ঢাকা ০২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

মশা নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কতটুকু নির্ভরযোগ্য?

  • আপডেট সময় : ১১:৪০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১
  • ১১৬ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : ঢাকা মহানগরীকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচাতে সরকারের কাজে এখনো দৃশ্যত কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তাতে বাধ্য হয়ে নগরবাসীকে ভরসা করতে হচ্ছে কয়েল, মশা মারার স্প্রে (অ্যারোসল), ক্রিম বা লোশনজাতীয় পণ্যসহ বৈদ্যুতিক ব্যাট বা বিভিন্ন মশা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ওপর।
কিন্তু এসব সামগ্রী কতটা কার্যকর, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের ছোট বাচ্চা রয়েছে তারা এ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। সচেতন ব্যক্তিরা রাতে মশারি ব্যবহার করলেও সবসময় সেটা সম্ভব নয়।
অধিকাংশ ব্যবহারকারী বলছেন, এসব সামগ্রীতে মুক্তিও মিলছে না ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ থেকে। বরং এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক নজরদারি না থাকায় এসব উপকরণ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ঠকছেনও ক্রেতারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন থেকে। এজন্য এ গবেষক ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন মশা ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং বিতরণ সামগ্রী পরীক্ষা করে আসছেন নিয়মিত। তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তিনি ৬০টির বেশি ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের কয়েল পরীক্ষা করেছেন। তাতে তিনি মাত্র ৬-৭টি ব্র্যান্ডের কয়েল পেয়েছেন, যেগুলো যথার্থ কার্যকর। সঠিক মাত্রায় কেমিক্যালের ব্যবহার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মশা তাড়ায় এমন কয়েলের ব্র্যান্ডের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সেগুলোতে নির্ধারিত মানের অতিরিক্ত মাত্রায় কেমিক্যালের ব্যবহার হয়েছে। যেটা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সার্বিক দিক বিবেচনায় ওই ছয়টি কয়েল সেরা।’
তিনি কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন মশা মারার স্প্রে-অ্যারোসলগুলোরও। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে ১০ থেকে ১২টি কোম্পানির অ্যারোসল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কেমিক্যালের মাত্রা মেনে তৈরি। কিন্তু মশা তাড়াতে কার্যকর অ্যারোসলের সংখ্যা চারটি পাওয়া গেছে।’ এছাড়া দেশি এবং আমদানি মোট চারটির গায়ে মাখা ক্রিম ও লোশন পরীক্ষায় পুরোপুরি কার্যকর পেয়েছেন মাত্র একটি। আরেকটি মোটামুটি ভালো ছিল। কিন্তু বাকি দুটি কার্যকর নয়। সেগুলো গায়ে মেখে মশার হাত থেকে রক্ষা মেলে না।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন যন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো কার্যকর নয়। খুব একটা কাজে আসে না। কবিরুল বাশার বলেন, ‘আরও সমস্যা রয়েছে। যে পণ্যগুলো কার্যকর সেগুলোর আসলটি বাজারে পাওয়াও মুশকিল। প্রচুর নকল পণ্য রয়েছে। যদিও সহজ টেকনোলজির বিভিন্ন সামগ্রী এখন বিদেশে রয়েছে, সেগুলো আমদানি হলেও উৎপাদনে দেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ নেই।’
সাধারণ মানুষ কীভাবে সঠিক সামগ্রী পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভালো, বড় ও সুনাম রয়েছে- এমন কোম্পানিগুলোর পণ্যই ভালো। সহজলভ্য বলে যেখান-সেখান থেকে পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। নকল পণ্য কেনা থেকে সচেতন হতে হবে।’
এদিকে মশা তাড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার কয়েল। এ পণ্যের জন্যই শুধু তদারকি রয়েছে সরকারের একটি সংস্থার। বাকিগুলোতে নেই। মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) একটি বাধ্যতামূলক পণ্য কয়েল। সেটা তদারকিতেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার কয়েল তৈরির কারখানা থাকলেও বিএসটিআইয়ের মান সার্টিফিকেট রয়েছে মাত্র ১০৩টির। বাকি সব অননুমোদিত। আইন অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু তদারকি করতে পারে সংস্থাটি। অ্যারোসল, লোশন বা ক্রিমজাতীয় পণ্যের উৎপাদন বা আমদানি বাড়ার পরও এসব সামগ্রীর জন্য নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। এর মধ্যে কোনোটিই বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্য নয়। শুধু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে একটি লাইসেন্স নিয়ে দেদারছে এসব পণ্য বিদেশ থেকে আনা অথবা তৈরি করা যায়। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে জানা গেছে, সেখানেও এ পর্যন্ত ৪৫০টির বেশি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের মশার ওষুধের (অ্যারোসল, ক্রিম ও অন্যান্য) লাইসেন্স দিয়েছে সংস্থাটি। যার অধিকাংশই আমদানি করা। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০টির মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলো আমদানি ও উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে। লাইসেন্স দেয়া ছাড়া পরবর্তীকালে মান নিয়ন্ত্রণ বা বাজার তদারকির এখতিয়ার নেই এ সংস্থার। ফলে নকল ও নি¤œমানের পণ্যে বাজার সয়লাভ হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্ভিদ উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইইডিসিআরে মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বাস্তবে ট্রায়াল করে এগুলোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপর বাজার তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের নয়। নকল বা নি¤œমানের পণ্যের বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দেখবে। কিন্তু তেমন কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নেই।’
