ঢাকা ১০:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

ভুলে ভরা মহাপরিকল্পনায় থমকে ডিএসসিসির উন্নয়ন কাজ

  • আপডেট সময় : ১০:৩৯:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

দুই বছরেও মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেনি ডিএসসিসি। ব্যয় হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এ অবস্থায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাসময়েই সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভুলে তা ভেস্তে গেছে। খসড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করেনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত সেকেন্ডারি সোর্স থেকে নিয়েছে। জরিপ পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডও তাদের কাছে নেই। এছাড়া পরিকল্পনা করার আগে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এসব নানাবিধ কারণে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি। এতে মূলে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মেয়র তাপসেরই। তবে এ ব্যর্থতার দায় শুধু পরামর্শক কমিটিরই নয়, ডিএসসিসিরও দায় দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। তারা বলছেন, ডিএসসিসি যে প্রতিষ্ঠানকে মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে দায়িত্ব দিয়েছিল, সে প্রতিষ্ঠানের পুরোপুরি দক্ষতা আছে কি না তা আগে ভালো করে যাচাই করা দরকার ছিল। যথাযথভাবে এ যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা গেলে মহাপরিকল্পনার সুফল পেতেন নাগরিকেরা। এখন মহাপরিকল্পনা না থাকায় ডিএসসিসির নতুন ১৮টি ওয়ার্ড এবং কামরাঙ্গীরচর অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে কোনো কাজ করতে পারছে না সংস্থাটি।
২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি ওই পাঁচটি রূপরেখা দিয়ে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। এর তিনদিন পর ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ এবং এর ১৫ দিন পর ১৬ মে মেয়র হিসেবে শপথ নেন। একই সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহারের পাঁচ রূপরেখা পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন তিনি।
ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগ সূত্র জানায়, পরের বছর ২০২১ সালের ২৪ জুন ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট লিমিটেড (ডিডিসিএল) ও সাতত্য আর্কিটেকচার নামের দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে চুক্তি করে ডিএসসিসি। শুরুতে এ চুক্তির মেয়াদকাল ছিল এক বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত। পরে দুই দফায় ছয় মাস করে আরও এক বছর সময় বাড়ানো হয়। গত ২৪ জুন বর্ধিত মেয়াদকালও শেষ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও ডিএসসিসির কারিগরি কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠান দুটি। এজন্য কারিগরি কমিটি ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে। অথচ এরই মধ্যে মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে আড়াই কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছে দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএসসিসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএসসিসির এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের মুখ্য ভূমিকায় ছিল সংস্থাটির নগর পরিকল্পনা বিভাগ। তারা দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাছাই করেছে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নগর পরিকল্পনা কাজের অভিজ্ঞতা নেই, তারা মূলত স্থাপত্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে মহাপরিকল্পনার কাজটি যথাযথভাবে হয়নি। এজন্য ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগকে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। তবে ডিডিসিএল ও সাতত্য আর্কিটেকচারের পরিকল্পনা তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে দাবি করছেন ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডিডিসিএলের দক্ষতা যাচাই করেই তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কাজটি ঠিকমত করেনি। তাদের পরিকল্পনায় অনেক গাফিলতি আছে। যা তাদের মহাপরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়ায় উঠে এসেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যর্থতার দায় নগর পরিকল্পনা বিভাগেরও কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা। এখানে এককভাবে নগর পরিকল্পনা বিভাগ দায়ী হতে পারে না। সাড়ে তিন বছর আগের মহাপরিকল্পনাটি এখানেই থেমে যাবে নাকি নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে কোনো উত্তর মেলেনি সংস্থাটির এ কর্মকর্তার কাছ থেকে।
