নিজস্ব প্রতিবেদক : রাশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম এই পাঁচ দেশ থেকে খাদ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি হয়েছে।
গতকাল রোববার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা চেক করে নিয়েছি রাশিয়া থেকে খাদ্য আমদানি করলে কোনো রকমের অসুবিধা হবে না। মিয়ানমার থেকে আসছে আতপ চাল। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং ভারত থেকেও চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, দু-একদিনের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় খাদ্যের বিষয়ে ব্রিফ করবে। তারা আজ আমাদের জানিয়েছেন, ১৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনের মতো খাদ্য মজুত আছে।
করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে ‘যেকোনও কিছুর বিনিময়ে’ খাদ্যের মজুত বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এ নিয়ে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। তাই এ নিয়ে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুতের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চাল আমদানির জন্য যাদের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফেল করতে পারে। এজন্য আগেই কিছু বিকল্প অর্ডার দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। তবে এবছর নভেম্বরে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিও নভেম্বর পর্যন্ত চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
‘সম্প্রতি চালের দাম ৪-৫ টাকা কমেছে ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কারণে। ফলে একটা বড় সংকট মার্কেট থেকে সরে গেছে। অ্যাপারেন্টলি দেখা যাচ্ছে এটি একটি ভালো ফল দিচ্ছে। যেহেতু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আগামী দুই মাস বা পরে আরও দুই মাস…। তিন-চার মাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের প্রয়োজন হবে’ যোগ করেন তিনি।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজকের সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, অলরেডি এটা রিপ্লেস করার মতো চুক্তিও করেছে এবং ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আগামী নভেম্বর থেকে আমরা যে চিন্তা করছি একটা খাদ্য সংকট হতে পারে বিশ্বব্যাপী, আল্লাহর রহমতে আমরা একটা কমফোর্টেবল সিনারিও পেয়েছি। আমাদের ওয়ার্ক অর্ডার এবং খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা এসেছে। রাশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে চাল ও গম নিশ্চিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমদানির পাশাপাশি আমনও চলে আসবে। আমন কম হলেও একটা বড় পোরশন (অংশ) আসবে। সবমিলিয়ে খাদ্য সিনারিওটা আল্লাহর রহমতে কমফোর্টেবল হবে। তারপরও দু-একটা জায়গা থেকে খাদ্য ব্যবস্থা করে রাখতে বলা হয়েছে। কোনো রকমের চান্স নেওয়া যাবে না। কোনো কারণে ধরেন দু-একটা ওয়ার্ক অর্ডার ফেল করে, তাহলে অল্টারনেটিভলি অন্য জায়গা থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে আমাদের মজুত ঠিক রাখা যায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে পরিমাণ খাদ্য আমাদের গোডাউন থেকে যাবে, সে পরিমাণ খাদ্য এবং সেফটির জন্য আরও এক্সেস (অতিরিক্ত) কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন যে চুক্তি বা এমইউ হয়েছে তার জন্য আর সর্টেজ (খাদ্য সংকট হবে না) হবে না আল্লাহর রহমতে। প্রধানমন্ত্রী খাদ্যের বিষয়ে কী বলেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) স্পেসিফিক্যালি (নির্দিষ্টভাবে) বলেছেন, আমরা যে খাদ্য রিপ্লেসমেন্ট করছি শুধু সেটার ওপর নির্ভর করা যাবে না। আমরা কমফোর্টেবল সিজন থাকলে আরও দু-একটা জায়গা থেকে খাদ্য কেনার ইনিশিয়েটিভ (উদ্যোগ) নেওয়া হোক। কোনো কারণে আল্লাহ না করুক চার বা পাঁচজনের মধ্যে কেউ যদি বলে আমি দিতে পারবো না, তখন যাতে আমরা ঝামেলায় না পড়ি। সুতরাং প্রয়োজন হলে এক্সেস কিছু খাদ্য কেনা, এটা আমাদের জন্য কমফোর্ট সিনারিও হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, আপনারা সবাই জানেন বৃষ্টি বা পানিটার সর্টেজে একটা ইফেক্ট (প্রভাব) পড়বে আমনে। তবে আমি নিজে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেস্বর) ১২-১৩ জন ডিসির সঙ্গে কথা বলেছি, সিলেট থেকে শুরু করে নর্থবেঙ্গল পর্যন্ত। তারা বলেছেন, সম্প্রতি যে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ থাকবে, সেটা থাকছে। সেটার কারণে আমনের সেচ ভালো হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় একটু সমস্যা হচ্ছে হয়তো, খাল-বিলে পানি একটু কম। তবে সুবিধা হলো, যেখানে খাল-বিলে পানি কম, সেখানে টি-আমনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
‘সংবাদপত্রে পদ্মা সেতু’ গ্রন্থ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন তথ্যমন্ত্রী : পদ্মা সেতু নিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ নিয়ে বই প্রকাশ করেছে তথ্য অধিদফতর (পিআইডি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সেই বই তুলে দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে তথ্যমন্ত্রী হাছান বইটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংকলন করে সাত খ-ে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।
মজুদ বাড়াতে পাঁচ দেশ থেকে খাদ্য আমদানি হবে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