লাইফস্টাইল ডেস্ক : ‘ফ্যাড ডায়েট’ বাদ : কোমরের মাপ ঠিক রাখতে প্রতি বেলায় মেপে মেপে খাবার খাওয়া বরং বাড়তি মানসিক চাপ যোগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ হেলেন বন্ড’য়ের মতে, “অনেক ফ্যাড ডায়েটে নানান খাবার বাদ দিতে বলে যা খাওয়ার আনন্দ কমায় ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি পুষ্টির ঘাটতিও সৃষ্টি করতে পারে।”
সঠিক কার্বোহাইড্রেইট : স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইট মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই কার্বোহাইড্রেইট ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ হিসেবে মিশে শক্তি বাড়ায় ও মন ভালো রাখে। ধীরে কার্বহাইড্রেইট ছড়ায় এমন কয়েকটি খাবার হল- গমের পাস্তা, দানাদার ও বীজের রুটি এবং নানা রকমের সবজি যেমন- মিষ্টি আলু, ছোলা, মসুরের ডাল ও বেইক করা মটরশুঁটি।
পর্যাপ্ত প্রোটিন : প্রোটিনে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড যা মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান সৃষ্টির মাধ্যমে মন ভালো রাখে। এমনকি অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতেও সাহায্য করে। প্রতিবেলায় অল্প পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা উপকারী। খাবারে মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, ডাল, সয়া ধরনের খাবার, বাদাম ও বীজ-জাতীয় খাবার রাখা ভালো।
স্বাস্থ্যকর চর্বি : ২০ বছর আগে গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম চর্বি-জাতীয় খাবার খায় তাদের রাগ সহনীয় মাত্রায় বেশি। তাই স্বাস্থ্যকর পলিআনস্যাচুরেইটেড বা মনোস্যাচুরেইটেড চর্বি খাবার তালিকায় যোগ করা উপকারী।
বাদাম, বীজ, অ্যাভাকাডো, সবজির তেল ও জলপাইয়ের তেল এগুলো ভালো উৎস। কিছু হরমোন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চর্বি থেকে আসে এবং মস্তিষ্কের ৭০ শতাংশ চর্বি দিয়ে তৈরি। তাই খাবার তালিকায় স্বাস্থ্যকর চর্বি রাখা প্রয়োজন।
মাছ : ওমেগা-থ্রি পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট মস্তিষ্কের কোষ মেম্ব্রেন’কে নমনীয় করে এবং একে অপরের মাঝে যোগাযোগ উন্নত করে। ওমেগা-থ্রি চর্বি কম গ্রহণ করা মন খারাপের জন্য দায়ী। তৈলাক্ত মাছ যেমন- স্যামন, ম্যাকারল, ভেষজ চর্বি যেমন- তিসি, শণ ও ক্যানোলার তেল, আখরোট, শাক ইত্যাদি এর ভালো উৎস।
কোকোয়া : গবেষণা অনুযায়ী, কোকোয়াতে থাকা ফ্লাভানয়েড মন ভালো রাখতে ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। কোকোয়ার তিক্ততা কমাতে এতে ক্ষার যোগ করা হয়। ফলে এর ফ্লাভানয়েড হ্রাস পায়। তাই ফ্লাভানয়েডযুক্ত খাবার খেতে খাদ্য তালিকায় বেরি, আপেল, বাদাম ও মটর খাওয়া কার্যকর।
ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার : ভিটামিন বি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। স্নায়ু সুস্থ রাখে এবং ক্লান্তিভাব ও দুর্বলতা কমাতে সহায়তা করে। ভিটামিন বি১, বি২, নায়াসিন, বি৬ এবং ফোলাট ইত্যাদি ভিটামিন বি’য়ের প্রকার। গোটা শস্য, সবুজ সবজি, বাদাম, মাছ, কলা, আলু ও শুকনা খাবার ইত্যাদি ভিটামিন বি সমৃদ্ধ।
আঁশ : আঁশ-জাতীয় খাবার নানানভাবেই উপকারী। আঁশ নানান রকম পুষ্টি উপাদান যেমন- ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্র সুস্থ রাখার পাশাপাশি মন ভালো রাখতেও সহায়তা করে।
ভিটামিন ডি : ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হতাশা বাড়ায় ফলে মন খারাপ থাকে। রোদ থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা সম্ভব না হলে খাবারের মাধ্যমে তার ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করতে হবে।
জিঙ্ক : শামুক, গোটা শস্য, যকৃত, ভেড়ার মাংস, ডিমের হলুদ অংশ, বাদাম, কুমড়া ও তিসির বীজ ইত্যাদি উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে। দেহে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দিলে হতাশা, আগ্রাসিনভাব ও সহিংসতা বাড়ায়।
হলুদ : এই মসলা প্রদাহরোধী উপাদান সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বিভ্রাটসৃষ্টিকারী দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এতে থাকা কারকিউমিন মস্তিষ্কের ওমেগা-থ্রি চর্বির ডিএইচএ’য়ে মাত্রা বাড়ায় যা, উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।
‘রেড মিট’ বাদ দেওয়ার দরকার নেই : ‘রেড মিট’ ক্ষতিকর নয়, তবে তা অবশ্যই পরিমিত গ্রহণ করতে হবে। সপ্তাহে তিনবার পরিমিত রেড মিট গ্রহণ করা দেহে প্রয়োজনীয় আয়রন সরবরাহ করে যা দুর্বলতা কমায় ও মন ভালো রাখে। তবে প্রক্রিয়াজত মাংস খাওয়া দেহের জন্য কোনোভাবেই উপকারী নয়।
ক্যাফেইন গ্রহণে সতর্ক থাকা : ‘দ্যা ইউকে মেন্টাল হেল্থ চ্যারিটি মাইন্ড’ অনুযায়ী, ক্যাফেইন দেহে দ্রুত শক্তি বাড়ায় ঠিকই কিন্তু তা পরবর্তিতে উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ানোর পাশাপাশি ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্যও দায়ী। তাই ক্যাফেইন গ্রহণে সবসময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
পানি পান : তেষ্টা মিটাতে কফি বা অন্যান্য পানীয় নয় বরং সাধারণ পানি সবচেয়ে ভালো উপাদান। দৈনিক ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান দেহের পানির চাহিদা পূরণ করে। আর আর্দ্র রাখে। আর শরীর ভালো থাকলে মানসিক চাপও কম হয়।-
মন ভালো করার খাবার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