মহাপরিকল্পনা নিয়ে কারিগরি কমিটির যত আপত্তি: গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ডিএসসিসির কারিগরি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২৬ জুলাই কার্যবিবরণী চূড়ান্ত করা হয়। ওই প্রতিবেদনে কমিটির সদস্যদের মতামত উঠে এসেছে। কারিগরি কমিটির কার্যবিবরণীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে কারিগরি কমিটি। ব্যর্থতার দায় চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। এরমধ্যে কারিগরি কমিটির সভায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের ফেলো সদস্য স্থপতি সালমা আউয়াল শফি বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা অচল হয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে; যেটা বাস্তবে সঠিক নয়। এছাড়া মতিঝিল এলাকার পুনরুদ্ধার ও আধুনিকায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, কামরাঙ্গীরচরের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে চার লাখ লোকের বসবাস। সেখানকার পুনর্বাসন পরিকল্পনা, আর্থসামাজিক গবেষণা, সাইট সিলেকশনের গবেষণাগুলো খসড়া প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। সেসব তথ্য ছাড়া বাস্তবতানির্ভর পরিকল্পনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদস্য মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে সরবরাহ করা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম বা ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (জিআইএস) ডেটা সেকেন্ডারি সোর্স থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রচুর ভুল রয়েছে। জরিপসহ প্রয়োজনীয় অনেক ক্ষেত্রের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। অনেক অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। বিদ্যমান অবস্থা ও প্রস্তাবিত তথ্যের মধ্যেও বিস্তর ফারাক।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দুটির জমা দেওয়া প্রতিবেদনগুলোর কোনোটিরই সার্ভে প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শফিক-উর রহমান বলেন, সার্ভে প্রতিবেদনের তথ্য ছাড়া বাস্তবনির্ভর পরিকল্পনা প্রস্তুত করার সুযোগ নেই। ফকিরখালী ইকো-স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা, মতিঝিলের আধুনিকায়ন, হেরিটেজ সংরক্ষণ ও ওয়ার্ড অ্যাকশন প্ল্যানের প্রতিবেদনগুলো দাখিল করা হয়েছে। যেগুলো অত্যন্ত অযৌক্তিক ও অবাস্তবায়নযোগ্য।
সভায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নগর পরিকল্পনাবিদ মো. নাহমাদুল হাসান বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শুধু দুই ধরনের সড়কের কথা বলা হয়েছে। অথচ নগর পরিকল্পনায় আরটেরিয়াল রোড, সেকেন্ডারি এবং লোকাল রোডের পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সেসব তথ্য নেই। কামরাঙ্গীরচর বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেখানে ৫০ তলাবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হবে। তখন সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো দিয়ে পুরো এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
নাহমাদুল হাসান বলেন, এছাড়া ওই এলাকার সঙ্গে মেট্রোরেলের যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া দরকার ছিল। এক্ষেত্রে এমআরটি লাইন-৬-এর সংযোগ করার প্রস্তাব রাখা দরকার; যা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়নি। এছাড়া ওই এলাকায় বাণিজ্যিক অঞ্চল হলে দুপাশের বুড়িগঙ্গার দূষণ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে; সেসব বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।
যে কোনো পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই অত্যন্ত জরুরি, যেটা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়নি উল্লেখ করে ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সমন্বিত উন্নয়নে ঢাকা ওয়াসার পরিকল্পনা ও পরিচালনাধীন সমীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় ও সময়াবদ্ধ উন্নয়ন কৌশল, বিনিয়োগ কৌশল মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি একাধিকবার বলা হলেও তা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলে তা বাস্তবনির্ভর হবে না।
ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান সভায় বলেন, মেয়র তাপসের তিন বছরের বেশি দায়িত্ব পালন শেষ হলেও মহাপরিকল্পনা তৈরির কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। এ কাজে মুখ্য পেশাদার জনবলও নিযুক্ত করা হয়নি। পাশাপাশি জরিপ পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ডিএসসিসির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কামরাঙ্গীরচরের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের প্লটের পরিমাণ ও লোকেশন ম্যাপ নিয়ে বছরাধিকাল থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। সংস্থার স্বার্থে চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত ও প্রযোজ্য বিধি অনুসারে এবং দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ, দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্ত কমিটি গঠন এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ডিএসসিসির মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ডিডিসিএল এবং সাতত্য আর্কিটেকচারের দলপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন গোলাম হাফিজ। এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাতত্য আর্কিটেকের প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট রফিক আজম বলেন, এই মহাপরিকল্পনা করার আগে আমরা ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে একাধিকবার করে গিয়েছি। সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে কামরাঙ্গীরচরকে অগ্রাধিকার দিয়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের শতভাগ কাজ করেছি। কিন্তু আমরা সিটি করপোরেশন থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তেমন সহযোগিতা পায়নি। তথ্য চেয়ে তাদের চিঠি দিলেও তারা কোনো ফিডব্যাক দিতেন না। এক কথায় আমরা সিটি করপোরেশন থেকে তেমন কোনো সাপোর্ট পায়নি।
