্যতের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি হয়তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনোযোগ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। তবে পুরানো বিভিন্ন অভ্যাস এখনও কার্যকর। যেমন– জটিল বা বড় লেখা পড়ার সময় মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নেওয়া সহায়ক হতে পারে। এসব বিরতি নতুন তথ্যকে মস্তিষ্কে ঠিকভাবে বসতে সাহায্য করে। যাতে এরপরে আসা আরো তথ্যের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও প্রস্তুতি থাকে ওয়ার্কিং মেমোরি’তে।
তথ্যকে ছোট ছোট গুচ্ছে ভাগ করে নেওয়া। যেমন– ফোন নম্বরকে তিনটি ছোট ভাগে ভাগ করা। এ ধরনের পদ্ধতি ওয়ার্কিং মেমোরি’র ওপর চাপ কমায়। একে বলা হয় ‘চাঙ্কিং’, যেটি মস্তিষ্ককে তথ্য সহজভাবে ধরে রাখতে ও প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এটি মস্তিষ্কের কম জায়গায় বেশি তথ্য সামলানোর কৌশল। মনোযোগ ধরে রাখতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ’। এগুলো মূলত শেখায় কীভাবে মনোযোগকে দীর্ঘ সময় ধরে স্থির রাখা যায়। গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত তা অনুশীলন করলে ওয়ার্কিং মেমোরি’র ধারণক্ষমতা ধীরে ধীরে সামান্য বাড়তে পারে, বিশেষ করে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চর্চার পর।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বার্ন ইউনিটে ৩৩ জন ভর্তি, ৩ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন

মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কাজের চিহ্ন হল চোখের মণি বড় হয়ে ওঠা

আপডেট সময় : ০৭:৩১:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: চোখের মণির প্রসারণ বা বড় হয়ে ওঠাকে মস্তিষ্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক কার্যক্রম অর্থাৎ ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’ বা মানুষের কাজের স্মৃতির সঙ্গে যোগ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্ক যখন অস্থায়ীভাবে কোনো তথ্য মনে রেখে কাজ করে তখন চোখের মণি সামান্য বড় হয়ে যায়। চোখের মণির এই বড় হওয়া হচ্ছে একটি সংকেত, যে মস্তিষ্ক তখন তথ্য ধরে রাখছে ও তা প্রক্রিয়া করছে।
রান্নাঘরে কাজের সময় দুটি কাজ একসঙ্গে ঘটে। একদিকে বিভিন্ন প্লেট ঝনঝন শব্দ করে ডিশওয়াশারে পড়ে আর অন্যদিকে সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় ডিশওয়াশ শেষ হয়ে আসছে।
এ সময় মস্তিষ্ক কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুই ভাবনাই ধরে রাখে। যেমন– হাত দুটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে এবং বাজারের তালিকাও আপডেট করে নেয়। অর্থাৎ মস্তিষ্ক একই সময়ে একাধিক কাজ সামলাতে পারে, বিশেষ করে একদিকে শারীরিক কার্যকলাপ, অন্যদিকে মানসিক পরিকল্পনা।
বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এই দ্রুত ও সাময়িকভাবে তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতাকে বলছেন ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’। তবে বেশিরভাগ মানুষ এ বিষয়টিকে সহজভাবে বোঝে ‘এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা’ হিসাবে। দশকের পর দশক ধরে মস্তিষ্কের এই ‘মানসিক খসড়া প্যাড’ বা ওয়ার্কিং মেমোরি কেমন কাজ করে তা বিশ্লেষণ করে আসছেন গবেষকরা। এরপরও মস্তিষ্কের এমন অদ্ভুত ও জটিল আচরণ এখনও বিস্মিত করে চলেছে তাদের। সম্প্রতি এ রহস্যের সূত্র মিলেছে মানুষের চোখে। নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, একজন ব্যক্তি কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিলে তার চোখের মণি যেভাবে পরিবর্তিত হয় তা থেকে ইঙ্গিত মেলে, তার মস্তিষ্কের ‘মানসিক খসড়া প্যাড’ বা ওয়ার্কিং মেমোরি কতটা ভালোভাবে কাজ করছে।
