নিজস্ব প্রতিবেদক : মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আংশিক ধসে পড়া রাখি নীড়ের নিখোঁজ তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ হাওলাদারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে। ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, উনার মেয়ে বলেছিলেন ‘আব্বা মিসিং’। ৃ বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ সিঁড়ির কাছে চিলেকোঠার ডেব্রিজ যেখানে তার নিচে চাপা পড়া অবস্থায় পেয়েছি।”
দুদিন আগের ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এ নিয়ে মোট আটজনের মৃত্যু হল। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও তিনজন।
হারুন অর রশিদের মেয়ে হেনা বেগম বলেন, গত রোববার ওই বিস্ফোরণের পর থেকে তার বাবার খোঁজ মিলছিল না। সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও বাবাকে না পেয়ে তিনি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের জানান। মঙ্গলবার বিকালে উদ্ধারকর্মীরা লাশ উদ্ধারের পর হেনা বেগম তার বাবাকে শনাক্ত করেন।
ভয়াল ওই বিস্ফোরণে নিহত অন্যরা হলেন- কলেজ শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), প্রাইভেটকারচালক স্বপন (৩৯), বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন (৩০), ভবনের নিচতলায় থাকা শর্মা হাউজের পাচক ওসমান গনি তুষার (৩৫), সেখানে খেতে যাওয়া জান্নাত বেগম (২৩) এবং তার নয় মাসের মেয়ে সোবহানা।
গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকা কেঁপে ওঠে। তাতে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা রাখি নীড়ের ধসে পড়ার দশা হয়। বিস্ফোরণের ধাক্কায় রাস্তার উল্টো দিকে আড়ং, বিশাল সেন্টার, নজরুল শিক্ষালয়, রাশমনো হাসনপাতালসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় থাকা তিনটি বাস ও যাত্রীরা। তিনতলা ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। বিস্ফোরণে ওই বিক্রয় কেন্দ্রের দেয়াল ভেঙে পণ্যের কার্টন বেরিয়ে পড়তে দেখা যায়। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মোটামুটি মিশে গেছে। লোহার গ্রিল, আসবাবপত্র, ভবনের বিভিন্ন অংশ ছিটকে যায় রাস্তায়। ওই ঘটনায় আহত হন চার শতাধিক, তাদের বেশিরভাগই সে সময় রাস্তায় বা আশপাশের ভবনে ছিলেন। তাদের অধিকাংশই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া কাচে আহত হন। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, তিনতলা ওই ভবনে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। সোমবার ধ্বংসস্তূপের বাতাস পরীক্ষা করে হাইড্রোকার্বন গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে কেন, কীভাবে ওই বিস্ফোরণ ঘটল, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু কেউ বলেননি। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পাশের একটি ভবন হেলে পড়েছে : মগবাজারের ভয়াল বিস্ফোরণস্থলের পাশের আরেকটি দোতলা ভবন হেলে পড়েছে; যেটিকে বিপদজনক ঘোষণা করে ভেতর থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার বলেন, “বিস্ফোরণস্থলের পূর্ব পাশের দোতলা ভবনটি হেলে পড়েছে বলে জানিয়েছে কারিগরি কমিটি। “চোখে দেখেও বোঝা যায় ভবনটি একটি বিদ্যুতের পিলারের উপর হেলে রয়েছে। ভবনটিকে বিপদজনক ঘোষণা করে ভেতর থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে।” তিনি জানিয়েছেন, বিকেলের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা ভবনটিকে ঘিরে ভ্রাম্যমাণ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে বিপদজনক ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেওয়া হবে। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মালিককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হবে। এদিকে আতঙ্ক জাগানো এই বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় ‘অবহেলার’ অভিযোগ এনে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রমনা থানার এসআই রেজাউল করিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান।
মগবাজারের ধ্বংসস্তূপে মিললো তত্ত্বাবধায়কের লাশ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