নিজস্ব প্রতিবেদক : গোপন কক্ষে ‘ব্যাপক অনিয়ম আর জালিয়াতির’ কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য ইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুনঃতফসিল দাবি করেছে জাতীয় পার্টি। তবে ঢাকায় বসে ‘ফুটেজ দেখে’ ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিলো, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবব উল আলম হানিফ। আর এই উপনির্বাচনে ইসিকে ‘অসহযোগিতা করে সরকার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
সাঘাটা-ফুলছড়ি নিয়ে গাইবান্ধা-৫ আসন গঠিত। এই আসনের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাহমুদ হাসান রিপন, জাতীয় পার্টির এএইচএম গোলাম শহীদ (লাঙ্গল), বিকল্প ধারার জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান (আপেল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ট্রাক) প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেন।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। গোপন কক্ষে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে একে একে ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি। পরে দুপুর দুইটার দিকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সিইসি বলেন, ‘প্রথমে নানা অনিয়মের কারণে ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পুরো নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার।’
গাইবান্ধা-৫ আসনে আর ভোট নেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। বন্ধ হওয়া ভোটের বিষয়ে আইন পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তবে ঢাকায় বসে ফুটেজ দেখে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিল প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রশ্ন তোলেন তিনি। গাইবান্ধায় ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। তবে হানিফ বলেন, ‘সেখানে কোনো কেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি। ঢাকায় কমিশন ভবনে বসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এতগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিলো তা বোধগম্য নয়।’
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫ কেন্দ্রে ভোট হচ্ছিল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএমে। সবগুলোই ছিল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। ঢাকায় নির্বাচন ভবন থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয় কেন্দ্রের পরিস্থিতি।
এক পর্যায়ে গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা সরাসরি দেখার পর বেলা ১টা পর্যন্ত ৫১ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি। পরে সব কেন্দ্রেই ভোট বন্ধের ঘোষণা আসে ইসির। দুপুর দুইটায় সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনো একটি পক্ষ বা কোনো একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিরপেক্ষ হচ্ছে না।’
এদিকে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তের আগেই অনিয়মের অভিযোগ এনে নৌকার প্রার্থী ছাড়া বাকি সবাই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। বগারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে জাতীয় পার্টিসহ ৪ প্রার্থী একযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান।
পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়ে তিনি বিবৃতিতে বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই প্রায় শতভাগ কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থীর এজেন্টদের জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। তারা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেওয়াসহ ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে অবস্থান করে ভোটারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে বিপক্ষে ভোট দেয়।’
এর আগে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেখা করে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বাতিল করে পুননির্বাচনের দাবি জানান। প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপার নেতৃত্বে সেই প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন প্রমুখ। এদিকে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইসিকে ‘অসহযোগিতা করে সরকার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে’ অভিযোগ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রব বলেন, ‘একটিমাত্র উপনির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে কয়েক প্লাটুন র্যাব, আনসার সদস্য ছাড়াও ১২৮৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকার পরও নির্বাচনে কারচুপি ফেরানো যায়নি। তাহলে ৩০০ আসনের নির্বাচনে ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার অক্ষম।’ বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘উপনির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ মোতাবেক সহযোগিতা করার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকার পূর্বের মতো ব্যর্থ হয়েছে।’