ঢাকা ০১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়াল

  • আপডেট সময় : ০২:৫৭:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, দুই দেশে ৫ হাজার ২১ জন মারা গেছেন। তুরস্কে ৩ হাজার ৪১৯ জন আর সিরিয়ায় এক হাজার ৬০২ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, বাশার আল আসাদ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কমপক্ষে ৮১২ জন নিহত হয়েছেন। আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা, ইদলিব ও তার্তুস প্রদেশে এক হাজার ৪৪৯ জন আহত হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কর্মরতরা ৭৯০ জনের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে। তবে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে জানা গেছে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত উকতাই বলেছেন, দুই দিনে তাদের দেশে মোট ৩ হাজার ৪১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা ওরহান তাতার মঙ্গলবার জানিয়েছেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে ২৩ হাজার ৪০০ কর্মী যোগ দিয়েছেন। ১০টি প্রদেশে ৭ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর ৫ হাজার ৭৭৫টি ভবন ধসে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের পর আরো অন্তত ৭৭টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়, যার মধ্যে তিনটি ছিল রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি। আবার একটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ মাত্রার।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল তুরস্কে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ককে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ বিশ্বের বহু দেশ সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
‘সময় ফুরিয়ে আসছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত পরিবার’
ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটতে পড়া শত শত পরিবারকে রক্ষায় সময় ফুরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সিরিয়ার সরকারবিরোধী অংশের পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান রাদ আল-সালাহ। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় হোয়াইট হেলমেটস নামে পরিচিত সংগঠনের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য জরুরিভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে সহায়তা প্রয়োজন, মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি এমনটাই বলেছেন। সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমে সোমবার ভোররাতের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত কয়েক হাজার। “প্রতিটা সেকেন্ড জীবন বাঁচানোর, আমরা প্রতিটি মানবিক সংস্থার প্রতি জরুরিভিত্তিতে এ বিপর্যয় মোকাবেলায় নামতে ও বস্তুগত সহায়তা দিতে আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেছেন রাদ আল-সালাহ। সোমবারের ওই ভূমিকম্প তুরস্কেও কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, আস্ত অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক উপড়ে নিয়েছে, হাসপাতাল ধ্বংস করেছে, আহত ও গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের উদ্ধারে দুই দেশেই এখন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জোর তৎপরতা চলছে। তবে তীব্র ঠা-া উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কাও করছেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আসছে ভয়েস মেসেজ: ইস্তাম্বুলে তুরস্কের এক সাংবাদিক ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছেন বিবিসি নিউজ চ্যানেলে। বলেছেন, ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে লোকজন ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছে। ইব্রাহিম হাসকোলোগলু নামের এই সাংবাদিক বলেন, “মানুষ এখনও ভূমিকম্পে ধসে পড়া বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে আছে। তাদের সাহায্য দরকার।”
বিবিসি নিউজ চ্যানেলকে তিনি বলেন, ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়া লোকজন তাকে এবং অন্যান্য সাংবাদিকদেরকে ভিডিও, ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছে এবং তাদের অবস্থান জানাচ্ছে। ইব্রাহিম বলেন, “তারা আমাদেরকে বলে দিচ্ছে যে তারা কোথায় আছে। আর আমরা কিছুই করতে পারছি না। তুরস্কের যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া দরকার।”
গত সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটিতে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বহু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধসে পড়ে, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়ে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আঙ্কারা ‘চতুর্থ মাত্রার বিপদসঙ্কেত’ ঘোষণা করেছে, তাতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে; কিন্তু তারা জরুরি অবস্থা জারি করেনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়াল

আপডেট সময় : ০২:৫৭:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, দুই দেশে ৫ হাজার ২১ জন মারা গেছেন। তুরস্কে ৩ হাজার ৪১৯ জন আর সিরিয়ায় এক হাজার ৬০২ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, বাশার আল আসাদ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কমপক্ষে ৮১২ জন নিহত হয়েছেন। আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা, ইদলিব ও তার্তুস প্রদেশে এক হাজার ৪৪৯ জন আহত হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কর্মরতরা ৭৯০ জনের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে। তবে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে জানা গেছে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত উকতাই বলেছেন, দুই দিনে তাদের দেশে মোট ৩ হাজার ৪১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা ওরহান তাতার মঙ্গলবার জানিয়েছেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে ২৩ হাজার ৪০০ কর্মী যোগ দিয়েছেন। ১০টি প্রদেশে ৭ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর ৫ হাজার ৭৭৫টি ভবন ধসে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের পর আরো অন্তত ৭৭টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়, যার মধ্যে তিনটি ছিল রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি। আবার একটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ মাত্রার।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল তুরস্কে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ককে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ বিশ্বের বহু দেশ সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
‘সময় ফুরিয়ে আসছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত পরিবার’
ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটতে পড়া শত শত পরিবারকে রক্ষায় সময় ফুরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সিরিয়ার সরকারবিরোধী অংশের পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান রাদ আল-সালাহ। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় হোয়াইট হেলমেটস নামে পরিচিত সংগঠনের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য জরুরিভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে সহায়তা প্রয়োজন, মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি এমনটাই বলেছেন। সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমে সোমবার ভোররাতের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত কয়েক হাজার। “প্রতিটা সেকেন্ড জীবন বাঁচানোর, আমরা প্রতিটি মানবিক সংস্থার প্রতি জরুরিভিত্তিতে এ বিপর্যয় মোকাবেলায় নামতে ও বস্তুগত সহায়তা দিতে আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেছেন রাদ আল-সালাহ। সোমবারের ওই ভূমিকম্প তুরস্কেও কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, আস্ত অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক উপড়ে নিয়েছে, হাসপাতাল ধ্বংস করেছে, আহত ও গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের উদ্ধারে দুই দেশেই এখন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জোর তৎপরতা চলছে। তবে তীব্র ঠা-া উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কাও করছেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আসছে ভয়েস মেসেজ: ইস্তাম্বুলে তুরস্কের এক সাংবাদিক ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছেন বিবিসি নিউজ চ্যানেলে। বলেছেন, ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে লোকজন ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছে। ইব্রাহিম হাসকোলোগলু নামের এই সাংবাদিক বলেন, “মানুষ এখনও ভূমিকম্পে ধসে পড়া বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে আছে। তাদের সাহায্য দরকার।”
বিবিসি নিউজ চ্যানেলকে তিনি বলেন, ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়া লোকজন তাকে এবং অন্যান্য সাংবাদিকদেরকে ভিডিও, ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছে এবং তাদের অবস্থান জানাচ্ছে। ইব্রাহিম বলেন, “তারা আমাদেরকে বলে দিচ্ছে যে তারা কোথায় আছে। আর আমরা কিছুই করতে পারছি না। তুরস্কের যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া দরকার।”
গত সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটিতে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বহু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধসে পড়ে, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়ে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আঙ্কারা ‘চতুর্থ মাত্রার বিপদসঙ্কেত’ ঘোষণা করেছে, তাতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে; কিন্তু তারা জরুরি অবস্থা জারি করেনি।