ঢাকা ১১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মলিন মূহুর্ত

  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

আল আমিন মুহাম্মাদ : নবান্ন এলে পিঠাপুলির ধুম পড়ে যায় বাড়ি-বাড়ি। মিষ্টি-পিঠার হাঁড়ি নিয়ে আসে কুটুম। পিঠার ঘ্রাণ আর প্রাণে-প্রাণে ছোঁয়া- কী এক আনন্দের মেলা বসে গ্রামবাংলার বাড়িতে। আফিয়ার ছোট কাকু আজ ঢাকা থেকে বাড়িতে আসছে। একটা কোম্পানিতে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি করে। গ্রামে আসছে সবার সাথে মিলেমিশে মায়ের হাতের পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য। আফিয়া তো আনন্দে আত্বহারা। আর হবেই বা না কেন। আফিয়ার খোঁচানিতেই অনেকটা জোর করে ছুটি নিতে হয়েছে তাকে। অনেক দিন গ্রামে আসে না, নবান্নে অবশ্যই আসবে ; আফিয়াকে এরকম কথা দিতে হয়েছিলো। একটু আগে আফিয়া ফোন করেছিলো – কাকু কোন পর্যন্ত এসেছেন।
কাকু বলেছিলো- এই তো মা, আরিচার ঘাটে জ্যামে পড়েছি; আর দু’এক ঘণ্টা লাগ
কথাগুলে শুনে আফিয়া এক দৌঁড়ে দাদীর কাছে গিয়ে বললো- দাদী, কাকু না আর একটু পরই এসে পড়বে।
দাদী বারান্দায় বসে তাসবিহ টিপতেছিলো। বললো- আচ্ছা আসুক।
তারপর দাদীর গলাটা জড়িয়ে বললো- আজ রাতেই কিন্তু পিঠে বানাবে। কাকু পরশুদিন হয়তো চলে যাবে।
দাদাী বললো- আচ্ছা বাবা তা-ই হবে।
ছেলটার জন্য ঢেঁকিতে চাল কুটে রেডি করে রেখেছে মা। বড় ছেলে মানে আফিয়ার আব্বু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর একমাত্র এই ছেলেটিকেই সে বুকের ধন করে বুক আগলে রেখেছে।। আর স্বামীকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো তাঁর সামনে ওই পাকপশুদের হাতে। ছেলেটাকে অনেক কিছু খাওয়াতে তার মনটা খুব পাগল।
আফিয়া ঘন্টাখানিক পর আবার ফোন করলো-
হ্যালো কাকু, কোন পর্যন্ত?
কাকু বললো- এই যে আম্মু, আমাদের বাজারে এসে এইমাত্র নামলাম। এখন ভ্যানে উঠবো।
আফিয়া ফোনটা রেখে দিয়েই মা’র কাছে চলে গেলো।
জড়িয়ে ধরে বলল- মা! মা! কাকু এসে পড়েছে, তাড়াতাড়ি খাবার রেডি করো।
এই বলে সে বাড়ির কাছে তিন রাস্তার মোড়ে ছুটে গেলো। এখানে অপেক্ষা করবে। কাকু ভ্যান থেকে নামলেই ও রিসিভ করবে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দূর থেকে একটি ভ্যানে কাউকে দেখতে পেলো আফিয়া। বুঝতে আর বাকি রইলো না তার। এক দৌঁড়ে এগিয়ে গেলো ভ্যানটির কাছে। কাকু ভ্যান থেকে নেমে আফিয়াকে কোলে করে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো। তারপর ভ্যান-অলাকে একটু বেশি দিয়ে ভাড়া মিটালো।
