আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম আসনের ফলাফল নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়েরকৃত মামলার শুনানি নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। বাড়ছে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ ও উত্তাপও। কারণ, এই মামলা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম আসনে লড়েন। তাঁর প্রতিপ ছিলেন তাঁরই একসময়য়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে মমতা হেরে যান শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। শুভেন্দু জেতেন মাত্র ১ হাজার ৯৫৬ ভোটের ব্যবধানে। শুভেন্দু পান মোট ১ লাখ ১০ হাজার ৭৬৪ ভোট। মমতা পান ১ লাখ ৮ হাজার ৮০৮ ভোট। গত ২ মে মমতার আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়। কিন্তু এই ফল মেনে নেননি মমতা। এই নির্বাচনের ফল গণনায় কারচুপির অভিযোগ আনেন তিনি। মমতার আবেদনের পরিপ্রেেিত গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে শুরু হয়েছে এ মামলার শুনানি।
গত ১৭ জুন এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে ওঠে। বিচারপতি মামলাটির প্রাথমিক শুনানি শেষে এবং মামলায় মমতার আইনগত উপস্থিতির বাধ্যবাধকতার কারণে শুনানির তারিখ পরদিন ১৮ জুন নির্ধারণ করেন। ১৮ জুন মমতার আইনজীবীরা দাবি তোলেন, মামলাটি বিচারক কৌশিক চন্দের আদালত থেকে স্থানান্তর করে অন্য কোনো আদালতে শুনানির জন্য প্রেরণ করা হোক। মমতার অভিযোগ, বিচারপতি কৌশিক চন্দ বিজেপি ঘরানার সমর্থক। তিনি বিচারপতি হওয়ার আগে তাঁকে দেখা গেছে বিজেপির বিভিন্ন সভায়। মমতার যুক্তি, এই মামলার শুনানি কৌশিক চন্দের একক বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হলে সেখানে তিনি ন্যায়বিচার নাও পেতে পারেন। এরপরই ৭ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানিয়ে দেন, তিনি এই মামলা থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেছেন, একজন মানুষ নানা মতের, নানা আদর্শের অনুসারী হতে পারেন। তবে তিনি যখন একজন বিচারপতির আসনে বসেন, তখন তিনি তাঁর বিচারপ্রণালিকে নিরপে করার প্রয়াস চালিয়ে যান। এ ছাড়া বিচারব্যবস্থাকে কলুষিত করার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৫ লাখ রুপি জরিমানা করেন কৌশিক চন্দ। নির্দেশে বলা হয়, এই জরিমানার অর্থ জমা দিতে হবে রাজ্যের বার কাউন্সিলে, যা পরবর্তীকালে আইনজীবীদের কোভিড চিকিৎসা এবং দুস্থ আইনজীবীদের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে।
বিচারপতি কৌশিক চন্দ বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলাকারীর প থেকে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এ জন্য তিনি সরছেন না। বরং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কারণেই তিনি সরে দাঁড়ালেন।
এদিকে ১২ জুলাই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জানান হয়, মমতার নির্বাচনী মামলার শুনানি হবে হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চে। গতকাল শম্পা সরকার এই মামলার শুনানি গ্রহণ করে প্রতিপ শুভেন্দু অধিকারীকে নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মমতাকে আদালতে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি দেন। তিনি নির্দেশ দেন ইভিএম বা ভোটযন্ত্রসহ এই মামলাসংক্রান্ত সমস্ত নথি সংরণের। ১২ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার নির্দেশও দেন বিচারপতি।
বিচারপতি শম্পা সরকার ২০১৮ সালের ১২ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে নিযুক্ত হন। আর হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। তিনি কলকাতার লোরেটো কলেজ ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।
এদিকে বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চে শুনানি শুরুর দিনই মামলার প্রতিপ শুভেন্দু অধিকারী ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি আবেদন করেছেন, এই মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে হলে তা প্রভাবিত করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গ্রহণ করেছেন। তবে এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেননি এখনো।
মমতার করা মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ শুভেন্দু
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