নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল ফিতরের সপ্তাহখানেক আগে থেকে শুরু হয়ে ঈদের পরের সপ্তাহেও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট ছিল। এমন আকালের মধ্যেও তেল ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে ঈদের পর লিটার প্রতি দাম ৩৮ টাকা করে বাড়ানো হয়। তেলের দাম বাড়ানোর সপ্তাহ খানেক পার হলেও এখন পর্যন্ত বাজারে তেল সরবরাহে অস্থিরতা রয়েই গেছে। তবে ঈদের আগের ও পরের সপ্তাহের চেয়ে বর্তমানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল বেশি মিলছে।
দেশজুড়ে ভোক্তা অধিকার ও আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে হাজার হাজার লিটার মজুত করা তেল আটকের ঘটনায় বাজারে তেলের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তাছাড়া সরবরাহ কম এবং দাম বাড়তে পারে এ সম্ভাবনায় ভোক্তারা বেশি বেশি তেল কিনে রেখেছে ঈদের আগেই।
ঈদের পর তেলের চাহিদা কিছুটা কম থাকায় সতর্ক খুচরা বিক্রেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে আগের মতো সয়াবিন ও পাম তেল সংগ্রহের বদলে ব্যাবসায়ীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কৌশল গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একাধিক পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে তেল থাকা-না থাকা, চাহিদা কমে যাওয়া এবং দামের ওঠানামার ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোজ্য তেলের বাজারের অস্থিরতা এখনও কাটেনি। রোজার ঈদের ছুটি শেষে গত ৫মে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। দাম বাড়বে বলে গুঞ্জন থাকায় ঈদের ১৫ দিন আগে থেকেই বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট দেখা দিতে শুরু করে। ঈদের দুই তিন আগে ও পরে দেশজুড়েই খুচরা দোকান থেকে তেল উধাও হয়ে যায়। নতুন দর অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য লিটার প্রতি ১৯৮ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা এবং পাম অয়েল ১৭২ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন দর নির্ধারণের পর গত সপ্তাহের শুরুতে ব্যাংক খোলার পর বাজারে নতুন তেল আসতে শুরু করে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বেশি দামের আশায় মজুত করা রাখা তেল সরকারি তদারক সংস্থার অভিযানের ধরা পড়লে তা ভোক্তা পর্যায়ে আসতে শুরু করে।
গত কয়েক দিনে দেশজুড়েই প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার (কোনোদিন তা লাখও ছাড়িয়েছে) মজুত ভোজ্য তেল আটক করে বাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি শুরু করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে বেশি লাভের আশায় হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া তেলের দেখা আবার পেতে শুরু করেছেন ক্রেতারা। টিকে গ্রুপের পরিচালক সফিউল আতহার তসলিম বলেন, ‘নতুন দামে তেল সরবরাহ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত দেশের সর্বত্র তা পৌঁছানো যায়নি। তবে প্রধান প্রধান স্পটগুলোতে তেল পৌঁছে গেছে।’
কিছু এলাকায় তেল পর্যাপ্ত থাকলেও ক্রেতা কম। আবার কিছু এলাকায় তেল পর্যাপ্ত পরিমাণে না পৌঁছানোর অভিযোগও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তসলিম বলেন, ‘এটা হতে পারে। কিছু এলাকায় হয়ত অনেকেই পাইকারিভাবে তেল সংগ্রহ করেছে। অনেক এলাকায় হয়ত পাইকারি ব্যবসায়ীরা কোনো কারণে তেল সংগ্রহ করতে পারেনি।’
হাতিরপুলের মুদি দোকান ভাই ভাই ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী মতিনুর রহমান জানান, ঈদের চার দিন আগ থেকেই তার দোকানে তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের পরেও পাননি। দুদিন ধরে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল আসতে শুরু করলেও বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ এখনও সীমিত। জননী স্টোরের হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর শুক্রবার দোকান খুললেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি তেল পাননি। তবে, এরপর থেকে তীর কোম্পানি তেল দেওয়া শুরু করে। বর্তমানে আবার চাহিদা কমে গেছে। দৈনিক পাঁচ কার্টন তেল বিক্রি হচ্ছিলো। গত শুক্রবারও একই পরিমাণ তেল পেলাম। অথচ আজ অর্ধেক রয়ে গেছে।’
মিজান নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘মনে হয় মানুষজন প্রয়োজনের অতিরিক্ত তেল কিনে নিয়েছে; তাই এখন বাজারে তেলের চাহিদা কমে গেছে।’
নিউমার্কেটের হোসেন স্টোরের আরিফ বলেন, ‘বাজারে দাম ওঠানামার কারণে খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। সরকার যে দামে বিক্রি করতে বলে, সেই দামে তেল পাওয়া যায় না। পরে আবার ভোক্তা অধিকার এসে জরিমানা করে। আপাতত খোলা তেল বিক্রি করব না। বাজার যখন স্বাভাবিক হবে; তখন পরিস্থিতি বুঝে বিক্রি শুরু করব।’
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, ‘ঈদের পর সরকারের নির্ধারিত দরে সরবরাহ শুরু হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা পর্যাপ্ত নয়। সরবরাহ আরও বাড়াতে হবে। হয়ত এখন দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ তেল কম কিনবে। কিন্তু তেল ছাড়া তো আর চলা যাবে না।’