ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পরামর্শ

‘মব’ থেকে সতর্ক থাকুন

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

সোমবার বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কোস্ট গার্ড দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: একুশে বইমেলা, ভালোবাসা দিবসে ফুলের দোকানসহ দেশে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন জায়গায় ‘তৌহিদী জনতা’র নামে দল বেঁধে যে ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চাইলে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, কোন জনতা কিসের জন্য মব ক্রিয়েট করে ওগুলো আপনাদেরও দেখতে হবে।

দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা মবের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশকে ভালবাসতে হবে; দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে দেশের লাভকে দেখতে হবে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কোস্ট গার্ড দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

ওই সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল সরকার ‘ডেভিল হান্ট অপারেশন’ চালালেও ‘তৌহিদী জনতা’ নামের মব কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা সব জনতাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। শুধু এক ধরনের না বিভিন্ন রকমের জনতা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ক্রিয়েট করছে। সব জনতাকেই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের।

আমরা দুর্নীতি করলে প্রকাশ করে দেন: উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ভাষ্য, দুর্নীতি দূর হলেই দেশের উন্নতি হবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর যদি অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের দুর্নীতি করে থাকে, তাহলে সেই তথ্য প্রকাশ করে দিতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি সব জায়গায় গ্রাস করে নিয়েছে। দুর্নীতি কীভাবে কমানো যায় সেটা দেখতে হবে। দুর্নীতি কামানো গেলে সব সেক্টরে উন্নতি হবে। যদি আমরা দুর্নীতি করি তাহলে প্রকাশ করে দেন।

গেল ছয় মাসে দেশে দুর্নীতি অনেক কমেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারপরও এটা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি আরো দুর্নীতি কমাতে হবে।

আরাকান আর্মি প্রসঙ্গ: বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির আনাগোনা নিয়ে সরকারের নজরদারি কতটা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন আমাদের সঙ্গে মিয়ানমারের যে অঞ্চল আছে ওই এলাকায় বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জন্য কোস্টগার্ড ও বিজিবির কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু তারা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। উপদেষ্টা বলেন, পুরো বর্ডার এলাকা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে কোন সমস্যা নেই। এখানে কোনো ধরনের সমস্যা নেই।

সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকায় ঢুকে কাউকে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আপনারা জানেন, আমাদের জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে সীমানা অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ করে ফেললে তখন এই ঘটনা ঘটে।

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও রোহিঙ্গা ইস্যু: পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর রোহিঙ্গাদের সহজে পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়া আমাদের অনেক আগের চিন্তাভাবনা। এটা জনগণের একটা ভোগান্তি থেকে রক্ষা করা হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে না যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। ন্যাশনাল আইডিই যেন রোহিঙ্গারা না পায় এজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আবার রিভিজিট করা হবে। যদি কেউ এরকম পেয়ে থাকে। আছে কিনা এটা সংখ্যা তো আমরা জানি না।

পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অ্যাকশন: পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না এবং পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা যত অফিসারকে আইনের আওতায় এনেছি, গত ৫৩ বছরে তা হয়নি। কোনো তথ্য পাওয়ামাত্র অ্যাকশনে যাওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা যেখানে অভিযোগ পাচ্ছি সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি। রিপোর্ট হওয়ার পর আমাদের তদন্ত করতে হয়। তদন্ত করতে গিয়ে সময় লাগে। অনেক সময় সত্যতা পাওয়া যায় আবার অনেক সময় মোটিভেটেড সংবাদও পাওয়া যায়। এজন্য যেটার সত্যতা পাওয়া যায় সেটাতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেমন আজকে একটি খবর দেখলাম, সঙ্গে সঙ্গে ওটার ব্যাপারে তদন্ত শুরু করতে বলেছি। সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এই তদন্ত করতে গিয়ে অনেক সময় সত্যতা পাওয়া যায় অনেক সময় মোটিভেটেড খবরও পাওয়া যায়।

