নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল কড়া নাড়ছে। তার আগে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়ে গেছে। বুধবার উদ্বোধন হচ্ছে আরেক মেগা প্রকল্প দেশের প্রথম মেট্রোরেল। ফলে পদ্মা সেতুর পাশাপাশি মেট্রোরেলের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করার আশা দেখছে ক্ষমতাসীন দল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরার উত্তর স্টেশন থেকে টিকিট কেটে মেট্রোরেলে উঠবেন এবং আগারগাঁও স্টেশনে নামবেন। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উদ্বোধনী প্রোগ্রাম হবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আদলে। এখানে একটি সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হলে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের একটি মাইলফলক।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, তাদের সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম পদ্ম সেতু ও মেট্রোরেল। দুটি প্রকল্পই এই সরকারের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই প্রকল্প দুটির কাজ এগিয়ে নিতে হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে উভয় প্রকল্প উদ্বোধন করা সম্ভব হচ্ছে। এটি সরকারের জন্য যেমন মাইলফলক, তেমনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্যও আশাব্যঞ্জক। তারা আরও বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল সাধারণ মানুষ তথা ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলবে। প্রথমটির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলসহ ২১টি জেলার মানুষ উপকৃত হচ্ছে। দ্বিতীয়টির সুফল পাবে মেগাশহর ঢাকার মানুষ। তবে এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম মেট্রোরেল হওয়ায় সারা দেশের মানুষকে প্রভাবিত করবে। ফলে দুটি প্রকল্পই ভোটারদের মনে আওয়ামী লীগের ইতিবাচক ইমেজ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, পদ্মা সেতুর পরে মেট্রোরেল নির্মাণ সরকারের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে। দুটিই দেশের মানুষের জন্য মাইলফলক। শেখ হাসিনা যা করতে চান, তা যে তিনি করতে পারেন, সেটি প্রমাণিত হয়েছে এই দুই প্রকল্পের মাধ্যমে। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন, সেটিও বাংলাদেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখেছে। তার ভাষ্য হলো, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে। নানা শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবাই সুফল পাচ্ছে এই সেতুর, যা দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই করতে হয়েছে। এখন মেট্রোরেলের মাধ্যমে ঢাকার মানুষ উপকৃত হবে। যানজটের ভোগান্তি লাঘব করবে এই গণপরিবহন। এটি সারা দেশের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। ফলে আগামী নির্বাচনে এর সুফল পাবে আওয়ামী লীগ।
মেট্রোরেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের আধুনিক গণপরিবহনে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি সামনে এনে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের আরও একটি মাইলফলক মেট্রোরেল। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণ হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। পদ্ম সেতুর মতো না হলেও মেট্রোরেলের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজনীতিতে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, কয়েকজন ভিআইপি মেহমান নিয়ে নয়, জনগণের সামনে কথা বললে মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লাখো মানুষের সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তিনি। এই জনসভা সফল করতে আমরা কাজ করছি। মেট্রোরেল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। দলটির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে পদ্মা সেতুর পাশাপাশি মেট্রোরেলকেও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকা-ের সঙ্গে এই দুটি প্রকল্পের আলাদা প্রচারপত্রও করা হবে। বিশেষ করে ঢাকার নির্বাচনি প্রচারে মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়টি অন্যতম ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হবে। ভোটের রাজনীতিতে এর সুফল পাবে আওয়ামী লীগ।
বুধবার মেট্রোরেল নিয়ে ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশার বাতিঘর, সাহসের বর্ণিল ঠিকানা, রূপান্তরের রূপকার। আশা করছি, আগামী বছর ডিসেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ এবং ২০২৫ সালে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল অংশের উদ্বোধন করা যাবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে মিলিয়ে ২০টি নির্বাচনি আসন রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরের লোকজন যোগাযোগের ক্ষেত্রে সরাসরি সুফল পাবে মেট্রোরেলের। আগামীতে দক্ষিণেও মেট্রোরেল চালু হলে সুবিধা ভোগ করবে। ফলে মেগাসিটি ঢাকার যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এতে ঢাকার ২০টি নির্বাচনি আসনে ভোটের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেছেন, ঢাকায় কয়েকটি ফ্লাইওভার হয়েছে, যার সুফল পাচ্ছে নগরবাসী। এবার মেট্রোরেল চালু হলেও তারও সুফল পাবে মানুষ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন শহরের ভোটারদের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ঢাকা যানজট থেকে মুক্তি এবং দেশের প্রথম মেট্রোরেলে যাতায়াতের কারণে মানুষ নৌকায় আবারও ভোট দেবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মেট্রোরেল ঢাকার দুই অংশেই হচ্ছে। প্রথমে উত্তর অংশে হওয়ায় এখানে আনন্দ-উল্লাস দেখা যাচ্ছে। তবে দক্ষিণের মানুষও নিরাশ হবে না। তারাও আগামীতে মেট্রোরেলের সুফল পাবে। সবমিলিয়ে ভোটের রাজনীতিতে এর একটা প্রতিফলন দেখা যাবে। শেখ হাসিনা সরকারের, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এটি একটি মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত হবে।
ভোটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে মেট্রোরেল, আশা আ.লীগের
ট্যাগস :
ভোটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে মেট্রোরেল
জনপ্রিয় সংবাদ