ঢাকা ০৬:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

‘ভ্রƒণ হত্যা খুনের শামিল’

  • আপডেট সময় : ১১:১২:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
  • ১৬১ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : বাবা, মা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। নির্ভরতার এক কেন্দ্রবিন্দু। নির্ভয়ে সম্মুখ দিকে পথ চলার চালিকা শক্তি। পরম মমতায়, ভালবাসায়, স্নেহ, শাসনে এই বাবা-মা তাদের সন্তান বেঁচে থাকার উপজীব্য করে তুলে। বহুবিধ বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সন্তানদের বেঁচে থাকার সাহসিকতা যোগায় বাবা-মা।
ঘটনা সাপেক্ষে আবার উপরোক্ত বাক্যদ্বয়ের কিছুটা বিচ্যুতি ঘটে। কখনো দায়িত্বহীনতা, অবহেলায় সম্পর্কের প্রকৃত চিত্রের রূপরেখার ব্যাপ্তিতে ফাটল ধরায়। আবার কখনো বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ সন্তানদের এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক সত্য ঘটনায় আমাদের অনেকাংশকে আলোড়িত করেছিল। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানের জিম্মা এক আইনগত পদক্ষেপ। আইনের সুস্পষ্ট বিধান ও নিদের্শনা অনুসারে কোনো বিবাহিত দম্পতির বিচ্ছেদের পর তাদের সন্তানদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত জিম্মাদার হলো তাদের মা। বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া এই জাতীয় সন্তানদের আইনগত অভিভাবক হয় তাদের মা। কোনো কারণে মা যদি আইনগত অভিভাবক হতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়, তার অবর্তমানে কে বা কারা আইনগত অভিভাবক হবে সে বিষয়ে আইনে স্পষ্টত নিদের্শনা আছে। জনশ্রুত হয়েছে যে এক বিবাহিত দম্পতির দাম্পত্য জীবন অবসানের পর তাদের সন্তানদের জিম্মার প্রশ্নে বাবা-মা দুজনই তাদের কন্যা সন্তানের জিম্মা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই সময়ে কন্যা সন্তানটির মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা কতটা ধূসর হয়েছিল তা চিন্তাতীত।
দিনান্তে কন্যা পৌঁছেছে পরিণত বয়সে। আজ তার বাবা-মা বয়সের কাছে নতুজানু অসহায় বৃদ্ধ। যেন জীবনের ভারে নুয়ে পড়েছে। সেদিন তার বাবা-মা পুত্র সন্তানের দায়িত্ব নিলেও কন্যার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃত জানিয়েছিল। বাবা-মায়ের বৃদ্ধ, বয়স্ক অবস্থায় পুত্র আজ সুপুত্রের পরিচয় দেয়নি। তাই সেই বাবা-মা’র ঠিকানা আজ বৃদ্ধাশ্রম। এবার সেই কন্যাটি বাবা-মায়ের সুকন্যার পরিচয় দিল। কন্যাটি বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিজ আশ্রয়ে তুলে নিল। পরম শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় নিজেকে ভাগ্যবতী ভেবে বাবা-মাকে নিজ ছায়ায় ফিরিয়ে এনেছে। দুঃখভারে ক্লান্ত কন্যা ব্যথিত অন্তরে বলেছিল , বাবা-মা তো, তারা মুখ ফিরাতে পারলেও আমি পারিনি।
এমন অসংখ্য কন্যা আমাদের ঘরে ঘরে। পরিবর্তিত সময়ে ও অনেক কন্যা শিশু নিজ পরিবারে নিগৃহীত, বঞ্চিত, শোষিত। কন্যা সন্তানের প্রতি স্থূল রুচির পরিচয়ে প্রকারান্তরে পুত্রকে বৈষম্যের বটমূল শিখায় পরিবার। তাই এই সব পুত্রই তার নিজ বোন, মা ও পরিণত বয়সে নিজ স্ত্রীর সাথে হেয় আচরণ করে। সেই পুত্র কিশোর বেলায় ইভটিজিং এর মতো গর্হিত আচরণ করে। আবার কখনো কারো প্রাণনাশের কারণ হয়। সমান গুরুত্ববহতা নিয়ে প্রতিটি শিশু বড় হোক। বৈষম্যের আচরণ নয়, মানবিক মূল্যবোধে পরিবার-পরিজন প্রত্যেক শিশুর প্রতি যত্নশীল হোক। কন্যা বা পুত্র নয়, সন্তান হিসেবে প্রতিটি শিশু লালিত পালিত হোক। তারপর ও পাশবিক আচরণ রোধে উচ্চ আদালতের নিদের্শনা মেনে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট নীতিমালা কার্যকর হোক।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘ভ্রƒণ হত্যা খুনের শামিল’