কোস্টগার্ড উপকূলীয় এলাকার মানুষের আস্থার প্রতীক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। সব অবৈধ কার্যক্রম, মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ, অস্ত্র ও মানবপাচার, চোরাচালান, জলদস্যুতা, অবৈধ মৎস্য আহরণ রোধসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম প্রতিহত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এই বাহিনী।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কোস্ট গার্ড সদর দফতরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কোস্টগার্ড দিবস-২০২৫ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দিয়ে সমুদ্র ও নদীপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় পতিত বিপদগ্রস্ত নৌযান ও নাবিকদের উদ্ধার কার্যক্রমও পরিচালনা করে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণ, মৎস্যজীবী এবং নৌযান মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজে এ বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কোস্টগার্ডের সদস্যরা বিপন্ন মানুষের জীবন রক্ষা এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষ অবদান রাখছে। সব মিলিয়ে কোস্টগার্ড উপকূলীয় এলাকার জনগণ তথা দেশের গণমানুষের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার কোস্টগার্ডের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের আধুনিকায়নে সম্প্রতি আর্মড বা বুলেট প্রুফ সুবিধা সম্বলিত হাই স্পিড বোট, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনসহ সার্ভেল্যান্স ড্রোন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া কোস্টগার্ডের জন্য আগামীতে হেলিকপ্টারসহ রেসকিউ ড্রোন ক্রয়েরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়েছে ১৭৯টি আধুনিক ও দ্রুতগামী জলযান যা বাহিনীটির আভিযানিক সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। নির্মিত হয়েছে বাসস্থান, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন। গভীর সমুদ্রে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের জাহাজগুলোতে স্থাপিত হয়েছে ভিস্যাটনেট সিস্টেম। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় ইনশোর প্যাট্রল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, টাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট কোস্টগার্ডের বহরে যুক্ত করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) আরও বলেন, সম্প্রতি কোস্টগার্ড বহরের পুরাতন ৯টি জাহাজের প্রতিস্থাপক হিসেবে দেশীয় শিপইয়ার্ডে ৯টি প্যাট্রোল ভেসেল নির্মাণের প্রকল্প সরকার অনুমোদিত হয়েছে। এই আধুনিক জাহাজগুলো বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বহরে সংযোজিত হলে এ বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একটি দক্ষ, আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে টেকসই অবদান রেখে চলেছে। উপদেষ্টা এ সময় দেশের সার্বভৌমত্ব, সমুদ্র ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রতিটি সদস্যকে সততা, দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান। তাছাড়া কোস্টগার্ডের যেসব সদস্য কর্মদক্ষতা ও বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন তাদের আন্তরিক অভিবাদন জানান।

অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, এ বছর কর্মদক্ষতা ও বিশেষ অবদানের জন্য ৪০ জন কোস্টগার্ড সদস্যকে পদক দেওয়া হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পরামর্শ

‘মব’ থেকে সতর্ক থাকুন

আপডেট সময় : ০৪:৩৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: একুশে বইমেলা, ভালোবাসা দিবসে ফুলের দোকানসহ দেশে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন জায়গায় ‘তৌহিদী জনতা’র নামে দল বেঁধে যে ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চাইলে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, কোন জনতা কিসের জন্য মব ক্রিয়েট করে ওগুলো আপনাদেরও দেখতে হবে।

দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা মবের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশকে ভালবাসতে হবে; দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে দেশের লাভকে দেখতে হবে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কোস্ট গার্ড দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

ওই সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল সরকার ‘ডেভিল হান্ট অপারেশন’ চালালেও ‘তৌহিদী জনতা’ নামের মব কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা সব জনতাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। শুধু এক ধরনের না বিভিন্ন রকমের জনতা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ক্রিয়েট করছে। সব জনতাকেই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের।

আমরা দুর্নীতি করলে প্রকাশ করে দেন: উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ভাষ্য, দুর্নীতি দূর হলেই দেশের উন্নতি হবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর যদি অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের দুর্নীতি করে থাকে, তাহলে সেই তথ্য প্রকাশ করে দিতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি সব জায়গায় গ্রাস করে নিয়েছে। দুর্নীতি কীভাবে কমানো যায় সেটা দেখতে হবে। দুর্নীতি কামানো গেলে সব সেক্টরে উন্নতি হবে। যদি আমরা দুর্নীতি করি তাহলে প্রকাশ করে দেন।

গেল ছয় মাসে দেশে দুর্নীতি অনেক কমেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারপরও এটা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি আরো দুর্নীতি কমাতে হবে।

আরাকান আর্মি প্রসঙ্গ: বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির আনাগোনা নিয়ে সরকারের নজরদারি কতটা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন আমাদের সঙ্গে মিয়ানমারের যে অঞ্চল আছে ওই এলাকায় বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জন্য কোস্টগার্ড ও বিজিবির কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু তারা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। উপদেষ্টা বলেন, পুরো বর্ডার এলাকা আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে কোন সমস্যা নেই। এখানে কোনো ধরনের সমস্যা নেই।

সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকায় ঢুকে কাউকে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আপনারা জানেন, আমাদের জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে সীমানা অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ করে ফেললে তখন এই ঘটনা ঘটে।

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও রোহিঙ্গা ইস্যু: পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর রোহিঙ্গাদের সহজে পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়া আমাদের অনেক আগের চিন্তাভাবনা। এটা জনগণের একটা ভোগান্তি থেকে রক্ষা করা হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে না যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। ন্যাশনাল আইডিই যেন রোহিঙ্গারা না পায় এজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আবার রিভিজিট করা হবে। যদি কেউ এরকম পেয়ে থাকে। আছে কিনা এটা সংখ্যা তো আমরা জানি না।

পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অ্যাকশন: পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না এবং পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা যত অফিসারকে আইনের আওতায় এনেছি, গত ৫৩ বছরে তা হয়নি। কোনো তথ্য পাওয়ামাত্র অ্যাকশনে যাওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা যেখানে অভিযোগ পাচ্ছি সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি। রিপোর্ট হওয়ার পর আমাদের তদন্ত করতে হয়। তদন্ত করতে গিয়ে সময় লাগে। অনেক সময় সত্যতা পাওয়া যায় আবার অনেক সময় মোটিভেটেড সংবাদও পাওয়া যায়। এজন্য যেটার সত্যতা পাওয়া যায় সেটাতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেমন আজকে একটি খবর দেখলাম, সঙ্গে সঙ্গে ওটার ব্যাপারে তদন্ত শুরু করতে বলেছি। সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এই তদন্ত করতে গিয়ে অনেক সময় সত্যতা পাওয়া যায় অনেক সময় মোটিভেটেড খবরও পাওয়া যায়।

কোস্টগার্ড উপকূলীয় এলাকার মানুষের আস্থার প্রতীক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। সব অবৈধ কার্যক্রম, মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ, অস্ত্র ও মানবপাচার, চোরাচালান, জলদস্যুতা, অবৈধ মৎস্য আহরণ রোধসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম প্রতিহত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এই বাহিনী।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কোস্ট গার্ড সদর দফতরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কোস্টগার্ড দিবস-২০২৫ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দিয়ে সমুদ্র ও নদীপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় পতিত বিপদগ্রস্ত নৌযান ও নাবিকদের উদ্ধার কার্যক্রমও পরিচালনা করে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণ, মৎস্যজীবী এবং নৌযান মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজে এ বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কোস্টগার্ডের সদস্যরা বিপন্ন মানুষের জীবন রক্ষা এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষ অবদান রাখছে। সব মিলিয়ে কোস্টগার্ড উপকূলীয় এলাকার জনগণ তথা দেশের গণমানুষের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার কোস্টগার্ডের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের আধুনিকায়নে সম্প্রতি আর্মড বা বুলেট প্রুফ সুবিধা সম্বলিত হাই স্পিড বোট, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনসহ সার্ভেল্যান্স ড্রোন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া কোস্টগার্ডের জন্য আগামীতে হেলিকপ্টারসহ রেসকিউ ড্রোন ক্রয়েরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়েছে ১৭৯টি আধুনিক ও দ্রুতগামী জলযান যা বাহিনীটির আভিযানিক সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। নির্মিত হয়েছে বাসস্থান, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন। গভীর সমুদ্রে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের জাহাজগুলোতে স্থাপিত হয়েছে ভিস্যাটনেট সিস্টেম। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় ইনশোর প্যাট্রল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, টাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট কোস্টগার্ডের বহরে যুক্ত করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) আরও বলেন, সম্প্রতি কোস্টগার্ড বহরের পুরাতন ৯টি জাহাজের প্রতিস্থাপক হিসেবে দেশীয় শিপইয়ার্ডে ৯টি প্যাট্রোল ভেসেল নির্মাণের প্রকল্প সরকার অনুমোদিত হয়েছে। এই আধুনিক জাহাজগুলো বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বহরে সংযোজিত হলে এ বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একটি দক্ষ, আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে টেকসই অবদান রেখে চলেছে। উপদেষ্টা এ সময় দেশের সার্বভৌমত্ব, সমুদ্র ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রতিটি সদস্যকে সততা, দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান। তাছাড়া কোস্টগার্ডের যেসব সদস্য কর্মদক্ষতা ও বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন তাদের আন্তরিক অভিবাদন জানান।

অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, এ বছর কর্মদক্ষতা ও বিশেষ অবদানের জন্য ৪০ জন কোস্টগার্ড সদস্যকে পদক দেওয়া হয়।