বাড়িতে পৌঁছালে আনন্দের বৃষ্টিতে স্নাত হলো সবাই। সবাই সবাইকে দেখে দারুণ খুশি উপভোগ করছে। কেমন আছেন মা-ভাবি বলতেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ অশ্রুতে ভিজলো আফিয়ার দাদী। কেননা তাকে দেখে মনে পড়ে গেলো তার বড় ছেলের কথা। আর স্বামীর মুখস্মৃতিও উঁকি মারলো রীতিমত। আফিয়ার আম্মুরও খুশির আকাশে হঠাৎ কালোমেঘ দেখা গেলো। মনে পড়ে গেলো আফিয়ার আব্বুর কথা। সেও এ রকম ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতো। যদি বেঁচে থাকতো তাহলে আজ…! ভাবতে ভাবতে ঘরে চলে গেলো চোখটা মুছে। গিয়ে খাবার রেডি করতে লাগলো। ছোটকাকু আফিয়া আর তার আম্মুকে অনেক ভালোবাসে। বড় ভাইয়ার অভাবটা পূরণ করার চেষ্টা করে। পরিবারের সবার জন্য অনেক কিছু নিয়েও এসেছে সে। চেষ্টা করে বাবা ও ভাইয়ার অনুপস্থিতিকে নিঃশেষ করার। তারও আনন্দ মাখা মুখটা ম্লান হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হলো অনেকটা।
আফিয়া দুপুরে খেয়েছে। তবুও এই বিকেলে তার কাকুর সঙ্গে আরেকবার খেয়ে নিলো। তারপর গ্রামের মাঠে ঘুরতে গেলো কাকুর সঙ্গে। ঘাসের গালিচা সমৃদ্ধ সবুজ মেঠোপথে হাঁটছে ওরা। পরস্পর হাত ধরে। সবুজ সোনালী ক্ষেতে ফসল দুলছে। বৈকালি কাঁচারোদ লাগছে চোখে-মুখে। ফুরফুরে বাতাসে মনটা ভরে উঠছে। কী এক শান্তির অনুভূতি। এক কৃষকের ক্ষেতে কাজ করা দেখে কাকুর মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেলো মুহুর্তে। মনে পড়ে গেলো আফিয়ার দাদুর কথা। এরকম ক্ষেতে বৈকালে কাজ করতেন তিনি। একটুখানি নিরবতা ছেয়ে গেলে তাকে। সেটা দেখে আফিয়া জিজ্ঞেস করলো- কাকু,
কিছু বলছো না যে। মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো মনে হচ্ছে।
রাত্রে পিঠা খাওয়ার প্রসঙ্গ এনে খুব সহজেই অবুঝ মনের আফিয়াকে সে যাত্রায় সামলানো গেলো। তারপর বাড়ি চলে এসে মাগরিবের নামাজটা সেরে বাজারে চলে গেলো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আফিয়ার কাকু। পিঠে রাঁধার জন্য কোন কিছু আর বাড়ির কারো জন্য কোনকিছু আনতে হবে কি না জেনে গেলো। আফিয়ার মা জানিয়ে দিলো- কিছু লাগবে না।
উঠোনের চুলোয় পিঠে রাঁধা শুরু করেছে আফিয়ার দাদী ও মা। ঝিকিমিকি তারা ও চাঁদের আলো ঝরে পড়ছে সেখানে। আফিয়া চুলোর পিঠে আগুন পোহাচ্ছে আর কাকু তাদের সবার জন্য কি কি এনেছে সেগুলো বের করে দেখছে। আফিয়ার দাদী ও মায়ের জন্য নতুন শাড়ী। তার জন্য জামাকাপড় ছাড়াও আরো অনেককিছু ।কাকু বাজার থেকে আসতে দেরি হওয়ায় ফোন করলো- কাকু, তাড়াতাড়ি এসো বাড়িতে। পিঠে রাঁধা শুরু হয়ে গেছে।
এই তো আম্মু আসছি বলে বাড়ির সবার জন্য কয়েক রকম ভাজা, বিস্কুট, সিঙ্গারা ও মায়ের জন্য পেসারের বড়ি কিনে বাড়ি চলে এলো।
