নিজস্ব প্রতিবেদক : খাদ্যশস্য মজুতে সরকার এখনও স্বস্তির জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারের বোরো সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তবে সেটিও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারছে না। এই সুযোগটি নিচ্ছে চালের বড় ব্যবসায়ীরা। ফলে বোরোর ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বোরো এবং এবার আমনে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শতভাগ সফল হয়নি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি শতভাগ সফলতা আনতে মাঠে কাজ করছে সরকার। এ জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবারের চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন ধান এবং সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন চালসহ মোট ১৮ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। খাদ্য অধিদফতর ৭ মে বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। খাদ্য অধিদফতরের এ কার্যক্রম চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি বোরো ধান কেনা হচ্ছে ২৭ টাকা কেজি দরে। আর মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৯ টাকায় আতপ চাল কেনা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার দুই কোটি পাঁচ লাখ টন বোরো ধানের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব গুদামে ২৪ মে পর্যন্ত মজুত খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চাল ও ধান মজুতের পরিমাণ ৭ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে চাল মজুত আছে ৫ লাখ মেট্রিক টন এবং গম মজুতের পরিমাণ ২ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন খাদ্যশস্যের এ মজুত সন্তোষজনক নয়। সরকারি গুদামে কমপক্ষে ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য থাকলে তা সন্তোষজনক বলা যায়। সরকারের খাদ্যশস্য মজুত পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরাই অসন্তুষ্ট। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বর্তমান খাদ্য মজুতকে আশঙ্কাজনকভাবে কম বলেছেন। তিনি দ্রুত মজুত বাড়ানোর তাগিদ দেন। একই সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, খাদ্যশস্যের মজুত কমপক্ষে ১০ লাখ টন থাকা উচিত। ১০ লাখ টনের কম খাদ্য মজুত সরকারের জন্য অস্বস্তিকর। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকারের সন্তোষজনক মজুত পরিস্থিতি না থাকায় বাজারে চালের দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছর আমন ও বোরোর উৎপাদন কম হওয়া, সরকারি মজুত কমে যাওয়া এবং করোনার কারণে খাদ্যশস্যের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গরিবের মোটা চাল নামে পরিচিত গুটিস্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে। স্বাভাবিক নিয়মে মোটা জাতের এই গুটিস্বর্ণা চালের কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা ও নাজিরশাইলের কেজি উঠেছে ৭২ টাকায়। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ (মিনিকেট রশিদ) জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর সরকার চালের ভালো দাম দিয়েছে। আমরা সরকারকে এ বছর হয়তো ভালো পরিমাণে চাল দেবো। হয়তো এ বছর সরকার বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারবে। তবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী জানান, সরকারের নির্ধারণ করা প্রতিকেজি ধানের দাম ২৭ টাকা হলে এক কেজি চালের উৎপাদন খরচ দাড়ায় ৪২ টাকা। সেক্ষেত্রে আমরা ৪০ টাকা কেজি দরে চাল সরকারকে দেবো কীভাবে? লায়েক আলী জানিয়েছেন, বর্তমানে কাঁচা ধানের মণ ৯০০ টাকা। এই ধান শুকালে ৪০ কেজির স্থলে নিট ওজন দাঁড়ায় ৩০ কেজি। সেক্ষেত্রে এক মণ শুকনো ধানের দাম দাড়ায় ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা। বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, বাজারে চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের মজুত বাড়ানোর কোনও বিকল্প নাই।