ঢাকা ০১:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

ভোগ ও ত্যাগ

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

অধ্যক্ষ মো. নাজমুল হুদা : মানব জীবনে ত্যাগ ও ভোগ পরস্পর সম্পর্কিত ও পরস্পর বিরোধী দুটি অনুষঙ্গ। সাধারণত মানব জীবনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গগুলোকে ভোগ নামে অভিহিত করা হয়। মানব জীবনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ মেটানোর উপকরণকে চাহিদা নামে আখ্যায়িত করা হয়।
মানব জীবনে চাহিদার কোনো শেষ নেই। এ কারণে অতিরিক্ত চাহিদাকেই সাধারণত ভোগ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ভোগের কোনো শেষ নেই। মূলত অসীম চাহিদা বা ভোগ একপ্রকার মানসিক বিকার। মানসিক বিকার গ্রস্থ মানুষ যেমন কোনো কিছু ব্যবহার করা থেকে নষ্ট করে বেশি, ঠিক তদ্রƒপ ভোগী মানুষ জীবন যাপনের উপকরণ ব্যবহার করার থেকে নষ্ট বা অপচয় করে বেশি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, একজন ভোগী মানুষের খাদ্যের তালিকায় অনেক সময় যে উপাচার বা দ্রব্য ব্যবহার করা হয় সে উপাচারের বহুলাংশ অব্যবহৃত পড়ে থাকে। যে অবস্থাকে অপচয় নামে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।
আল্লাহপাক কালামে পাকে ঘোষণা করেছেন অপচয়কারী শয়তানের ভাই। কেবল খাদ্য নয়, জীবনযাপনের অন্যান্য উপকরণ যেমন- পরিধেয় বস্ত্র পরিবহনের যানবাহন ও জীবনযাপনের অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ব্যয় বহুলতাকে আমরা ভোগ নামে আখ্যায়িত করতে পারি। একজন ভোগীর অন্যায় আবদার মেটাতে যেয়ে অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় জীবন উপকরণ ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন- যে কোনো ভোগী মানুষের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও জীবন উপকরণে যে ব্যয় হয়; সে অর্থ দিয়ে অনেক নিরন্ন ভুখা ও অভাবী মানুষের সার্বিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়। সে কারণে সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থা এক অন্যতম অন্তরায়।
আমরা আগে উল্লেখ করেছি যে, ভোগ এক মানসিক বিকৃতি। এ কারণে মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষের যেমন চাহিদার শেষ নেই, ঠিক তদ্রƒপ একজন ভোগী মানুষের ও চাহিদার শেষ নেই। সে কারণে আমরা বলতে পারি যে, ভোগ সামাজিক বৈষম্যহীনতা ও সামাজিক অস্থিরতা বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম।
ভোগবাদী মানসিকতা নিয়ন্ত্রণে মহাবনী (স.) বলেছেন, তোমরা নিজেরা যা আহার করবে তোমার পরিবারের অন্যদেরকে সে খাবার পরিবেশন করবে। তোমরা যা পরিধান করবে অন্যদের কেউ সে পোশাক পরিধান করাবে। খাবারের ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন যে, তোমাদের বাড়িতে যখন কোনো খাবার রান্না হবে তখন তরকারিতে ঝোল একটু বেশি করে রাখবে। কারণ যদি প্রতিবেশীকে তোমরা তরকারি সরবরাহ করতে না পারো, তাহলে একটু ঝোল দিয়েও প্রতিবেশীর আহারের প্রয়োজনীয়তা মেটাবে।
এ ধরনের আচরণ পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। সমাজে স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হয়। অন্যদিকে ভোগবাদ মানুষকে শোষণ করার মানসিকতা তৈরি করে। একজন ভোগী মানুষ যে কোন অবস্থাতায় তার সম্পদের আধিক্য ঘটানোর জন্য অপরের অধিকার হরণ করতে কুণ্ঠিত হয় না। এক্ষেত্রে সে ন্যায় অন্যায়ের কোনো বাচবিচার করে না।
প্রতিক্রিয়ায় সমাজে অশান্তি ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রীয়ভাবেও ভোগবাদের বিস্তার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আমরা জানি, আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পদের এক বিরাট অংশ ভোগবাদের পেছনে ব্যয় করা হয়। আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিগণ রাজকোষের অর্থ দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভোগবাদের উপকরণ ব্যবহার করে থাকেন।