এসে দেখলো পিঠে রাঁধা শুরু হয়ে গেছে। সাইকেলটা পেয়ারা গাছে বাঁধিয়ে হাতের ব্যাগটা আফিয়ার কাছে দিলো। ভাজা-বিস্কুট বের করলো আফিয়া। সবাই মিলে একসাথে খাচ্ছে আর গল্প করছে। সাথে পিঠা রাঁধাও চলছে। আফিয়ার কাকু তার কাছেই বসা। দাদী গরম গরম পিঠা তুলে দিচ্ছে আর ওরা খাচ্ছে। গরম গরম পিঠা খেয়ে খুব মজা পাচ্ছে । আফিয়ার আম্মু পিঠা বানাচ্ছে আর দাদী সেগুলো তেলে ভাজছে। ভাজতে ভাজতে ছেলেটার মুখের দিকে তাকাচ্ছে মাঝে-মাঝে। পরাণটা ভরে যাচ্ছে ছেলেটার পিঠা খাওয়ার মজাদার দৃশ্য দেখে। মায়েরা এমনি হয়। আফিয়ার আম্মুও আফিয়ার দিকে তাকিয়ে এমনটা করছে। খুশিতে বউ-শ্বাশুড়ির মনটা ভরে উঠছে। এত খুশি এত আনন্দের ভিতর হঠাৎ দাদীর মনে পড়ে গেলো স্বামী-সন্তানের সেই কথা। তখন মুখটা মলিন হয়ে গেলো মূহুর্তে। আফিয়ার কাকুর খাওয়ার দৃশ্যটা যত তৃপ্তিদায়ক হচ্ছে ততই চোখ দিয়ে জল বের হচ্ছে। কিন্তু সাথে সাথে আঁচল দিয়ে তা মুছে ফেলছে। আফিয়ার কাকু ও আম্মু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তবুও তারা না দেখার ভান করে রইলো। আনন্দের সময়ে তাদের বাড়িতে এরকম কিছু মলিন মূহুর্ত প্রায়ই আসে আফিয়া তা টের পায়। কিন্তু কেন এরকম হয় তার উত্তর সে জানে না। যেদিন জানবে, যেদিন বুঝবে ; সেদিন থেকে সারাটা জীবন হয়তো সে এই মলিন মূহুর্তের শিকার হয়ে বেঁচে থাকবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মলিন মূহুর্ত

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

আল আমিন মুহাম্মাদ : নবান্ন এলে পিঠাপুলির ধুম পড়ে যায় বাড়ি-বাড়ি। মিষ্টি-পিঠার হাঁড়ি নিয়ে আসে কুটুম। পিঠার ঘ্রাণ আর প্রাণে-প্রাণে ছোঁয়া- কী এক আনন্দের মেলা বসে গ্রামবাংলার বাড়িতে। আফিয়ার ছোট কাকু আজ ঢাকা থেকে বাড়িতে আসছে। একটা কোম্পানিতে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি করে। গ্রামে আসছে সবার সাথে মিলেমিশে মায়ের হাতের পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য। আফিয়া তো আনন্দে আত্বহারা। আর হবেই বা না কেন। আফিয়ার খোঁচানিতেই অনেকটা জোর করে ছুটি নিতে হয়েছে তাকে। অনেক দিন গ্রামে আসে না, নবান্নে অবশ্যই আসবে ; আফিয়াকে এরকম কথা দিতে হয়েছিলো। একটু আগে আফিয়া ফোন করেছিলো – কাকু কোন পর্যন্ত এসেছেন।
কাকু বলেছিলো- এই তো মা, আরিচার ঘাটে জ্যামে পড়েছি; আর দু’এক ঘণ্টা লাগ
কথাগুলে শুনে আফিয়া এক দৌঁড়ে দাদীর কাছে গিয়ে বললো- দাদী, কাকু না আর একটু পরই এসে পড়বে।
দাদী বারান্দায় বসে তাসবিহ টিপতেছিলো। বললো- আচ্ছা আসুক।
তারপর দাদীর গলাটা জড়িয়ে বললো- আজ রাতেই কিন্তু পিঠে বানাবে। কাকু পরশুদিন হয়তো চলে যাবে।
দাদাী বললো- আচ্ছা বাবা তা-ই হবে।
ছেলটার জন্য ঢেঁকিতে চাল কুটে রেডি করে রেখেছে মা। বড় ছেলে মানে আফিয়ার আব্বু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর একমাত্র এই ছেলেটিকেই সে বুকের ধন করে বুক আগলে রেখেছে।। আর স্বামীকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো তাঁর সামনে ওই পাকপশুদের হাতে। ছেলেটাকে অনেক কিছু খাওয়াতে তার মনটা খুব পাগল।
আফিয়া ঘন্টাখানিক পর আবার ফোন করলো-
হ্যালো কাকু, কোন পর্যন্ত?
