নিজস্ব প্রতিবেদক : মধ্যরাতে নিজ বাসা থেকে সাব্বির ও বাবু নামে সংবাদসংস্থা বাংলা ট্রিবিউনের দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের থানায় নেওয়া হয়। ছিনতাইকারী হিসেবে আসামি করে মামলা দেওয়া হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায়। অন্তর নামে এক ছিনতাইকারীর বক্তব্যের জেরে সাব্বির ও বাবুকে গ্রেফতার দেখানো হলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে পাওয়া যায়নি কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা।
মো. সাব্বির ও মো. বাবুর স্বজনরা জানান, শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার পর মোহাম্মদপুর থানা এলাকার রায়ের বাজারের বাসা থেকে তাদের ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ। এস আই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে ছিনতাইকারী হিসেবে মামলা দেয়। গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর সাব্বির ও বাবুকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ সংবাদসংস্থাটিকে বলেন, ‘অন্তর নামে এক ছিনতাইকারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আগে কোনও অভিযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে আর কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’
অভিযোগ যাচাই না করে এরকম গ্রেফতারের আইনগত ভিত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন বলেন, ‘দেশের মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের এই দায়িত্ব পালনে পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। তাই পুলিশকে জনগণের বন্ধুও বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে কোনও কোনও পুলিশের কৃতকার্যে ভুক্তভোগীসহ অনেকেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যদিও যৌক্তিক কারণে এবং আইনগতভাবে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গৃহ তল্লাশিসহ তাকে গ্রেফতার এবং নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাও দায়ের করতে পারে। কিন্তু ওই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করলে বা অসত্য বর্ণনায় কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হলে পুলিশের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৬৬, ৪২৭, ৩৯২ ও ৩৯৫ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার ভুক্তভোগী বা সংশ্লিষ্ট পরিবারের রয়েছে।’
বিনা পরোয়ানায় মধ্যরাতে কোনও ব্যক্তিকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আটক করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম। ওপরের ঘটনা বিবেচনায় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে অভিযোগে আটক করা হয়েছে সেটি এমন কিছু নয়, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা অখ-তাকে বিঘিœত করেছে। অথবা হত্যা বা ধর্ষণের মতো অপরাধের কথাও পুলিশের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এই দুই জন চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অভ্যাসগত অপরাধে সম্পৃক্ত হলে তাদের তালিকা পুলিশের কাছে থাকার কথা। অভ্যাসগত অপরাধী হলে পূর্ববর্তী কোনও মামলা বা অভিযোগ থানায় থাকতো।’
আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে আগেই তদন্ত করে মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার করা উচিত ছিল। এ ঘটনাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের বক্তব্য জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। তার ওপর গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই জন কর্মীকে এভাবে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা যাচাই করা উচিত। এই ঘটনায় কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ বা লোভ জড়িত থাকলে তার বিচার হওয়া উচিত।’
মানবাধিকার সংগঠন সিসিবি ফাউন্ডেশনের পরিচালক অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে যেটুকু জেনেছি, তাতে মনে হচ্ছে যুক্তিযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই সাব্বির ও বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেবল অন্য আসামির মৌখিক বক্তব্যের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে আরও তদন্ত করে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া পুলিশের কাছে কোনও আসামির স্বীকারোক্তির কোনও সাক্ষ্য মূল্য নেই। মামলায় নাম না থাকলেও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দিতে অন্য কোনও আসামির নাম এলে এবং তাকে গ্রেফতার করা হলে তা আইনসিদ্ধ হবে। অন্যথায় নিরীহ নাগরিককে অযথা হয়রানি করলে পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’
মধ্যরাতে তুলে ছিনতাইয়ের মামলা নিয়ে প্রশ্ন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