ঢাকা ১২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫

‘ভুল করে’ সশস্ত্র বাহিনীর অ্যামবুশ: নাগাল্যান্ডে ১৩ খনি শ্রমিক নিহত

  • আপডেট সময় : ১১:৩২:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর অতর্কিত হামলায় ১৩ কয়লা খনি শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যটির মন জেলায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি বা নিহত লোকের সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। মন্তব্যের জন্য মন জেলার কর্তৃপক্ষ বা সেখানে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্যারা কমান্ডোরা ভুল করে ওই শ্রমিকদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের (খাপলাং-ইয়ুং অং) সদস্য ভেবে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কয়লা খনি এলাকা তিরু ও নিহতদের গ্রাম ওটিংয়ের মধ্যবর্তী সড়কে ঘটনাটি ঘটেছে। দুই এলাকার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
কোনিয়্যাক নাগা সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংস্থা কোনিয়্যাক হোহোর একজন নেতা জানান, ওই শ্রমিকরা একটি পিকআপ ভ্যানে করে খনি থেকে গ্রামে ফিরছিল। তারা প্রতি শনিবার বাড়িতে ফিরে রোববারটা পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে সোমবার আবার কাজে ফিরে যায়। ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা এই নেতা পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, “৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৬ জন প্রাণ হারায় আর ৫ ডিসেম্বর সকালে আহত আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, আরও ১১ জন আহত আছেন এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।”
ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের মৃতদেহ মন জেলার সদরদপ্তরে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংগঠনগুলো এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আর না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে অভিযোগ জানানো হবে বলে সতর্ক করেছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বিচার না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও) রাজ্যের রাজধানী কোহিমার কাছে কিসামায় হতে যাওয়া বার্ষিক হর্নবিল উৎসব থেকে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ছয়টি গোষ্ঠীর নাম প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে। ইএনপিও কয়েক মাস আগে তাদের এলাকায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল বলে জানা গেছে।
“আমাদের লোকজন যখন নিহত হচ্ছে তখন কীভাবে উৎসবে নাচবো আমরা?” এক বিবৃতিতে বলেছে ইএনপিও। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সীমান্তের মন জেলার ওই এলাকাটিতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান চালাতে গিয়ে ‘বিপর্যয়’ ঘটে এবং এতে নিরাপত্তা বাহিনীর এক জওয়ানও নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনী তিরু-ওটিং সড়কে একটি অতর্কিত আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু গ্রামবাসীদের বিদ্রোহী ভেবে তাদের ওপর হামলা চালায়।
গুলিতে গ্রামবাসীরা নিহত হওয়ার পর স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দলটিকে ঘেরাও করে ফেলে। আক্রান্ত হওয়ার পর ‘আত্মরক্ষার্থে’ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গুলি করলে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয় বলে পুলিশের সূত্রগুলো এনডিটিভিকে জানিয়েছে। এ সময় উত্তেজিত জনতা সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গতকাল রোববার সকালে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বেসামরিকদের হত্যাকা-কে ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ তদন্ত দল’ ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

‘ভুল করে’ সশস্ত্র বাহিনীর অ্যামবুশ: নাগাল্যান্ডে ১৩ খনি শ্রমিক নিহত

আপডেট সময় : ১১:৩২:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর অতর্কিত হামলায় ১৩ কয়লা খনি শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যটির মন জেলায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি বা নিহত লোকের সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। মন্তব্যের জন্য মন জেলার কর্তৃপক্ষ বা সেখানে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্যারা কমান্ডোরা ভুল করে ওই শ্রমিকদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের (খাপলাং-ইয়ুং অং) সদস্য ভেবে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কয়লা খনি এলাকা তিরু ও নিহতদের গ্রাম ওটিংয়ের মধ্যবর্তী সড়কে ঘটনাটি ঘটেছে। দুই এলাকার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
কোনিয়্যাক নাগা সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংস্থা কোনিয়্যাক হোহোর একজন নেতা জানান, ওই শ্রমিকরা একটি পিকআপ ভ্যানে করে খনি থেকে গ্রামে ফিরছিল। তারা প্রতি শনিবার বাড়িতে ফিরে রোববারটা পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে সোমবার আবার কাজে ফিরে যায়। ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা এই নেতা পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, “৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৬ জন প্রাণ হারায় আর ৫ ডিসেম্বর সকালে আহত আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, আরও ১১ জন আহত আছেন এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।”
ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের মৃতদেহ মন জেলার সদরদপ্তরে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংগঠনগুলো এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আর না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে অভিযোগ জানানো হবে বলে সতর্ক করেছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বিচার না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও) রাজ্যের রাজধানী কোহিমার কাছে কিসামায় হতে যাওয়া বার্ষিক হর্নবিল উৎসব থেকে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ছয়টি গোষ্ঠীর নাম প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে। ইএনপিও কয়েক মাস আগে তাদের এলাকায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল বলে জানা গেছে।
“আমাদের লোকজন যখন নিহত হচ্ছে তখন কীভাবে উৎসবে নাচবো আমরা?” এক বিবৃতিতে বলেছে ইএনপিও। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সীমান্তের মন জেলার ওই এলাকাটিতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান চালাতে গিয়ে ‘বিপর্যয়’ ঘটে এবং এতে নিরাপত্তা বাহিনীর এক জওয়ানও নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনী তিরু-ওটিং সড়কে একটি অতর্কিত আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু গ্রামবাসীদের বিদ্রোহী ভেবে তাদের ওপর হামলা চালায়।
গুলিতে গ্রামবাসীরা নিহত হওয়ার পর স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দলটিকে ঘেরাও করে ফেলে। আক্রান্ত হওয়ার পর ‘আত্মরক্ষার্থে’ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গুলি করলে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয় বলে পুলিশের সূত্রগুলো এনডিটিভিকে জানিয়েছে। এ সময় উত্তেজিত জনতা সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গতকাল রোববার সকালে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বেসামরিকদের হত্যাকা-কে ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ তদন্ত দল’ ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।