ঢাকা ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

মশা থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি

  • আপডেট সময় : ০১:৫০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২
  • ৮৫ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ‘জিরো ম্যালেরিয়া টার্গেট’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল ২০ আগস্ট পালিত হয়েছে বিশ্ব মশা দিবস। ১৯৩০ সাল থেকে প্রতিবছর ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ চিকিৎসক রোনাল্ড রস। এ আবিষ্কারের জন্য তিনি পরে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। তার সম্মানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন মশা দিবস পালন শুরু করে।
মশা ক্ষুদ্র প্রাণী, যার গড় ওজন প্রায় ২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম। এর জীবনকাল দুই মাসের কম। মশা তাদের জীবনের প্রথম ১০ দিন পানিতে কাটায়। শুধু স্ত্রী মশা মানুষ বা অন্য প্রাণীদের কামড়ায়। কারণ, ডিম উৎপাদনের জন্য তার রক্তের প্রয়োজন হয়। স্ত্রী মশা একবারে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। পুরুষ মশা গাছের রস, ফুলের মধু প্রভৃতি খায় এবং এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উদ্ভিদের পরাগায়নে সহায়তা করে। পৃথিবীতে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রজাতির মশা মানুষকে কামড়ায়।
মানুষের বিভিন্ন রোগের মধ্যে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা, ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস উল্লেখযোগ্য। মশাবাহিত রোগ বিষয়ে সচেতনার জন্য বিশ্বজুড়ে মশা দিবসে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
এনোফিলিস মশা একমাত্র প্রজাতি, যা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। কিউলেক্স জাতীয় মশারা ওয়েস্টনাইল ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালিটিস ভাইরাস, সেন্ট লুই এনসেফালিটিস ভাইরাস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাইলেরিয়াসিস ও এভিয়ান ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। তৃতীয় প্রজাতির মশা, যারা ‘এডিস’ বা ‘টাইগার মসকিউটো’ নামে পরিচিত। তারা ইয়েলো ফিভার, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস ভাইরাস বহন করে।
ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে এযাবৎ যত মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে, তার প্রায় অর্ধেক (প্রায় ৫২ বিলিয়ন) মারা গেছে মশাবাহিত রোগে। মূলত, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছে ম্যালেরিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা মতে, মশাবাহিত রোগে বিশ্বে বছরে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার লোক মারা যায়। শুধু ম্যালেরিয়ায় মারা যায় ৬ লাখের বেশি। সর্বশেষ বিশ্ব ম্যালেরিয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪১ মিলিয়ন, যেখানে ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২২৭ মিলিয়ন। ২০২০ সালে ম্যালেরিয়ায় মৃত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৭ হাজার, যার অর্ধেকই হচ্ছে সাব-সাহারান আফ্রিকার শিশু। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে মারা যায়। অপরদিকে, সাপ, কুকুর, কুমির, জলহস্তী, সিংহ, নেকড়ে ও হাঙর সম্মিলিতভাবে প্রায় ৭৫ হাজার জনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই, মশাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী বললেও ভুল হবে না।
মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবু মুছা বলেন, ‘বর্ষার মৌসুমে ড্রেন ও নালাতে পানি জমে থাকে। পানি একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মশার ডিম পাড়া ও বংশ বিস্তারের জন্য। চার ধরনের মশার কেউ খুব ভদ্র, কেউ খুব নোংরা। ভদ্র মশার মধ্যে এডিস অন্যতম, যে ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। এই ভদ্র মশা পরিষ্কার, জমাটবদ্ধ পানিতে জন্মে। এনোফিলিস মশা থাকে পাহাড়ি এলাকায়। আমরা বিভিন্ন সময় পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে যাই। সেখানে যদি মশার কামড় খেয়ে আসি, তাহলে কিন্তু ম্যালেরিয়া হতে পারে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, ডেঙ্গু একজন মানুষের জীবনে ৪ বার হতে পারে। প্রথম বারের তুলনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় বারে ডেঙ্গুতে মুত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই, যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে, তাদেরকে পরে আরও বেশি সচেতন থাকা উচিত।’
ডা. আবু মুছা আরও বলেন, ‘বাসার আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে থাকতে না পারে। বাসার জানালায় রেক্টুঙ্গুলার নেট ব্যবহার করা যায়, যাতে বাসায় মশা ঢুকতে না পারে। নিয়মিত মশারি ব্যবহার করতে হবে। কেউ পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলে, মশা দূরে রাখার ক্রিম এডোমোস ব্যবহার করতে হবে। বাসাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।’
মশাবাহিত রোগ থেকে আমাদের বাঁচতে হলে সচেতন হওয়া জরুরি। প্লাস্টিক দ্রব্য, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনা ড্রেনগুলোতে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ড্রেন যেন ভরাট না হয়ে যায়। কারণ, ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হলে সেখানে জমে থাকা বদ্ধ পানিতে কিউলেক্স মশা বংশবিস্তার করে। নালা, সব ধরনের জলাশয়, রাস্তা, পার্ক, উদ্যান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রোববার থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু, ৮০ টাকায় মিলবে চিনি