অপ্রয়োজনীয় বা একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়িসহ জীবন যাপনের নানাবিধ উপকরণ মেটাতে তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে এসব মন্ত্রী মহোরা ও তাদের সহচরবৃন্দ ভোগবাদী জীবন যাপনের লক্ষ্যে বিদেশে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ ও বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করে থাকেন। এর প্রমাণ বিগত সময়ের অনেক রাজনীতিবিদ ও তাদের সহচরদের নামে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ভোগের বলগাহীন ঘোড়া এখানেই থেমে নেই। আমাদের দেশে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে সে ঋণের অর্থ দিয়ে দেশে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না গড়ে বিদেশে ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন।
অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মচারীরা রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করে বিদেশে ভোগের উপকরণের জন্য বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপনের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিক্রিয়ায় দেশের মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটেছে। সার্বিক অবস্থায় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থা মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি চরম আঘাত হেনেছে।
আমরা জানি, বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশ গুলিতে ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জীবন যাপনের সর্বক্ষেত্রে তারা ভোগের চরম মার্গে উপনীত হয়েছে। মাদকতা ও পাপাচারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বর্তমানে অবগাহন করে চলেছে। তাদের ভোগের এ অতিরিক্ত অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য উন্নত রাষ্ট্রগুলো পৃথিবীর দরিদ্র রাষ্ট্র সমূহ বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে অবিরত শোষণ করে চলেছে। এ কারণে ক্রমেই পৃথিবীতে যুদ্ধের বিস্তার ঘটে চলেছে।
সাধারণত যুদ্ধ বলতে আমরা সমরাস্ত্রের যুদ্ধ বুঝে থাকি। বর্তমানে পৃথিবীতে বুদ্ধি বৃত্তির চরম বিকাশ হওয়ায় যুদ্ধের আওতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- সামরিক যুদ্ধের মতো বর্তমানে পৃথিবীতে বাণিজ্য যুদ্ধ এক পরিচিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সাধারণত পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র গুলি দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর দুর্বলতার সুযোগে নানাবিধ সাহায্যের উপকরণ নিয়ে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে থাকে। অতঃপর নানাবিধ কৌশলে তারা সাহায্যের নামে দরিদ্র রাষ্ট্র গুলিকে শোষণ করে থাকে।
বর্তমানে নবনির্বাচিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্র তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি কঠোর বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমেও পৃথিবীর দুর্বল দেশগুলো হতে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে চলেছে। অপরদিকে যুদ্ধের বিস্তার ঘটিয়ে তারা তাদের দেশের উন্নত সমরাস্ত্রগুলো দরিদ্র রাষ্ট্রের নিকট চড়া মূল্যে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করে চলেছে।
মূলত বিভিন্ন কৌশলে উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের দেশের নাগরিকদের ভোগবাদের অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য বিদেশের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো হতে সম্পদ লুণ্ঠন করে চলেছে। এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, পৃথিবীতে ত্যাগের বিস্তার ঘটিয়ে ভোগবাদ নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব। বিশেষত বর্তমান সময়ের পৃথিবীর অস্থির রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে ভোগবাদের বলগা ঘোড়াকে লাগাম টেনে না ধরতে পারলে আগামীতে মানব সভ্যতা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভোগ ও ত্যাগ

