নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘অদক্ষতা’ এবং ‘ভোটার উপস্থিতি কম রাখে এমন পদক্ষেপ’ নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন প্রতিরোধ পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মেঘমল্লার বসু।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচনি যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গেই থাকছি, আমরা আমাদের প্রচার ফুল স্কেলে করব। তবে আমরা যদি বুঝতে পারি, আসলে পুরো ভোটের ব্যাপারটি একটা স্ক্যামে পরিণত করা হচ্ছে, এবং এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ন্যূনতম মেরুদণ্ড নাই, তাহলে এমনও হতে পারে, শেষ পর্যন্ত আমরা এই নির্বাচনে নাও অংশগ্রহণ করতে পারি। ডাকসু ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর দিন মধুর ক্যান্টিনের সামনে এই সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বলেন, “নির্বাচনি বিধিমালার বিষয়ে প্রশাসনের যে অদক্ষতা, এটা নিয়ে আমরা কনসার্নড। লো ভোটার টার্নআউট রাখার জন্য তারা যে কেন্দ্র বাড়াচ্ছে না, এটা নিয়ে আমরা কনসার্নড। মেট্রোরেল বন্ধ রাখার মধ্য দিয়ে এখানে লো টার্নআউট রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটার জন্য কনসার্নড। পারমিশনের নামে বারবার নানা রকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করা নিয়ে আমরা কনসার্নড। এবং একই সঙ্গে আমরা ৭ ও ৮ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা রাখার বিষয়ে কনসার্নড।
কয়েকটি বাম সংগঠন মিলে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ নামে ডাকসু ভোটে যে প্যানেল অংশ নিচ্ছে, তার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মেঘমল্লার। এই প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। প্রচার শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা দেখার কথা তুলে ধরে মেঘমল্লার বলেন, আমরা এটাও আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিবেচনা করবে, কারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাত দেড়টার সময় রোকেয়া হলে ঢুকে যায়, কারা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কোরআন বিতরণের ব্যবস্থা করে, নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করে রিডিং রুমে ঢুকে যায়, আর কারা এই নির্বাচনে যে রুলস অব দ্য গেম, সেটা মেইনটেইন করে এই নির্বাচনটি করার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি, এটাও শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হবে।
ভোটের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনে কোনো বিঘ্ন যাতে না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখার কথা বলেন ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা। ছাত্রীদের হলে ছাত্রদের এবং ছাত্রদের হলে ছাত্রীদের প্রচারে প্রতিবার অনুমতি নেওয়ার যে বিধান, তার বিরোধিতা করে নির্বাচনের পুরো সময়ের জন্য একবারে অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ দেন মেঘমল্লার। তিনি বলেন, প্রচারের সময় না দিয়ে অ্যাপ্লিকেশনে সময় দিই, তাহলে সরাসরি বলে দেন, এটা টাকার খেলা, এটাও মাসল পাওয়ার খেলা, যারা মাসল পাওয়ার বেশি সে জিতবে, বাকি কারও প্যানেলের ইলেকশন করতে হবে না, তাহলে বলে দেন, আমরা এখন থেকে নির্বাচনে সরে দাঁড়াই।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মেঘমল্লার বলেন, এখানে মিলিটারি আনার সিদ্ধান্তকে আমরা এ কারণে সমালোচনা করতে পারছি না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রক্টরিয়াল টিম, সে টিম থাকা আর না থাকা সমান কথা, সে টিমের কোনো কার্যকারিতা নাই। সে কারণে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেহেতু থাকবে না, স্বাভাবিকভাবে তারা পুলিশ এবং পরবর্তীতে তারা সেনাবাহিনীর দিকে ধাবিত হবে। তিনি বলেন, বিষয়টা হচ্ছে, পুলিশ বা সেনাবাহিনীর জানা আছে কি-না, নির্বাচনের পদ্ধতিটা কী? তাহলে তারা যে উল্টো বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা আমরা পাচ্ছি না। ওখানে আরেকটা কনসার্ন হচ্ছে, সেনাবাহিনী মোতায়েনের একটা ভিজ্যুয়াল ইমপ্যাক্ট আছে, আমরা জানি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় খুবই একটা কঠিন পরিস্থিতিতে, কঠিন সময়ে। তো, সেটার প্রেক্ষিতে কোনো ভয়ভীতি সৃষ্টি হবে কি-না, তার মধ্য দিয়ে ভোটার উপস্থিতি কমে যাবে কি-না, আমাদের প্রাথমিক উদ্বেগ সেটা।
নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো নিয়তে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবে, সেগুলোতে সহায়তা করার কথা বলেন এই প্রার্থী। তিনি বলেন, বিগত ডাকসু নির্বাচনে দেখেছি, লাইন জ্যামিংয়ের মধ্য দিয়ে ভোটার সাপ্রেশনের একটা অর্গানাইজড চেষ্টা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে। সেই সময় যারা ছাত্রলীগ করতেন, তাদের অনেকে এখন একটি নির্দিষ্ট সংগঠন করেন, তারা দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে থেকে এই লাইন জ্যামিংয়ের বিভিন্ন যে টেকনিক, সেগুলি রপ্ত করেছেন। এই লাইন জ্যামিংয়ের চেষ্টা যদি সেই সংগঠনটি বা অন্য কোনো সংগঠন করে, তাহলে লাইন জ্যামিংয়ের প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানা যায়নি।
মাত্র আটটি কেন্দ্রে ভোট আয়োজনের সমালোচনা করে মেঘমল্লার বলেন, এত অল্প কেন্দ্রে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী কীভাবে ভোট দেবেন, আমরা নিশ্চিত না।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ক্যান্টিনগুলোতে যে মাত্রার খাওয়াদাওয়া হয়েছে, খবর নেন। প্রত্যেকটা হলে প্রতিদিন আমরা খবর পাচ্ছি ফিস্ট হচ্ছে।ৃ প্রার্থী নিজে টাকা দেন না, প্রার্থীর পাশে একজন সমর্থক টাকা দেন। এর মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটা হলের প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষকে ঘুষ দেওয়া হচ্ছে, এটা রীতিমত লজ্জাজনক। এক রকম ঘুষের মত বিষয়টি। ব্রাইব করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোট কাটার চেষ্টা করা হচ্ছে। এবং সেটা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকলভাবে চলছে।