মশা থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি

আপডেট সময় : ০১:৫০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : ‘জিরো ম্যালেরিয়া টার্গেট’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল ২০ আগস্ট পালিত হয়েছে বিশ্ব মশা দিবস। ১৯৩০ সাল থেকে প্রতিবছর ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ চিকিৎসক রোনাল্ড রস। এ আবিষ্কারের জন্য তিনি পরে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। তার সম্মানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন মশা দিবস পালন শুরু করে।
মশা ক্ষুদ্র প্রাণী, যার গড় ওজন প্রায় ২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম। এর জীবনকাল দুই মাসের কম। মশা তাদের জীবনের প্রথম ১০ দিন পানিতে কাটায়। শুধু স্ত্রী মশা মানুষ বা অন্য প্রাণীদের কামড়ায়। কারণ, ডিম উৎপাদনের জন্য তার রক্তের প্রয়োজন হয়। স্ত্রী মশা একবারে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। পুরুষ মশা গাছের রস, ফুলের মধু প্রভৃতি খায় এবং এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উদ্ভিদের পরাগায়নে সহায়তা করে। পৃথিবীতে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রজাতির মশা মানুষকে কামড়ায়।
মানুষের বিভিন্ন রোগের মধ্যে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা, ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস উল্লেখযোগ্য। মশাবাহিত রোগ বিষয়ে সচেতনার জন্য বিশ্বজুড়ে মশা দিবসে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
এনোফিলিস মশা একমাত্র প্রজাতি, যা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। কিউলেক্স জাতীয় মশারা ওয়েস্টনাইল ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালিটিস ভাইরাস, সেন্ট লুই এনসেফালিটিস ভাইরাস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাইলেরিয়াসিস ও এভিয়ান ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। তৃতীয় প্রজাতির মশা, যারা ‘এডিস’ বা ‘টাইগার মসকিউটো’ নামে পরিচিত। তারা ইয়েলো ফিভার, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস ভাইরাস বহন করে।
ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে এযাবৎ যত মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে, তার প্রায় অর্ধেক (প্রায় ৫২ বিলিয়ন) মারা গেছে মশাবাহিত রোগে। মূলত, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছে ম্যালেরিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা মতে, মশাবাহিত রোগে বিশ্বে বছরে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার লোক মারা যায়। শুধু ম্যালেরিয়ায় মারা যায় ৬ লাখের বেশি। সর্বশেষ বিশ্ব ম্যালেরিয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪১ মিলিয়ন, যেখানে ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২২৭ মিলিয়ন। ২০২০ সালে ম্যালেরিয়ায় মৃত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৭ হাজার, যার অর্ধেকই হচ্ছে সাব-সাহারান আফ্রিকার শিশু। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে মারা যায়। অপরদিকে, সাপ, কুকুর, কুমির, জলহস্তী, সিংহ, নেকড়ে ও হাঙর সম্মিলিতভাবে প্রায় ৭৫ হাজার জনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই, মশাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী বললেও ভুল হবে না।
মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবু মুছা বলেন, ‘বর্ষার মৌসুমে ড্রেন ও নালাতে পানি জমে থাকে। পানি একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মশার ডিম পাড়া ও বংশ বিস্তারের জন্য। চার ধরনের মশার কেউ খুব ভদ্র, কেউ খুব নোংরা। ভদ্র মশার মধ্যে এডিস অন্যতম, যে ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। এই ভদ্র মশা পরিষ্কার, জমাটবদ্ধ পানিতে জন্মে। এনোফিলিস মশা থাকে পাহাড়ি এলাকায়। আমরা বিভিন্ন সময় পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে যাই। সেখানে যদি মশার কামড় খেয়ে আসি, তাহলে কিন্তু ম্যালেরিয়া হতে পারে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, ডেঙ্গু একজন মানুষের জীবনে ৪ বার হতে পারে। প্রথম বারের তুলনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় বারে ডেঙ্গুতে মুত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই, যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে, তাদেরকে পরে আরও বেশি সচেতন থাকা উচিত।’
ডা. আবু মুছা আরও বলেন, ‘বাসার আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে থাকতে না পারে। বাসার জানালায় রেক্টুঙ্গুলার নেট ব্যবহার করা যায়, যাতে বাসায় মশা ঢুকতে না পারে। নিয়মিত মশারি ব্যবহার করতে হবে। কেউ পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলে, মশা দূরে রাখার ক্রিম এডোমোস ব্যবহার করতে হবে। বাসাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।’
মশাবাহিত রোগ থেকে আমাদের বাঁচতে হলে সচেতন হওয়া জরুরি। প্লাস্টিক দ্রব্য, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনা ড্রেনগুলোতে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ড্রেন যেন ভরাট না হয়ে যায়। কারণ, ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হলে সেখানে জমে থাকা বদ্ধ পানিতে কিউলেক্স মশা বংশবিস্তার করে। নালা, সব ধরনের জলাশয়, রাস্তা, পার্ক, উদ্যান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।