নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘শঙ্কা’ দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্ব চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, যত রক্ত ঝরুক, যত জীবনই যাক, এখনো গণতন্ত্র আমাদের হাতের নাগালের বাইরে। আমরা শুনি, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই, যে নির্বাচন হবে। তবে ভোট গণনার আগ পর্যন্ত, ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়, সংশয় আছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার আরোগ্য কামনায় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখছিলেন গয়েশ্বর। দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারো পাতানো ফাঁদে বা কারো পাতানো কথায় ঐক্যের চেয়ে, যাতে গণতন্ত্র ভুলন্ঠিত না হয়। নির্বাচনটা সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে যেন নতুন করে কোনো চক্রান্তের ফাঁদ পেতে কেউ সফল না হতে পারে আমাদের সর্তক থাকতে হবে।
জনগণের মন জয় করুন: বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যদি আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ভালোবাসি, যদি আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালোবাসি, যদি আমরা তারেক রহমানকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করব। এমন কিছু করব না যাতে জনগণ অসন্তুষ্ট হয় বা জনগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়।
মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে বন্দি থাকার সময় তার ওপর ‘নির্যাতন’ হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজকে আমি এই অনুষ্ঠান থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেলজীবনে তার ওপরে যে অত্যাচার হয়েছে, যে নির্যাতন হয়েছে, কারা কারা এর সঙ্গে দায়ী- তাদের সকলের একটা বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি এবং এর বিচার হওয়া উচিত।
বিএনপির দুর্দিনে দলের নেতৃত্ব দিয়ে খালেদা জিয়া যে ভূমিকা রেখেছেন তা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা যারা কয়েকজন দেশনেত্রীর সাথে কাজ করেছি, তারা দেখেছি, নানা চাপের মধ্যেও দেশনেত্রীর দৃঢ় মনোবল ছিল। গণতন্ত্রের প্রশ্নের তার আপোষহীন নেতৃত্ব এবং নেতা-কর্মীদের প্রতি তার যে ভালোবাসা ও স্নেহ তা তুলনাহীন।
২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবার কয়েক দফা আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেয় তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। এসময় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় বন্দি রাখা হয় তাকে। পটপরিবর্তনের পর ৬ আগস্ট সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হন তিনি। বিএনপি খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট পালন করে। তার জন্ম দিনাজপুরে। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থ। বাবা এস্কান্দর মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে।
স্বামী জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে নিহত হওয়ার পর রাজনীতিতে আসেন গৃহবধূ খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তিন দফা বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। তার জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীতে বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানা-মাদ্রাসায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের চেয়ারপারসনের আরোগ্য কামনায় একই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভীর সঞ্চালনায় নয়া পল্টনের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরব, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানরগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়নসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।