ঢাকা ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

মন্ত্রিত্বের পর দলীয় পদও খোয়ালেন মুরাদ, চাইলেন ক্ষমাও

  • আপডেট সময় : ০২:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে এক ‘জরুরি’ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ জানান। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, অগঠনতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকা-ে সম্পৃক্ততার অভিযোগে’ মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবারই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হবে বলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদে হারালেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে মুরাদের। সে বিষয়ে কেবল কেন্দ্রীয় কমিটিই সিদ্ধান্ত নিতে পরে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কেন্দ্রীয় কার্র্নিবাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে ‘নারীবিদ্বেষী’ মন্তব্য করে সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় পড়েন মুরাদ হাসান। এরপর একটি টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি মুরাদ হাসান। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন মুরাদ হাসান। সেখানে তিনি লেখেন, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ‘ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায়’ তিনি পদত্যাগ করতে চান।
জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।
২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ওই বছর মে মাসে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের খবরে তার নিজের নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে তার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী সে সমই জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় তাদের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেন তারা। মুরাদের প্রাথমিক সদস্যপদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।” দল থেকে বহিষ্কার হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে মুরাদের সংসদ সদস্য পদ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।”
ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ : ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ হাসান। নিজের কথায় ‘মা-বোনদের’ মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সে জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর নিজের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এই ক্ষমা চান। এর আগে দুপুরে ই-মেইলের মাধ্যমে নিজ দপ্তরে পদত্যাগপত্র পাঠান নারীদের নিয়ে বিভিন্নসময় কুরুচিকর মন্তব্যকারী ডা. মুরাদ হাসান। সম্প্রতি দেশের একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে অশালীন ও কুরুচিকর কথোপকথনটি সামনে এলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় শুরু হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। স্ট্যাটাসে মুরাদ হাসান লিখেছেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরতœ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নেব আজীবন।’
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে মুরাদের পদত্যাগপত্র : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনের পর তা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিধি শাখার একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যখনই তিনি (মুরাদ হাসান) পদত্যাপপত্র দিয়েছেন, তখন থেকেই ওই পদে আর নেই। প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে সবাইকে জানানো। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব মাহমুদ ইবনে কাসেম পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রে সই করে পাঠান ডা. মুরাদ হাসান।
জানা গেছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তাকে মঙ্গলবারের (৭ ডিসেম্বর) মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে মুরাদ হাসান ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো এ পদত্যাগপত্রে বলা হয়, ‘গত ১৯ মে ২০২১ (তিনি ভুল লিখেছেন, সালটি ২০১৯ হবে) স্মারকমূলে আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি অদ্য ৭ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।’
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এমতাবস্থায় আপনার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।’
আইনি ব্যবস্থা নেবে বিএনপি : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে জিয়া পরিবার নিয়ে ‘অশালীন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বক্তব্যের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার রাত ৮টায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সভায় অবৈধ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং জিয়া পরিবারের সদস্য বিশেষ করে নারী সদস্যদের নিয়ে যে চরম অশালীন, অরুচিকর বক্তব্য, তার সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শিষ্টাচারবিবর্জিত সম্মানহানিকর কুৎসিত বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা, নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়। সভা মনে করে, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল পদে থেকে এই ধরনের নারীবিদ্বেষী, বর্ণবাদী, সমাজবিরোধী বক্তব্য ও সংবিধানবিরোধী এই বক্তব্যের মাধ্যমে সমগ্র নারী-সমাজ এবং মানবতাকে হেয় করা হয়েছে।’ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় দাবি উঠেছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডা. মুরাদকে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং প্রকাশ্যে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অভিযোগ পেলে তবেই মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ: অডিও কেলেঙ্কারির সঙ্গে বর্ণ ও নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের অভিযোগের সমালোচনার মুখে থাকলেও এখনই মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপে যাচ্ছে না গোয়েন্দা পুলিশ। মুরাদকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তারকে প্রশ্ন করলে তিনি একথা জানান। তিনি বলেন, “কেউ যদি কোনো অভিযোগ দেন বা মামলা হয়, তাহলে আমরা দেখব। না হলে আমরা এটা নিয়ে এ মুহূর্তে ভাবছি না।” অডিও কেলেঙ্কারির ঘটনার পর চিত্রনায়ক ইমনকে ডিবি কার্যালয়ে দেখার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের খবর চাউর হয়েছিল। তবে হাফিজ বলেন, “ইমন তার ফেইসবুক নিয়ে কী সমস্যায় আছে, সে কারণে আমার জুনিয়র অফিসারদের কাছে গিয়েছিল।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্ত্রিত্বের পর দলীয় পদও খোয়ালেন মুরাদ, চাইলেন ক্ষমাও