এসব বিষয়ে কাজ করার কথা বিএসটিআইয়ের সিএম শাখার। সেখানে পরিচালক ছিলেন সাজ্জাদুল বারী। তিনি সদ্য পরিচালক (মেট্রোলজি) দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাধ্যতামূলক পণ্য না হওয়ায় কয়েল ছাড়া মশা বিতাড়নের অন্যান্য পণ্যে তদারকি করা যাচ্ছে না। এছাড়া আমাদের কাছে অন্যান্য স্প্রে বা ক্রিমের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই। সেজন্য কার্যকর না অকার্যকর সেটা আমরা প্রমাণ করতে পারি না।’
কয়েলেও যথেষ্ট তদারকি হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে সিএম শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সিএম লাইসেন্স নেয়া ব্র্যান্ড কারা তা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেই। কিন্তু নকল ও নি¤œমানের এতো বেশি কারখানা আছে যে, সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তারপরও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। জেল-জরিমানাসহ কারখানা সিলগালাও করছে বিএসটিআই।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাবলিক হেলথ গ্রেড অর্থাৎ মানব শরীরের সংস্পর্শে আসা এসব পণ্যের জন্য নির্ধারিত কীটনাশকের ব্যবহারযোগ্য মাত্রা রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত মশার কয়েল ও স্প্রেতে পারমেথ্রিন, বায়ো-অ্যালোথ্রিন, টেট্রাথ্রিন, ইমিপোথ্রিনের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কোনো পণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ব্যবহার হলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগ এবং ক্যান্সারেরও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
এদিকে মশা মারার জন্য তৈরি বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলোরও একই অবস্থা। মানের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সেগুলো ব্যবহার করেও সন্তুষ্টি মিলছে না সাধারণ মানুষের। কিনতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। এখন মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট, ইলেকট্রিক মসকিটো কিলার, পাওয়ার গার্ড মেশিন, মসকিটো রিপেলার মেশিন, কিলার ল্যাম্প, কিলিং বাল্বের মতো সামগ্রীর ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও। কিন্তু নেই মান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মশা নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কতটুকু নির্ভরযোগ্য?

আপডেট সময় : ১১:৪০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১

মহানগর প্রতিবেদন : ঢাকা মহানগরীকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচাতে সরকারের কাজে এখনো দৃশ্যত কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তাতে বাধ্য হয়ে নগরবাসীকে ভরসা করতে হচ্ছে কয়েল, মশা মারার স্প্রে (অ্যারোসল), ক্রিম বা লোশনজাতীয় পণ্যসহ বৈদ্যুতিক ব্যাট বা বিভিন্ন মশা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ওপর।
কিন্তু এসব সামগ্রী কতটা কার্যকর, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের ছোট বাচ্চা রয়েছে তারা এ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। সচেতন ব্যক্তিরা রাতে মশারি ব্যবহার করলেও সবসময় সেটা সম্ভব নয়।
অধিকাংশ ব্যবহারকারী বলছেন, এসব সামগ্রীতে মুক্তিও মিলছে না ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ থেকে। বরং এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক নজরদারি না থাকায় এসব উপকরণ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ঠকছেনও ক্রেতারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন থেকে। এজন্য এ গবেষক ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন মশা ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং বিতরণ সামগ্রী পরীক্ষা করে আসছেন নিয়মিত। তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তিনি ৬০টির বেশি ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের কয়েল পরীক্ষা করেছেন। তাতে তিনি মাত্র ৬-৭টি ব্র্যান্ডের কয়েল পেয়েছেন, যেগুলো যথার্থ কার্যকর। সঠিক মাত্রায় কেমিক্যালের ব্যবহার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মশা তাড়ায় এমন কয়েলের ব্র্যান্ডের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সেগুলোতে নির্ধারিত মানের অতিরিক্ত মাত্রায় কেমিক্যালের ব্যবহার হয়েছে। যেটা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সার্বিক দিক বিবেচনায় ওই ছয়টি কয়েল সেরা।’