ওয়ার্কিং মেমোরি কেন গুরুত্বপূর্ণ: ওয়ার্কিং মেমোরি কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার কাজই করে না; বরং এটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে। যেমন-ফোন নম্বর মনে রাখে যতক্ষণ না তা ডায়াল করা হচ্ছে, কারও বলা কোনো কথার অশগুলো মনে রাখে যতক্ষণ না তার অর্থ পুরো বোঝা যায় এবং সমস্যা সমাধানের সময় অসম্পূর্ণ বিভিন্ন চিন্তাও অস্থায়ীভাবে ধরে রাখে এটি।
গবেষকরা বলছেন, ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’ হচ্ছে আমাদের চিন্তা ও কাজের মধ্যে তাৎক্ষণিক যোগসূত্র তৈরির ক্ষমতা। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতির মতো নয়। ওয়ার্কিং মেমোরি খুব সীমিত সময়ের জন্য কাজ করে, কেবল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। এর ধারণক্ষমতাও সীমিত, সাধারণত এ সময় একসঙ্গে তিন থেকে সাতটি তথ্য ধরে রাখতে পারে মস্তিষ্ক। এ সামান্য সীমাবদ্ধতার কারণেই ওয়ার্কিং মেমোরির দক্ষতায় ছোটখাটো পার্থক্যও অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন-কোনো পড়া, অংকের সমস্যা সমাধান ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এসব কিছুর বেলায়।
মনোবিজ্ঞানীরা একই বয়সী মানুষের মধ্যে ওয়ার্কিং মেমোরির তুলনা করে বলছেন, মানুষের দক্ষতায় বড় পার্থক্য থাকতে পারে। এসব পার্থক্যের কিছু মূল কারণ হচ্ছে জিনগত বৈশিষ্ট্য, ঘুমের মান ও চাপ বা স্ট্রেসের মাত্রা। কারো ওয়ার্কিং মেমোরি কত ভালোভাবে কাজ করছে তা কেবল শেখার বা অভ্যাসের ওপর নয়, জৈবিক ও মানসিক অবস্থার ওপরও নির্ভর করে। গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষ করে একজন ব্যক্তি ঠিক সেই মুহূর্তে কতটা সুক্ষ্ণভাবে মনোযোগ দিতে পারছেন, তার ওপর। তবে মস্তিষ্কের এমন ক্ষণস্থায়ী মনোযোগের ওঠানামা ধরতে পারা বেশ কঠিন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চোখের এই সরল ও অজান্তেই ঘটে যাওয়া সংকেত বা মণির বড় হয়ে ওঠার ওপর মনোযোগ দিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’ আর্লিংটন ক্যাম্পাসের গবেষকদের একটি দল।
মনোযোগের মাত্রা জানায় চোখ: গবেষণার জন্য ১৭৯ জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস আর্লিংটন’-এর সিএএম ল্যাবের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ম্যাথিউ রবিসন ও পিএইচডি শিক্ষার্থী লরেন ডি. গার্নার। অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সামনে এমন এক ধরনের মেমোরি চ্যালেঞ্জ রাখা হয়, যা কেবল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় অর্থাৎ খুব দ্রুত ও স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হয় তাদের।
গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে এক ধরনের ‘আই-ট্র্যাকিং’ ক্যামেরা, যা চোখের মণির আকার পরিমাপ করে, চোখের ডাক্তার যেমনটি ব্যবহার করেন তেমন। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে একটি স্ক্রিনে রং, আকার বা অক্ষর দেখতে দেন গবেষকরা এবং তাদের তা মনে রাখতে বলেন তারা।