আপডেট সময় : ০৬:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

অধ্যক্ষ মো. নাজমুল হুদা : মানব জীবনে ত্যাগ ও ভোগ পরস্পর সম্পর্কিত ও পরস্পর বিরোধী দুটি অনুষঙ্গ। সাধারণত মানব জীবনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গগুলোকে ভোগ নামে অভিহিত করা হয়। মানব জীবনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ মেটানোর উপকরণকে চাহিদা নামে আখ্যায়িত করা হয়।
মানব জীবনে চাহিদার কোনো শেষ নেই। এ কারণে অতিরিক্ত চাহিদাকেই সাধারণত ভোগ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ভোগের কোনো শেষ নেই। মূলত অসীম চাহিদা বা ভোগ একপ্রকার মানসিক বিকার। মানসিক বিকার গ্রস্থ মানুষ যেমন কোনো কিছু ব্যবহার করা থেকে নষ্ট করে বেশি, ঠিক তদ্রƒপ ভোগী মানুষ জীবন যাপনের উপকরণ ব্যবহার করার থেকে নষ্ট বা অপচয় করে বেশি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, একজন ভোগী মানুষের খাদ্যের তালিকায় অনেক সময় যে উপাচার বা দ্রব্য ব্যবহার করা হয় সে উপাচারের বহুলাংশ অব্যবহৃত পড়ে থাকে। যে অবস্থাকে অপচয় নামে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।
আল্লাহপাক কালামে পাকে ঘোষণা করেছেন অপচয়কারী শয়তানের ভাই। কেবল খাদ্য নয়, জীবনযাপনের অন্যান্য উপকরণ যেমন- পরিধেয় বস্ত্র পরিবহনের যানবাহন ও জীবনযাপনের অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ব্যয় বহুলতাকে আমরা ভোগ নামে আখ্যায়িত করতে পারি। একজন ভোগীর অন্যায় আবদার মেটাতে যেয়ে অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় জীবন উপকরণ ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন- যে কোনো ভোগী মানুষের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও জীবন উপকরণে যে ব্যয় হয়; সে অর্থ দিয়ে অনেক নিরন্ন ভুখা ও অভাবী মানুষের সার্বিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়। সে কারণে সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থা এক অন্যতম অন্তরায়।
আমরা আগে উল্লেখ করেছি যে, ভোগ এক মানসিক বিকৃতি। এ কারণে মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষের যেমন চাহিদার শেষ নেই, ঠিক তদ্রƒপ একজন ভোগী মানুষের ও চাহিদার শেষ নেই। সে কারণে আমরা বলতে পারি যে, ভোগ সামাজিক বৈষম্যহীনতা ও সামাজিক অস্থিরতা বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম।
ভোগবাদী মানসিকতা নিয়ন্ত্রণে মহাবনী (স.) বলেছেন, তোমরা নিজেরা যা আহার করবে তোমার পরিবারের অন্যদেরকে সে খাবার পরিবেশন করবে। তোমরা যা পরিধান করবে অন্যদের কেউ সে পোশাক পরিধান করাবে। খাবারের ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন যে, তোমাদের বাড়িতে যখন কোনো খাবার রান্না হবে তখন তরকারিতে ঝোল একটু বেশি করে রাখবে। কারণ যদি প্রতিবেশীকে তোমরা তরকারি সরবরাহ করতে না পারো, তাহলে একটু ঝোল দিয়েও প্রতিবেশীর আহারের প্রয়োজনীয়তা মেটাবে।
এ ধরনের আচরণ পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। সমাজে স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হয়। অন্যদিকে ভোগবাদ মানুষকে শোষণ করার মানসিকতা তৈরি করে। একজন ভোগী মানুষ যে কোন অবস্থাতায় তার সম্পদের আধিক্য ঘটানোর জন্য অপরের অধিকার হরণ করতে কুণ্ঠিত হয় না। এক্ষেত্রে সে ন্যায় অন্যায়ের কোনো বাচবিচার করে না।
প্রতিক্রিয়ায় সমাজে অশান্তি ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রীয়ভাবেও ভোগবাদের বিস্তার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আমরা জানি, আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পদের এক বিরাট অংশ ভোগবাদের পেছনে ব্যয় করা হয়। আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিগণ রাজকোষের অর্থ দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভোগবাদের উপকরণ ব্যবহার করে থাকেন।
অপ্রয়োজনীয় বা একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়িসহ জীবন যাপনের নানাবিধ উপকরণ মেটাতে তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে এসব মন্ত্রী মহোরা ও তাদের সহচরবৃন্দ ভোগবাদী জীবন যাপনের লক্ষ্যে বিদেশে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ ও বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করে থাকেন। এর প্রমাণ বিগত সময়ের অনেক রাজনীতিবিদ ও তাদের সহচরদের নামে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ভোগের বলগাহীন ঘোড়া এখানেই থেমে নেই। আমাদের দেশে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে সে ঋণের অর্থ দিয়ে দেশে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না গড়ে বিদেশে ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন।
অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মচারীরা রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করে বিদেশে ভোগের উপকরণের জন্য বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপনের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিক্রিয়ায় দেশের মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটেছে। সার্বিক অবস্থায় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থা মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি চরম আঘাত হেনেছে।
আমরা জানি, বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশ গুলিতে ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জীবন যাপনের সর্বক্ষেত্রে তারা ভোগের চরম মার্গে উপনীত হয়েছে। মাদকতা ও পাপাচারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বর্তমানে অবগাহন করে চলেছে। তাদের ভোগের এ অতিরিক্ত অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য উন্নত রাষ্ট্রগুলো পৃথিবীর দরিদ্র রাষ্ট্র সমূহ বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে অবিরত শোষণ করে চলেছে। এ কারণে ক্রমেই পৃথিবীতে যুদ্ধের বিস্তার ঘটে চলেছে।
সাধারণত যুদ্ধ বলতে আমরা সমরাস্ত্রের যুদ্ধ বুঝে থাকি। বর্তমানে পৃথিবীতে বুদ্ধি বৃত্তির চরম বিকাশ হওয়ায় যুদ্ধের আওতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- সামরিক যুদ্ধের মতো বর্তমানে পৃথিবীতে বাণিজ্য যুদ্ধ এক পরিচিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সাধারণত পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র গুলি দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর দুর্বলতার সুযোগে নানাবিধ সাহায্যের উপকরণ নিয়ে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে থাকে। অতঃপর নানাবিধ কৌশলে তারা সাহায্যের নামে দরিদ্র রাষ্ট্র গুলিকে শোষণ করে থাকে।
বর্তমানে নবনির্বাচিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্র তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি কঠোর বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমেও পৃথিবীর দুর্বল দেশগুলো হতে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে চলেছে। অপরদিকে যুদ্ধের বিস্তার ঘটিয়ে তারা তাদের দেশের উন্নত সমরাস্ত্রগুলো দরিদ্র রাষ্ট্রের নিকট চড়া মূল্যে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করে চলেছে।
মূলত বিভিন্ন কৌশলে উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের দেশের নাগরিকদের ভোগবাদের অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য বিদেশের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো হতে সম্পদ লুণ্ঠন করে চলেছে। এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, পৃথিবীতে ত্যাগের বিস্তার ঘটিয়ে ভোগবাদ নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব। বিশেষত বর্তমান সময়ের পৃথিবীর অস্থির রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে ভোগবাদের বলগা ঘোড়াকে লাগাম টেনে না ধরতে পারলে আগামীতে মানব সভ্যতা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

লেখক: গবেষক, কলামিস্ট