ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

‘মন খারাপ’ হওয়ায় শিশুর ছুটির আবেদন ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

  • আপডেট সময় : ০১:০২:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
  • ৩৯০ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে এসব বিষয়কে নেগেটিভলি নেওয়া হয়। কিন্তু একটি অসুস্থতা। যার কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হয়। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এসব বিষয়কে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। তিনি বলেন, এটার জন্য ওই শিক্ষার্থীকে দায়ী করার পক্ষে নই আমি। আবেদনপত্রটি আমি দেখেছি। এখানে কোনও ভুল নেই। এ জাতীয় সমস্যা থেকে একসময় বড় সমস্যা হতে পারে। তার মন ভাল না থাকার পেছনে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। এর জন্য ছুটি মঞ্জুর করা একান্ত জরুরি। এগুলো নিয়ে হাস্যরসের কারণে অনেকে নিজেদের সমস্যার কথাটা তুলে ধরেন না। যেটি পরবর্তীতে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বেলাল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, এটাকে খারাপভাবে নেওয়ার কী আছে? সে যে সঠিক কথা বলেছে, এর জন্য সাধুবাদ। এটি বানানো কোনও পত্র কিনা, সেটি খতিয়ে দেখার দরকার আছে।
মারুফ হাসান নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন খারাপের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ট্রল হয়ে আসছে। সেটির কারণে হয়তো এটি নিয়ে হাস্যরস হচ্ছে। তবে এ আবেদন কেউ লিখে দিয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিনের মতে, মন খারাপের কথা উল্লেখ করে এই শিশু শিক্ষার্থীর ছুটির আবেদনকে সাহসী কাজ করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী যদি এ আবেদন সত্যিই করে থাকে তা খুব প্রশংসনীয়। সে খুব সাহসী কাজ করেছে। শিক্ষকদের উচিত ছিল এই শিক্ষার্থীকে কাছে এনে তার সমস্যাটা কী বুঝতে চেষ্টা করা। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতা, বিষণ্নতার কারণেও ছুটি পেয়ে থাকে। এই শিক্ষার্থীও একই কারণে ছুটি পেতে পারে।
শিশুদের মন খারাপের কথা শোনা ও তাদের কথা বলার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অধ্যাপক ড. মেহজাবিন বলেন, আমাদের সমাজে বাচ্চাদের কথা বলার সুযোগ খুব কম দেওয়া হয়। সবাই বলে চুপ থাকো, চুপ থাকো। তারা কথা বলতে না পারলে তাদের মনের মধ্যে অন্যকিছু কাজ করে। তাদের মনের মধ্যেও হতাশা, বিষণ্নতা থাকে। শারীরিক অসুস্থতার আগেও অনেকের মন খারাপ থাকতে পারে। এজন্য শিশুদের মন খারাপের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীর মন খারাপ থাকলে তা শিক্ষকদের শোনা উচিত। অনেক সময় বন্ধুদের বললে তারা তা গুরুত্ব দিয়ে দেখে না, মজার ছলে নেয়। এটা শিশুর মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য শিক্ষকদের উচিত শিশুদের কথা মন দিয়ে শোনা।
গত ৬ নভেম্বর শিশু শিক্ষার্থী মুহতাদীর ভাইরাল হওয়া সেই ছুটির আবেদনপত্রে প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখেছে, ‘জনাব বিনীত নিবেদন এই যে আমি আপনার বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার মন খারাপ থাকার কারণে আমি গত ৩/১১/২০২২ তারিখে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারিনি। অতএব বিনীত প্রার্থনা, এই যে আমাকে উক্ত একদিনের ছুটি মঞ্জুর করে বাধিত করবেন।’ পরে তার এই ছুটির আবেদনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘মন খারাপ’ হওয়ায় শিশুর ছুটির আবেদন ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

আপডেট সময় : ০১:০২:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে এসব বিষয়কে নেগেটিভলি নেওয়া হয়। কিন্তু একটি অসুস্থতা। যার কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হয়। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এসব বিষয়কে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। তিনি বলেন, এটার জন্য ওই শিক্ষার্থীকে দায়ী করার পক্ষে নই আমি। আবেদনপত্রটি আমি দেখেছি। এখানে কোনও ভুল নেই। এ জাতীয় সমস্যা থেকে একসময় বড় সমস্যা হতে পারে। তার মন ভাল না থাকার পেছনে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। এর জন্য ছুটি মঞ্জুর করা একান্ত জরুরি। এগুলো নিয়ে হাস্যরসের কারণে অনেকে নিজেদের সমস্যার কথাটা তুলে ধরেন না। যেটি পরবর্তীতে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বেলাল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, এটাকে খারাপভাবে নেওয়ার কী আছে? সে যে সঠিক কথা বলেছে, এর জন্য সাধুবাদ। এটি বানানো কোনও পত্র কিনা, সেটি খতিয়ে দেখার দরকার আছে।
মারুফ হাসান নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন খারাপের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ট্রল হয়ে আসছে। সেটির কারণে হয়তো এটি নিয়ে হাস্যরস হচ্ছে। তবে এ আবেদন কেউ লিখে দিয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিনের মতে, মন খারাপের কথা উল্লেখ করে এই শিশু শিক্ষার্থীর ছুটির আবেদনকে সাহসী কাজ করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী যদি এ আবেদন সত্যিই করে থাকে তা খুব প্রশংসনীয়। সে খুব সাহসী কাজ করেছে। শিক্ষকদের উচিত ছিল এই শিক্ষার্থীকে কাছে এনে তার সমস্যাটা কী বুঝতে চেষ্টা করা। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতা, বিষণ্নতার কারণেও ছুটি পেয়ে থাকে। এই শিক্ষার্থীও একই কারণে ছুটি পেতে পারে।
শিশুদের মন খারাপের কথা শোনা ও তাদের কথা বলার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অধ্যাপক ড. মেহজাবিন বলেন, আমাদের সমাজে বাচ্চাদের কথা বলার সুযোগ খুব কম দেওয়া হয়। সবাই বলে চুপ থাকো, চুপ থাকো। তারা কথা বলতে না পারলে তাদের মনের মধ্যে অন্যকিছু কাজ করে। তাদের মনের মধ্যেও হতাশা, বিষণ্নতা থাকে। শারীরিক অসুস্থতার আগেও অনেকের মন খারাপ থাকতে পারে। এজন্য শিশুদের মন খারাপের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীর মন খারাপ থাকলে তা শিক্ষকদের শোনা উচিত। অনেক সময় বন্ধুদের বললে তারা তা গুরুত্ব দিয়ে দেখে না, মজার ছলে নেয়। এটা শিশুর মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য শিক্ষকদের উচিত শিশুদের কথা মন দিয়ে শোনা।
গত ৬ নভেম্বর শিশু শিক্ষার্থী মুহতাদীর ভাইরাল হওয়া সেই ছুটির আবেদনপত্রে প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখেছে, ‘জনাব বিনীত নিবেদন এই যে আমি আপনার বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার মন খারাপ থাকার কারণে আমি গত ৩/১১/২০২২ তারিখে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারিনি। অতএব বিনীত প্রার্থনা, এই যে আমাকে উক্ত একদিনের ছুটি মঞ্জুর করে বাধিত করবেন।’ পরে তার এই ছুটির আবেদনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।