এ পরীক্ষাটি অন্ধকার ল্যাবে হওয়ার কারণে গবেষকরা ভেবেছেন, কারো চোখের মণি বড় না-ও হতে পারে। তবে দেখা গিয়েছে, মস্তিষ্কে কাজের চাপের মাত্রা অনুসারে চোখের মণির আকার ওঠানামা করছে।
রবিসন বলেছেন, “আমরা দেখেছি, যারা এসব কাজে সবচেয়ে কম দক্ষতা দেখিয়েছেন তাদের চোখের মণি তুলনামূলকভাবে কম প্রসারিত বা বড় হয়েছে। যারা এ কাজে সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়েছেন তাদের চোখের মণি মোটামুটি বড় ও তাদের যেসব তথ্য মনে রাখার জন্য বলেছি আমরা সেগুলোকে নিয়ে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করেছেন তারা।
ওয়ার্কিং মেমোরি ও বড় চোখের মণি: চোখের মণির এমন প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের ‘অটোমেটিক নার্ভাস সিস্টেম’। এ অংশটি সচেতন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করে। এ স্নায়ুতন্ত্রই স্ট্রেসের সময় মানুষের হৃদস্পন্দন দ্রুত করার বেলাতেও কাজ করে। আগের গবেষণায় উঠে এসেছিল, মানুষ যখন মানসিক হিসাব বা জটিল কাজ করে তখন তাদের চোখের মণি ছটফট করে। এ ছটফট থেকে ইঙ্গিত মেলে, মস্তিষ্কের কগনিটিভ লোড বা মানসিক চাপ বাড়ছে। এ নতুন গবেষণা প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে, চোখের মণির শারীরিক প্রতিক্রিয়া সরাসরি ওয়ার্কিং মেমোরি’র নির্ভুলতার সঙ্গে যুক্ত। যারা সঠিকভাবে তথ্য মনে রাখতে পেরেছে, তাদের ক্ষেত্রে চোখের মণির প্রসারণ বেশি দেখা গিয়েছে এবং এমনটি হয়েছে যখন তাদের মনোযোগ বা স্মরণশক্তির চাপ বেশি ছিল। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাটেনশন, পার্সেপশন অ্যান্ড সাইকোফিজিক্স’ জার্নাল-এ। গবেষণার মূল বার্তাটি হচ্ছে, চোখের মণির পরিবর্তনের মাধ্যমে ওয়ার্কিং মেমোরি’র দক্ষতার পরিমাপ সম্ভব।
ওয়ার্কিং মেমোরিকে সচল রাখার উপায়: ভবিষ্যতের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি হয়তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনোযোগ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। তবে পুরানো বিভিন্ন অভ্যাস এখনও কার্যকর। যেমন– জটিল বা বড় লেখা পড়ার সময় মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নেওয়া সহায়ক হতে পারে। এসব বিরতি নতুন তথ্যকে মস্তিষ্কে ঠিকভাবে বসতে সাহায্য করে। যাতে এরপরে আসা আরো তথ্যের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও প্রস্তুতি থাকে ওয়ার্কিং মেমোরি’তে।
তথ্যকে ছোট ছোট গুচ্ছে ভাগ করে নেওয়া। যেমন– ফোন নম্বরকে তিনটি ছোট ভাগে ভাগ করা। এ ধরনের পদ্ধতি ওয়ার্কিং মেমোরি’র ওপর চাপ কমায়। একে বলা হয় ‘চাঙ্কিং’, যেটি মস্তিষ্ককে তথ্য সহজভাবে ধরে রাখতে ও প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এটি মস্তিষ্কের কম জায়গায় বেশি তথ্য সামলানোর কৌশল। মনোযোগ ধরে রাখতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ’। এগুলো মূলত শেখায় কীভাবে মনোযোগকে দীর্ঘ সময় ধরে স্থির রাখা যায়। গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত তা অনুশীলন করলে ওয়ার্কিং মেমোরি’র ধারণক্ষমতা ধীরে ধীরে সামান্য বাড়তে পারে, বিশেষ করে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চর্চার পর।