প্রত্যাশা ডেস্ক : আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ যেসব দল অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে আলোচিত অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন নানা কারণে বাতিল হয়ে গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেও অনেকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আলোচিত কয়েকটি আসনে কারা পেলেন মনোনয়ন, আর কাদের বাতিল হলো এখানে তুলে ধরা হলো।
ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের আরেক আলোচিত প্রার্থী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ঝালকাঠির দুটি আসনে সাতজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার প্রার্থীরা হলেনÑঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির, জাতীয় পার্টির এজাজুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসমাইল হোসেন, নুরুল আলম, ব্যারিস্টার আবুল কাশেম মো. ফকরুল ইসলাম। ঝালকাঠি-২ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দীন ইমরানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠানে আলোচিত প্রার্থী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর এসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করে চলে যান। ঝালকাঠি-১ আসনে ১১ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জন ও ঝালকাঠি-২ আসনে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলো। অপরদিকে ঝালকাঠি-২ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিরণ ও বিকল্পধারার মান্নানের মনোনয়ন বাতিল: ঋণখেলাপির অভিযোগে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রোববার দুপুরে নোয়াখালীর ছয়টি আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ তথ্য জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরণ এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। এ আসনে বৈধ প্রার্থী হয়েছেন- জাকের পার্টির মো. বাহার উদ্দিন, স্বতন্ত্র মিনহাজ আহমেদ, স্বতন্ত্র ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. সুমন আল হোসাইন ভূঁইয়া।
মাহি বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুজাফর রিপন। ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে
এদিকে, এই আসন থেকে আরও দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবির এবং বিএনএম প্রার্থী ফরিদ হোসেন। রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকালে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম পর্বে সংসদীয় এই আসনের ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোটার তালিকা গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবিরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বিকল্পধারার প্রার্থী মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মনোনয়ন ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে বাতিল হয়। বিএনএম প্রার্থী ফরিদ হোসেনের মনোনয়নপত্রে সমর্থনকারী স্থানীয় নয় এ কারণে বাতিল করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল, বৈধ কল্যাণ পার্টির ইবরাহিমের: ঋণখেলাপি হওয়ায় কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এখানে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী হোসনে আরা, ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম ও জাফর আলমের ছেলে তানভির আহমদ সিদ্দিকী।
অধ্যাপক আনোয়ার, শফী আহমেদসহ নেত্রকোনায় ১৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের নেতা শফী আহমেদসহ ১৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। গতকাল রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজের কার্যালয়ে নেত্রকোনার পাঁচটি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। মোট ৩৬ জনের মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের পর ৭ জন স্বতন্ত্রসহ ১৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তাঁরা ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে এ ব্যাপারে আপিল করতে পারবেন।
ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডিআইজির ভাইয়ের মনোনয়নপত্র বাতিল: চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকায় এটি বাদ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা এ কে এম গালিভ খাঁন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের ভাই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ার জন্য সম্প্রতি তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
হিরো আলমের প্রার্থিতা বাতিল, হাইকোর্টে যাওয়ার ঘোষণা: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের। আগের নির্বাচনগুলোতে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও এবার তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে একাধিক ভুল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। গতকাল রোববার বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। হিরো আলম এবার বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত জাতীয় জোটের গণঅধিকার পার্টি (পিআরপি) থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আশরাফুল হোসেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েও মনোনয়নপত্রে নিজেকে স্বতন্ত্র দাবি করেছেন। সেই ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মোট ভোটারের এক শতাংশ সমর্থন ফরমও তিনি জমা দেননি। মনোনয়নপত্রের হলফনামায় আশরাফুল হোসেন সম্পদের বিবরণী জমা দেননি। এছাড়াও তিনি মনোনয়নের হলফনামাতে স্বাক্ষরই করেননি। এজন্য আশরাফুল হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলো। রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশ উঠিয়ে আশরাফুল হোসেন আগামী ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বরে মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারবেন।
আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বলেন, আমার মনোনয়ন বাতিল নতুন কিছু নয়। আমি আপিল করবো। প্রয়োজনে আবারও হাইকোর্টে যাবো। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকবোই।
ক্রেডিট কার্ডের টাকা না দেওয়ায় ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল: পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. আসাদুজ্জামান তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানান মু. আসাদুজ্জামান। এ বিষয়ে ডলি সায়ন্তনী বলেন, কার্ডের বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। বিষয়টি আমি দ্রুত সমাধান করে আপিল করবো।
মাশরাফির আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল: মাশরাফি বিন মর্তুজার আসনে (নড়াইল-২) প্রার্থীদের দাখিল করা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে মাশরাফিসহ বাকি ৭ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে জেলা প্রশাসক ও রির্টার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী এ ঘোষণা দেন।
মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র বাতিল, করবেন আপিল: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে মাহির জমা দেওয়া এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকায় ‘ভুয়া স্বাক্ষর’ পাওয়ার অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিলের কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের তালিকা জমা দিতে হয়। এর মধ্যে চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়ার তালিকায় তিনটি নমুনা ভোটারের তথ্য পাওয়া যায়নি। আর একজন ভোটার নয়। তালিকায় ললিতা মান্ডি নামের একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলের ভোটার।
মনোনয়নযুদ্ধে জয়-বিজয়
ট্যাগস :
মনোনয়নযুদ্ধে জয়-বিজয়
জনপ্রিয় সংবাদ