তিনি কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন মশা মারার স্প্রে-অ্যারোসলগুলোরও। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে ১০ থেকে ১২টি কোম্পানির অ্যারোসল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কেমিক্যালের মাত্রা মেনে তৈরি। কিন্তু মশা তাড়াতে কার্যকর অ্যারোসলের সংখ্যা চারটি পাওয়া গেছে।’ এছাড়া দেশি এবং আমদানি মোট চারটির গায়ে মাখা ক্রিম ও লোশন পরীক্ষায় পুরোপুরি কার্যকর পেয়েছেন মাত্র একটি। আরেকটি মোটামুটি ভালো ছিল। কিন্তু বাকি দুটি কার্যকর নয়। সেগুলো গায়ে মেখে মশার হাত থেকে রক্ষা মেলে না।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন যন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো কার্যকর নয়। খুব একটা কাজে আসে না। কবিরুল বাশার বলেন, ‘আরও সমস্যা রয়েছে। যে পণ্যগুলো কার্যকর সেগুলোর আসলটি বাজারে পাওয়াও মুশকিল। প্রচুর নকল পণ্য রয়েছে। যদিও সহজ টেকনোলজির বিভিন্ন সামগ্রী এখন বিদেশে রয়েছে, সেগুলো আমদানি হলেও উৎপাদনে দেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ নেই।’
সাধারণ মানুষ কীভাবে সঠিক সামগ্রী পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভালো, বড় ও সুনাম রয়েছে- এমন কোম্পানিগুলোর পণ্যই ভালো। সহজলভ্য বলে যেখান-সেখান থেকে পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। নকল পণ্য কেনা থেকে সচেতন হতে হবে।’
এদিকে মশা তাড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার কয়েল। এ পণ্যের জন্যই শুধু তদারকি রয়েছে সরকারের একটি সংস্থার। বাকিগুলোতে নেই। মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) একটি বাধ্যতামূলক পণ্য কয়েল। সেটা তদারকিতেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার কয়েল তৈরির কারখানা থাকলেও বিএসটিআইয়ের মান সার্টিফিকেট রয়েছে মাত্র ১০৩টির। বাকি সব অননুমোদিত। আইন অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু তদারকি করতে পারে সংস্থাটি। অ্যারোসল, লোশন বা ক্রিমজাতীয় পণ্যের উৎপাদন বা আমদানি বাড়ার পরও এসব সামগ্রীর জন্য নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। এর মধ্যে কোনোটিই বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্য নয়। শুধু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে একটি লাইসেন্স নিয়ে দেদারছে এসব পণ্য বিদেশ থেকে আনা অথবা তৈরি করা যায়। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে জানা গেছে, সেখানেও এ পর্যন্ত ৪৫০টির বেশি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের মশার ওষুধের (অ্যারোসল, ক্রিম ও অন্যান্য) লাইসেন্স দিয়েছে সংস্থাটি। যার অধিকাংশই আমদানি করা। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০টির মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলো আমদানি ও উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে। লাইসেন্স দেয়া ছাড়া পরবর্তীকালে মান নিয়ন্ত্রণ বা বাজার তদারকির এখতিয়ার নেই এ সংস্থার। ফলে নকল ও নি¤œমানের পণ্যে বাজার সয়লাভ হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্ভিদ উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইইডিসিআরে মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বাস্তবে ট্রায়াল করে এগুলোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপর বাজার তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের নয়। নকল বা নি¤œমানের পণ্যের বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দেখবে। কিন্তু তেমন কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নেই।’
এসব বিষয়ে কাজ করার কথা বিএসটিআইয়ের সিএম শাখার। সেখানে পরিচালক ছিলেন সাজ্জাদুল বারী। তিনি সদ্য পরিচালক (মেট্রোলজি) দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাধ্যতামূলক পণ্য না হওয়ায় কয়েল ছাড়া মশা বিতাড়নের অন্যান্য পণ্যে তদারকি করা যাচ্ছে না। এছাড়া আমাদের কাছে অন্যান্য স্প্রে বা ক্রিমের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই। সেজন্য কার্যকর না অকার্যকর সেটা আমরা প্রমাণ করতে পারি না।’
কয়েলেও যথেষ্ট তদারকি হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে সিএম শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সিএম লাইসেন্স নেয়া ব্র্যান্ড কারা তা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেই। কিন্তু নকল ও নি¤œমানের এতো বেশি কারখানা আছে যে, সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তারপরও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। জেল-জরিমানাসহ কারখানা সিলগালাও করছে বিএসটিআই।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাবলিক হেলথ গ্রেড অর্থাৎ মানব শরীরের সংস্পর্শে আসা এসব পণ্যের জন্য নির্ধারিত কীটনাশকের ব্যবহারযোগ্য মাত্রা রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত মশার কয়েল ও স্প্রেতে পারমেথ্রিন, বায়ো-অ্যালোথ্রিন, টেট্রাথ্রিন, ইমিপোথ্রিনের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কোনো পণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ব্যবহার হলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগ এবং ক্যান্সারেরও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
এদিকে মশা মারার জন্য তৈরি বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলোরও একই অবস্থা। মানের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সেগুলো ব্যবহার করেও সন্তুষ্টি মিলছে না সাধারণ মানুষের। কিনতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। এখন মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট, ইলেকট্রিক মসকিটো কিলার, পাওয়ার গার্ড মেশিন, মসকিটো রিপেলার মেশিন, কিলার ল্যাম্প, কিলিং বাল্বের মতো সামগ্রীর ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও। কিন্তু নেই মান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা।