নিজস্ব প্রতিবেদক : মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক ভিসায় লোক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে শতশত মানুষকে প্রতারিত করেছে একটি চক্র। তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তারা প্রথমে এক থেকে দুই লাখ টাকা নিতো। বাকি টাকা বিদেশে পৌঁছোনোর আগে ব্যাংক থেকে লোন করে দেওয়া হবে বলে প্রলোভন দেখানো হতো। পরবর্তীতে ভুয়া বিমান টিকিট, ভিসা ও করোনার ভ্যাকসিন কার্ড তৈরি করত। কিন্তু বিমানবন্দরে গিয়ে বিদেশ গমনকারীরা জানতে পারতেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। এসময় ভুক্তভোগীর অফিসে গিয়ে দেখতেন চক্রটি অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অফিস নিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটির মূলহোতাসহ দুইজনকে আটক করেছে এলিট ফোর্স র্যাব। গত বুধবার রাতে রাজধানীর ভাটারার বারিধারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটকেরা হলেন- মো. সুজন শেখ ও মো. আমিনুল ইসলাম রনি। এসময় ১৩৮টি পাসপোর্ট, তিনটি মোবাইল ফোন, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রবাসে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটাকে পুঁজি করে সংঘবদ্ধ চক্র বিদেশে কর্মসংস্থানের আশ্বাসে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। এমন অভিযোগে বুধবার রাতে দুইজনকে আটক করা হয়। কমান্ডার মঈন জানান, গ্রেপ্তার দুইজন সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। সুজন শেখ এই দলের মূলহোতা এবং আমিনুল তার অন্যতম সহযোগী। দীর্ঘ দুইবছর ধরে তারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। চক্রে ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করেছে। তারা সাধারণত গার্মেন্টস, কারখানা, ড্রাইভার, সিএনজি চালক, গৃহকর্মী এসব শ্রেণির কর্মজীবীদের টার্গেট করত। বিদেশে গেলে দেশে উপার্জনের চেয়ে দুই-তিনগুন বেতন বেশি বলে আশ্বস্ত করত। এছাড়া স্বল্প খরচে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখাত। চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হবে ভুক্তভোগীদের জানাতো। যেতে রাজি হলে প্রথমে এক থেকে দুই লক্ষ টাকা নেওয়া হতো। বাকি টাকা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিত। এতে সকলে প্রলুব্ধ হতো। নগদ যেই টাকা নেওয়া হতো তা নিয়ে পরবর্তীতে অফিস পরিবর্তন করে ফেলতো। এভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা : চক্রটি সাবলেটে বিভিন্ন জায়গায় অফিস ভাড়া নিত। এতে অফিস ভাড়া কম হত এবং সহজেই অফিস পরিবর্তন করতে পারত। তারা প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বা বায়রার ওয়েব সাইট দেখে বিভিন্ন অনুমোদিত রিক্রুটিং কোম্পানির নাম ব্যবহার করত। ওসব রিক্রুটিং কোম্পানির নামে ভিজিটিং কার্ড, স্টাম্প ও অন্যান্য নথিপত্র বিদেশে গমন ইচ্ছুকদের দেখিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করত।
কে এই সুজন : র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার সুজন জানিয়েছে তিনি ১৫ বছর ধরে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মালিবাগ, কাকরাইলে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকরি করেছেন। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার কৌশল নেয়। অন্যদিকে গ্রেপ্তার আমিনুল ২০০১-২০১৫ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ছিলেন। তার প্রবাস জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে। এতে তার কথাবার্তায় সাধারণ মানুষ সহজেই আকৃষ্ট হতো এবং পরবর্তীতে প্রতারিত হত।
মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর নামে প্রতারণা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