আপডেট সময় : ০২:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে এক ‘জরুরি’ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ জানান। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, অগঠনতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকা-ে সম্পৃক্ততার অভিযোগে’ মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবারই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হবে বলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদে হারালেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে মুরাদের। সে বিষয়ে কেবল কেন্দ্রীয় কমিটিই সিদ্ধান্ত নিতে পরে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কেন্দ্রীয় কার্র্নিবাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে ‘নারীবিদ্বেষী’ মন্তব্য করে সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় পড়েন মুরাদ হাসান। এরপর একটি টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি মুরাদ হাসান। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন মুরাদ হাসান। সেখানে তিনি লেখেন, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ‘ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায়’ তিনি পদত্যাগ করতে চান।
জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।
২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ওই বছর মে মাসে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের খবরে তার নিজের নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে তার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী সে সমই জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় তাদের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেন তারা। মুরাদের প্রাথমিক সদস্যপদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।” দল থেকে বহিষ্কার হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে মুরাদের সংসদ সদস্য পদ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।”
ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ : ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ হাসান। নিজের কথায় ‘মা-বোনদের’ মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সে জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর নিজের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এই ক্ষমা চান। এর আগে দুপুরে ই-মেইলের মাধ্যমে নিজ দপ্তরে পদত্যাগপত্র পাঠান নারীদের নিয়ে বিভিন্নসময় কুরুচিকর মন্তব্যকারী ডা. মুরাদ হাসান। সম্প্রতি দেশের একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে অশালীন ও কুরুচিকর কথোপকথনটি সামনে এলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় শুরু হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। স্ট্যাটাসে মুরাদ হাসান লিখেছেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরতœ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নেব আজীবন।’
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে মুরাদের পদত্যাগপত্র : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনের পর তা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিধি শাখার একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যখনই তিনি (মুরাদ হাসান) পদত্যাপপত্র দিয়েছেন, তখন থেকেই ওই পদে আর নেই। প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে সবাইকে জানানো। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব মাহমুদ ইবনে কাসেম পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রে সই করে পাঠান ডা. মুরাদ হাসান।
জানা গেছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তাকে মঙ্গলবারের (৭ ডিসেম্বর) মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে মুরাদ হাসান ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো এ পদত্যাগপত্রে বলা হয়, ‘গত ১৯ মে ২০২১ (তিনি ভুল লিখেছেন, সালটি ২০১৯ হবে) স্মারকমূলে আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি অদ্য ৭ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।’
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এমতাবস্থায় আপনার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।’
আইনি ব্যবস্থা নেবে বিএনপি : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে জিয়া পরিবার নিয়ে ‘অশালীন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বক্তব্যের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার রাত ৮টায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সভায় অবৈধ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং জিয়া পরিবারের সদস্য বিশেষ করে নারী সদস্যদের নিয়ে যে চরম অশালীন, অরুচিকর বক্তব্য, তার সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শিষ্টাচারবিবর্জিত সম্মানহানিকর কুৎসিত বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা, নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়। সভা মনে করে, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল পদে থেকে এই ধরনের নারীবিদ্বেষী, বর্ণবাদী, সমাজবিরোধী বক্তব্য ও সংবিধানবিরোধী এই বক্তব্যের মাধ্যমে সমগ্র নারী-সমাজ এবং মানবতাকে হেয় করা হয়েছে।’ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় দাবি উঠেছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডা. মুরাদকে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং প্রকাশ্যে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অভিযোগ পেলে তবেই মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ: অডিও কেলেঙ্কারির সঙ্গে বর্ণ ও নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের অভিযোগের সমালোচনার মুখে থাকলেও এখনই মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপে যাচ্ছে না গোয়েন্দা পুলিশ। মুরাদকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তারকে প্রশ্ন করলে তিনি একথা জানান। তিনি বলেন, “কেউ যদি কোনো অভিযোগ দেন বা মামলা হয়, তাহলে আমরা দেখব। না হলে আমরা এটা নিয়ে এ মুহূর্তে ভাবছি না।” অডিও কেলেঙ্কারির ঘটনার পর চিত্রনায়ক ইমনকে ডিবি কার্যালয়ে দেখার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের খবর চাউর হয়েছিল। তবে হাফিজ বলেন, “ইমন তার ফেইসবুক নিয়ে কী সমস্যায় আছে, সে কারণে আমার জুনিয়র অফিসারদের কাছে গিয়েছিল।”