কাকু বললো- এই যে আম্মু, আমাদের বাজারে এসে এইমাত্র নামলাম। এখন ভ্যানে উঠবো।
আফিয়া ফোনটা রেখে দিয়েই মা’র কাছে চলে গেলো।
জড়িয়ে ধরে বলল- মা! মা! কাকু এসে পড়েছে, তাড়াতাড়ি খাবার রেডি করো।
এই বলে সে বাড়ির কাছে তিন রাস্তার মোড়ে ছুটে গেলো। এখানে অপেক্ষা করবে। কাকু ভ্যান থেকে নামলেই ও রিসিভ করবে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দূর থেকে একটি ভ্যানে কাউকে দেখতে পেলো আফিয়া। বুঝতে আর বাকি রইলো না তার। এক দৌঁড়ে এগিয়ে গেলো ভ্যানটির কাছে। কাকু ভ্যান থেকে নেমে আফিয়াকে কোলে করে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো। তারপর ভ্যান-অলাকে একটু বেশি দিয়ে ভাড়া মিটালো।
বাড়িতে পৌঁছালে আনন্দের বৃষ্টিতে স্নাত হলো সবাই। সবাই সবাইকে দেখে দারুণ খুশি উপভোগ করছে। কেমন আছেন মা-ভাবি বলতেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ অশ্রুতে ভিজলো আফিয়ার দাদী। কেননা তাকে দেখে মনে পড়ে গেলো তার বড় ছেলের কথা। আর স্বামীর মুখস্মৃতিও উঁকি মারলো রীতিমত। আফিয়ার আম্মুরও খুশির আকাশে হঠাৎ কালোমেঘ দেখা গেলো। মনে পড়ে গেলো আফিয়ার আব্বুর কথা। সেও এ রকম ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতো। যদি বেঁচে থাকতো তাহলে আজ…! ভাবতে ভাবতে ঘরে চলে গেলো চোখটা মুছে। গিয়ে খাবার রেডি করতে লাগলো। ছোটকাকু আফিয়া আর তার আম্মুকে অনেক ভালোবাসে। বড় ভাইয়ার অভাবটা পূরণ করার চেষ্টা করে। পরিবারের সবার জন্য অনেক কিছু নিয়েও এসেছে সে। চেষ্টা করে বাবা ও ভাইয়ার অনুপস্থিতিকে নিঃশেষ করার। তারও আনন্দ মাখা মুখটা ম্লান হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হলো অনেকটা।
আফিয়া দুপুরে খেয়েছে। তবুও এই বিকেলে তার কাকুর সঙ্গে আরেকবার খেয়ে নিলো। তারপর গ্রামের মাঠে ঘুরতে গেলো কাকুর সঙ্গে। ঘাসের গালিচা সমৃদ্ধ সবুজ মেঠোপথে হাঁটছে ওরা। পরস্পর হাত ধরে। সবুজ সোনালী ক্ষেতে ফসল দুলছে। বৈকালি কাঁচারোদ লাগছে চোখে-মুখে। ফুরফুরে বাতাসে মনটা ভরে উঠছে। কী এক শান্তির অনুভূতি। এক কৃষকের ক্ষেতে কাজ করা দেখে কাকুর মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেলো মুহুর্তে। মনে পড়ে গেলো আফিয়ার দাদুর কথা। এরকম ক্ষেতে বৈকালে কাজ করতেন তিনি। একটুখানি নিরবতা ছেয়ে গেলে তাকে। সেটা দেখে আফিয়া জিজ্ঞেস করলো- কাকু,
কিছু বলছো না যে। মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো মনে হচ্ছে।