আপডেট সময় : ১১:১২:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

ফারজানা কাশেমী : বাবা, মা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। নির্ভরতার এক কেন্দ্রবিন্দু। নির্ভয়ে সম্মুখ দিকে পথ চলার চালিকা শক্তি। পরম মমতায়, ভালবাসায়, স্নেহ, শাসনে এই বাবা-মা তাদের সন্তান বেঁচে থাকার উপজীব্য করে তুলে। বহুবিধ বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সন্তানদের বেঁচে থাকার সাহসিকতা যোগায় বাবা-মা।
ঘটনা সাপেক্ষে আবার উপরোক্ত বাক্যদ্বয়ের কিছুটা বিচ্যুতি ঘটে। কখনো দায়িত্বহীনতা, অবহেলায় সম্পর্কের প্রকৃত চিত্রের রূপরেখার ব্যাপ্তিতে ফাটল ধরায়। আবার কখনো বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ সন্তানদের এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক সত্য ঘটনায় আমাদের অনেকাংশকে আলোড়িত করেছিল। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানের জিম্মা এক আইনগত পদক্ষেপ। আইনের সুস্পষ্ট বিধান ও নিদের্শনা অনুসারে কোনো বিবাহিত দম্পতির বিচ্ছেদের পর তাদের সন্তানদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত জিম্মাদার হলো তাদের মা। বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া এই জাতীয় সন্তানদের আইনগত অভিভাবক হয় তাদের মা। কোনো কারণে মা যদি আইনগত অভিভাবক হতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়, তার অবর্তমানে কে বা কারা আইনগত অভিভাবক হবে সে বিষয়ে আইনে স্পষ্টত নিদের্শনা আছে। জনশ্রুত হয়েছে যে এক বিবাহিত দম্পতির দাম্পত্য জীবন অবসানের পর তাদের সন্তানদের জিম্মার প্রশ্নে বাবা-মা দুজনই তাদের কন্যা সন্তানের জিম্মা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই সময়ে কন্যা সন্তানটির মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা কতটা ধূসর হয়েছিল তা চিন্তাতীত।
দিনান্তে কন্যা পৌঁছেছে পরিণত বয়সে। আজ তার বাবা-মা বয়সের কাছে নতুজানু অসহায় বৃদ্ধ। যেন জীবনের ভারে নুয়ে পড়েছে। সেদিন তার বাবা-মা পুত্র সন্তানের দায়িত্ব নিলেও কন্যার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃত জানিয়েছিল। বাবা-মায়ের বৃদ্ধ, বয়স্ক অবস্থায় পুত্র আজ সুপুত্রের পরিচয় দেয়নি। তাই সেই বাবা-মা’র ঠিকানা আজ বৃদ্ধাশ্রম। এবার সেই কন্যাটি বাবা-মায়ের সুকন্যার পরিচয় দিল। কন্যাটি বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিজ আশ্রয়ে তুলে নিল। পরম শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় নিজেকে ভাগ্যবতী ভেবে বাবা-মাকে নিজ ছায়ায় ফিরিয়ে এনেছে। দুঃখভারে ক্লান্ত কন্যা ব্যথিত অন্তরে বলেছিল , বাবা-মা তো, তারা মুখ ফিরাতে পারলেও আমি পারিনি।
এমন অসংখ্য কন্যা আমাদের ঘরে ঘরে। পরিবর্তিত সময়ে ও অনেক কন্যা শিশু নিজ পরিবারে নিগৃহীত, বঞ্চিত, শোষিত। কন্যা সন্তানের প্রতি স্থূল রুচির পরিচয়ে প্রকারান্তরে পুত্রকে বৈষম্যের বটমূল শিখায় পরিবার। তাই এই সব পুত্রই তার নিজ বোন, মা ও পরিণত বয়সে নিজ স্ত্রীর সাথে হেয় আচরণ করে। সেই পুত্র কিশোর বেলায় ইভটিজিং এর মতো গর্হিত আচরণ করে। আবার কখনো কারো প্রাণনাশের কারণ হয়। সমান গুরুত্ববহতা নিয়ে প্রতিটি শিশু বড় হোক। বৈষম্যের আচরণ নয়, মানবিক মূল্যবোধে পরিবার-পরিজন প্রত্যেক শিশুর প্রতি যত্নশীল হোক। কন্যা বা পুত্র নয়, সন্তান হিসেবে প্রতিটি শিশু লালিত পালিত হোক। তারপর ও পাশবিক আচরণ রোধে উচ্চ আদালতের নিদের্শনা মেনে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট নীতিমালা কার্যকর হোক।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ।