কক্সবাজার প্রতিনিধি : মজুদ থাকা সত্ত্বেও সরকার লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন কক্সবাজারের চাষিরা; বলেছেন তাদের দুশ্চিন্তার কথা। তবে আমদানির সিদ্ধান্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারের কর্মকর্তারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিসিকের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় সোমবার বিকালে চাষিরা এই প্রশ্ন তোলেন। সভায় দেশে লবণ চাষ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দেন বিসিক কর্মকর্তারা।
বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, গত বছর উৎপাদিত লবণ মাঠে ও কারখানায় এখনও তিন লাখ চার হাজার মেট্রিকটন মজুদ রয়েছে। মাঠপর্যায়ে আছে এক লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিকটন আর কারখানা পর্যায়ে এক লাখ ৪১ হাজার মেট্রিকটন। এই লবণ দিয়ে অন্তত তিন মাস দেশের চাহিদা পূরণ করা যাবে।
অন্যদিকে আর কিছুদিন পরেই চলতি মৌসুমে মাঠে উৎপাদিত লবণ বাজারে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বিসিক কর্মকর্তা বলেন, নতুন লবণ আসার আগ পর্যন্ত মজুদ লবণ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় লবণ উৎপাদিত হয়। প্রতিবছর কমবেশি ৬০ হাজার একর জমিতে নভেম্বর থেকে মধ্য মে লবণ চাষের মৌসুম। এ সময় উৎপাদিত লবণ দিয়ে দেশে সারা বছরের চাহিদা পূরণ করা হয়।
বিসিক কর্মকর্তা বলেন, “আবহাওয়া প্রতিকূলে হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হয়।”
সভায় উপস্থিত চাষিরা বলেন, মজুদ থাকার পরও লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবেন।
জেলার ঈদগাঁও উপজেলার গোমাতলী গ্রামের লবণ চাষি রেজাউল করিম সুজন বলেন, “এমনিতেই সিন্ডিকেটের কারণে মাঠপর্যায়ে লবণ চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাছাড়া শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছর উৎপাদন খরচ বেড়ে চলছে। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
তিনি মজুদ থাকা সত্ত্বেও লবণ আমদানি না করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকের লবণ চাষি আব্দুল করিম বলেন, দাম কম হওয়ায় তার গুদামে পাঁচ মেট্রিকটন লবণ মজুদ রয়েছে। তাই চলতি মৌসুমে লবণ চাষের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।
“এখন চলতি মৌসুমের শুরুতেই সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলে চাষিদের মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”
আব্দুল করিম বলেন, গত বছর ১৫ একর জমিতে লবণ চাষ করলেও চলতি মৌসুমে তিনি ১০ একর চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই অনুয়ায়ী প্রস্তুতি চলছে।
“এরই মধ্যে সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।”
লবণ আমদানির প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক।
সভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “মাঠে ও মিল পর্যায়ে এখনও গত বছর উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ লবণ মজুদ রয়েছে। এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির অনুমতি দিলে সেই লবণ যখন দেশে এসে পৌঁছাবে ঠিক তখন চলতি মৌসুমে দেশে উৎপাদিত লবণও বাজারে আসবে। বাজার সয়লাব হয়ে যাবে।”
তিনি লবণের চাহিদা ও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনা করে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যেহেতু এখন লবণ উৎপাদনের মৌসুম, চাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা হবে। যদি ঘাটতি বা সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
মজুদ সত্ত্বেও লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত, দুশ্চিন্তায় চাষি
ট্যাগস :
মজুদ সত্ত্বেও লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত
জনপ্রিয় সংবাদ