নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পরে টিএসসি থেকে মিছিল শুরু হয়। সেখান থেকে ভিসি চত্বর হয়ে রেজিস্ট্রার ভবনের দিকে চলে যান নেতাকর্মীরা। বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে মিছিল বেরা করা হয়।
মিছিলে ‘রাজাকারের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘ভোট চুরির তালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘নির্বাচনে কারচুপি, মানি না মানবো না’, ‘ভোট চোর ভোট চোর, প্রশাসন ভোট চোর’- এমন স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে বড় কোনো গোলযোগ ছাড়া মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর ফল গণনা চলছিল। তবে ভোটগ্রহণের সময়ই বিভিন্ন প্যানেলের তরফ থেকে প্রশাসনে ‘ভোট কারচুপির’ অভিযোগ তোলা হয়। ছাত্রদলের তরফে প্রশাসনকে ছাত্রশিবিরের প্রতি ‘বাড়তি সুযোগ দেওয়া’ ও ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তোলা হয়। ডাকসুতে প্রতিনিধি নির্বাচনে ছয় পৃষ্ঠার ওএমআর শিটের ব্যালট পেপারে রায় দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলেছে ভোটগ্রহণ। বিকাল পাঁচটার পর ৮ কেন্দ্রেই ভোট গণনা শুরু হয়। ১৪টি মেশিনে এসব ব্যালট গোনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন থেকে ভোটের আনুষ্ঠানিক ফল রাত ১২টা নাগাদ ঘোষণা করা হবে বলে জানা যায়।
টিএসসি কেন্দ্রের সামনে উত্তেজনা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারচুপি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদলসহ দুটি প্যানেলের প্রার্থীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে টিএসসি কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়ে এই অভিযোগ তোলেন তাঁরা। এ সময় প্রার্থীদের সামনে কেন্দ্রটির ভোট গণনা করার দাবি জানান এই প্রার্থীরা। তবে তাতে সাড়া দেয়নি প্রশাসন।
কারচুপির অভিযোগ তুলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে উত্তেজনার সৃষ্টি করেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা ও স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী হাসিবুল ইসলাম। এ ছাড়া ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ ছাত্রদলের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তাঁরা অভিযোগ করেন, টিএসসি কেন্দ্রে ভোট গণনা দেখানোর এলইডি স্ক্রিনে ব্যালট বাক্স দেখানো হচ্ছে না। তাই তাঁরা ভোট গণনা দেখতে ভেতরে যেতে চান। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের ভেতরে যেতে দিতে বাধা দিয়েছে। আধা ঘণ্টার বেশি টিএসসি কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিলেও ভেতরে ঢুকতে না পেরে এক পর্যায়ে তাঁরা টিএসসি থেকে মিছিল বের করে সিনেট ভবনের দিকে চলে যান। এ সময় তাঁদের ‘ভোট চোর ভোট চোর, জামায়াত শিবির ভোট চোর’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শুনতে পেরেছি শিবিরের প্রার্থীরা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট গণনা দেখছেন। তবে আমরা কেন পারব না? তাহলে আমরা কীভাবে প্রশাসনের ওপর বিশ্বাস করব? বিভিন্ন জায়গায় কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসন কী করতে চাচ্ছে, সেটি আমরা বুঝতে পারছি না।’ ওই সময় টিএসসি ভোটকেন্দ্রের সামনে স্থাপন করা এলইডি স্ক্রিন বন্ধ অবস্থায় দেখা গেছে। তবে কয়েকজনকে সেটি চালুর চেষ্টা করতে দেখা যায়। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে স্ক্রিনটি চালু করা হয়।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ: উৎসবমুখর ও অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোট চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। টানা ৮ ঘণ্টা ক্যাম্পাসের ৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। ডাকসুর নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, যদি বিকেল ৪টার মধ্যে কেউ এসে ভোটারদের লাইনে এসে দাঁড়ায়, তাহলে যত দেরিই হোক তাকে ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে অধিকাংশ কেন্দ্র ঘুরে শেষ সময়ে লাইনে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। সিনেট ভবন কেন্দ্র থেকে জানা যায়, বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে সিনেট ভবন কেন্দ্রটি ফাঁকা হয়ে যায়। সেখানে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। তাছাড়া কার্জন হল কেন্দ্রে শেষ দিকে তেমন ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি। বিকেল ৪টার মধ্যে এ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে গেছে।
ডাকসুতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন আর ১৩টি ছাত্র হলে ভোটার রয়েছেন ২০ হাজার ৯১৫ জন। এবারের নির্বাচনে ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন পদে ছাত্রী রয়েছেন ৬২ জন। এছাড়া প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটে লড়ছেন এক হাজার ৩৫ জন।
এলইডি স্ক্রিনে ভোট গণনা দেখেছে শিক্ষার্থীরা: ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই গণনার কার্যক্রম শুরু করেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ভোট গণনার দৃশ্য কেন্দ্রগুলোর সামনে এলইডি স্ক্রিনে দেখানোর ব্যবস্থা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কেন্দ্রগুলোর বাইরে থাকা এলইডি স্ক্রিন একে একে চালু করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সবার দৃষ্টি ছিল এলইডি স্ক্রিনে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকে সব কেন্দ্রের সামনে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তারা ফলের অপেক্ষায় থাকেন। ভোটে কে জিতবেন তা নিয়ে চলছে জল্পন-কল্পনা। নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানা যায়নি। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। কেন্দ্রভেদে এ হার কম-বেশি হতে পারে। তবে আশানুরূপ সাড়া দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সানা/আপ্র/০৯/০৯/২০২৫


