রাত্রে পিঠা খাওয়ার প্রসঙ্গ এনে খুব সহজেই অবুঝ মনের আফিয়াকে সে যাত্রায় সামলানো গেলো। তারপর বাড়ি চলে এসে মাগরিবের নামাজটা সেরে বাজারে চলে গেলো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আফিয়ার কাকু। পিঠে রাঁধার জন্য কোন কিছু আর বাড়ির কারো জন্য কোনকিছু আনতে হবে কি না জেনে গেলো। আফিয়ার মা জানিয়ে দিলো- কিছু লাগবে না।
উঠোনের চুলোয় পিঠে রাঁধা শুরু করেছে আফিয়ার দাদী ও মা। ঝিকিমিকি তারা ও চাঁদের আলো ঝরে পড়ছে সেখানে। আফিয়া চুলোর পিঠে আগুন পোহাচ্ছে আর কাকু তাদের সবার জন্য কি কি এনেছে সেগুলো বের করে দেখছে। আফিয়ার দাদী ও মায়ের জন্য নতুন শাড়ী। তার জন্য জামাকাপড় ছাড়াও আরো অনেককিছু ।কাকু বাজার থেকে আসতে দেরি হওয়ায় ফোন করলো- কাকু, তাড়াতাড়ি এসো বাড়িতে। পিঠে রাঁধা শুরু হয়ে গেছে।
এই তো আম্মু আসছি বলে বাড়ির সবার জন্য কয়েক রকম ভাজা, বিস্কুট, সিঙ্গারা ও মায়ের জন্য পেসারের বড়ি কিনে বাড়ি চলে এলো।
এসে দেখলো পিঠে রাঁধা শুরু হয়ে গেছে। সাইকেলটা পেয়ারা গাছে বাঁধিয়ে হাতের ব্যাগটা আফিয়ার কাছে দিলো। ভাজা-বিস্কুট বের করলো আফিয়া। সবাই মিলে একসাথে খাচ্ছে আর গল্প করছে। সাথে পিঠা রাঁধাও চলছে। আফিয়ার কাকু তার কাছেই বসা। দাদী গরম গরম পিঠা তুলে দিচ্ছে আর ওরা খাচ্ছে। গরম গরম পিঠা খেয়ে খুব মজা পাচ্ছে । আফিয়ার আম্মু পিঠা বানাচ্ছে আর দাদী সেগুলো তেলে ভাজছে। ভাজতে ভাজতে ছেলেটার মুখের দিকে তাকাচ্ছে মাঝে-মাঝে। পরাণটা ভরে যাচ্ছে ছেলেটার পিঠা খাওয়ার মজাদার দৃশ্য দেখে। মায়েরা এমনি হয়। আফিয়ার আম্মুও আফিয়ার দিকে তাকিয়ে এমনটা করছে। খুশিতে বউ-শ্বাশুড়ির মনটা ভরে উঠছে। এত খুশি এত আনন্দের ভিতর হঠাৎ দাদীর মনে পড়ে গেলো স্বামী-সন্তানের সেই কথা। তখন মুখটা মলিন হয়ে গেলো মূহুর্তে। আফিয়ার কাকুর খাওয়ার দৃশ্যটা যত তৃপ্তিদায়ক হচ্ছে ততই চোখ দিয়ে জল বের হচ্ছে। কিন্তু সাথে সাথে আঁচল দিয়ে তা মুছে ফেলছে। আফিয়ার কাকু ও আম্মু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তবুও তারা না দেখার ভান করে রইলো। আনন্দের সময়ে তাদের বাড়িতে এরকম কিছু মলিন মূহুর্ত প্রায়ই আসে আফিয়া তা টের পায়। কিন্তু কেন এরকম হয় তার উত্তর সে জানে না। যেদিন জানবে, যেদিন বুঝবে ; সেদিন থেকে সারাটা জীবন হয়তো সে এই মলিন মূহুর্তের শিকার হয়ে বেঁচে থাকবে।