তিনি বলেন, এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ডিএসসিসির আট কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে মাত্র দুই কোটি টাকা দিয়েছে। আমরা মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে দেশের সব বিখ্যাত পরিকল্পনাবিদ, আর্কিটেকদের যুক্ত করেছি। তারা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষ। এখন সিটি করপোরেশন বলছে মহাপরিকল্পনায় ত্রুটি রয়েছে। আমরা বলেছি, কোথায় কোথায় ত্রুটি সেটা আমাদের লিখিতভাবে জানাতে। কিন্তু এ কাজটিও তারা ঠিকমত করছেন না। এখন সিটি করপোরেশন যদি সব ত্রুটি চিহ্নিত করে আমাদের দেয়, আমরা সেগুলো সংশোধন করে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা জমা দিতে পারবো।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কারিগরি কমিটির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, মহাপরিকল্পনা তৈরির গুরুত্ব বিবেচনায় দুই ধাপে ছয় মাস করে এক বছর সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু তাদের প্রতিবেদন বাস্তবনির্ভর নয়। যে কারণে সভায় কারিগরি কমিটির সদস্যরা আপত্তি জানিয়েছেন। ডিডিসিএল ও সাতত্য আর্কিটেকচার কেন কাজটি যথাযথভাবে করতে পারল না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেদনের যে অংশগুলো নিয়ে আপত্তি উঠেছে, তা সংশোধন করতেও বলা হয়েছে। তারা যদি সঠিক ব্যাখ্যা এবং সংশোধন করে মহাপরিকল্পনার খসড়া দিতে পারেন, তা হলে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে। অন্যথায় বিকল্প ভাবতে হবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভুলে ভরা মহাপরিকল্পনায় থমকে ডিএসসিসির উন্নয়ন কাজ

আপডেট সময় : ১০:৩৯:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩

দুই বছরেও মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেনি ডিএসসিসি। ব্যয় হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এ অবস্থায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাসময়েই সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভুলে তা ভেস্তে গেছে। খসড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করেনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত সেকেন্ডারি সোর্স থেকে নিয়েছে। জরিপ পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডও তাদের কাছে নেই। এছাড়া পরিকল্পনা করার আগে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এসব নানাবিধ কারণে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি। এতে মূলে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মেয়র তাপসেরই। তবে এ ব্যর্থতার দায় শুধু পরামর্শক কমিটিরই নয়, ডিএসসিসিরও দায় দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। তারা বলছেন, ডিএসসিসি যে প্রতিষ্ঠানকে মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে দায়িত্ব দিয়েছিল, সে প্রতিষ্ঠানের পুরোপুরি দক্ষতা আছে কি না তা আগে ভালো করে যাচাই করা দরকার ছিল। যথাযথভাবে এ যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা গেলে মহাপরিকল্পনার সুফল পেতেন নাগরিকেরা। এখন মহাপরিকল্পনা না থাকায় ডিএসসিসির নতুন ১৮টি ওয়ার্ড এবং কামরাঙ্গীরচর অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে কোনো কাজ করতে পারছে না সংস্থাটি।
২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি ওই পাঁচটি রূপরেখা দিয়ে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। এর তিনদিন পর ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ এবং এর ১৫ দিন পর ১৬ মে মেয়র হিসেবে শপথ নেন। একই সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহারের পাঁচ রূপরেখা পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন তিনি।
ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগ সূত্র জানায়, পরের বছর ২০২১ সালের ২৪ জুন ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট লিমিটেড (ডিডিসিএল) ও সাতত্য আর্কিটেকচার নামের দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে চুক্তি করে ডিএসসিসি। শুরুতে এ চুক্তির মেয়াদকাল ছিল এক বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত। পরে দুই দফায় ছয় মাস করে আরও এক বছর সময় বাড়ানো হয়। গত ২৪ জুন বর্ধিত মেয়াদকালও শেষ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও ডিএসসিসির কারিগরি কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠান দুটি। এজন্য কারিগরি কমিটি ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে। অথচ এরই মধ্যে মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে আড়াই কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছে দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএসসিসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএসসিসির এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের মুখ্য ভূমিকায় ছিল সংস্থাটির নগর পরিকল্পনা বিভাগ। তারা দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাছাই করেছে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নগর পরিকল্পনা কাজের অভিজ্ঞতা নেই, তারা মূলত স্থাপত্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে মহাপরিকল্পনার কাজটি যথাযথভাবে হয়নি। এজন্য ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগকে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। তবে ডিডিসিএল ও সাতত্য আর্কিটেকচারের পরিকল্পনা তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে দাবি করছেন ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডিডিসিএলের দক্ষতা যাচাই করেই তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কাজটি ঠিকমত করেনি। তাদের পরিকল্পনায় অনেক গাফিলতি আছে। যা তাদের মহাপরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়ায় উঠে এসেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যর্থতার দায় নগর পরিকল্পনা বিভাগেরও কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা। এখানে এককভাবে নগর পরিকল্পনা বিভাগ দায়ী হতে পারে না। সাড়ে তিন বছর আগের মহাপরিকল্পনাটি এখানেই থেমে যাবে নাকি নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে কোনো উত্তর মেলেনি সংস্থাটির এ কর্মকর্তার কাছ থেকে।
মহাপরিকল্পনা নিয়ে কারিগরি কমিটির যত আপত্তি: গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ডিএসসিসির কারিগরি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২৬ জুলাই কার্যবিবরণী চূড়ান্ত করা হয়। ওই প্রতিবেদনে কমিটির সদস্যদের মতামত উঠে এসেছে। কারিগরি কমিটির কার্যবিবরণীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে কারিগরি কমিটি। ব্যর্থতার দায় চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। এরমধ্যে কারিগরি কমিটির সভায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের ফেলো সদস্য স্থপতি সালমা আউয়াল শফি বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা অচল হয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে; যেটা বাস্তবে সঠিক নয়। এছাড়া মতিঝিল এলাকার পুনরুদ্ধার ও আধুনিকায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, কামরাঙ্গীরচরের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে চার লাখ লোকের বসবাস। সেখানকার পুনর্বাসন পরিকল্পনা, আর্থসামাজিক গবেষণা, সাইট সিলেকশনের গবেষণাগুলো খসড়া প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। সেসব তথ্য ছাড়া বাস্তবতানির্ভর পরিকল্পনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদস্য মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে সরবরাহ করা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম বা ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (জিআইএস) ডেটা সেকেন্ডারি সোর্স থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রচুর ভুল রয়েছে। জরিপসহ প্রয়োজনীয় অনেক ক্ষেত্রের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। অনেক অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। বিদ্যমান অবস্থা ও প্রস্তাবিত তথ্যের মধ্যেও বিস্তর ফারাক।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দুটির জমা দেওয়া প্রতিবেদনগুলোর কোনোটিরই সার্ভে প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শফিক-উর রহমান বলেন, সার্ভে প্রতিবেদনের তথ্য ছাড়া বাস্তবনির্ভর পরিকল্পনা প্রস্তুত করার সুযোগ নেই। ফকিরখালী ইকো-স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা, মতিঝিলের আধুনিকায়ন, হেরিটেজ সংরক্ষণ ও ওয়ার্ড অ্যাকশন প্ল্যানের প্রতিবেদনগুলো দাখিল করা হয়েছে। যেগুলো অত্যন্ত অযৌক্তিক ও অবাস্তবায়নযোগ্য।
সভায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নগর পরিকল্পনাবিদ মো. নাহমাদুল হাসান বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শুধু দুই ধরনের সড়কের কথা বলা হয়েছে। অথচ নগর পরিকল্পনায় আরটেরিয়াল রোড, সেকেন্ডারি এবং লোকাল রোডের পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সেসব তথ্য নেই। কামরাঙ্গীরচর বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেখানে ৫০ তলাবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হবে। তখন সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো দিয়ে পুরো এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
নাহমাদুল হাসান বলেন, এছাড়া ওই এলাকার সঙ্গে মেট্রোরেলের যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া দরকার ছিল। এক্ষেত্রে এমআরটি লাইন-৬-এর সংযোগ করার প্রস্তাব রাখা দরকার; যা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়নি। এছাড়া ওই এলাকায় বাণিজ্যিক অঞ্চল হলে দুপাশের বুড়িগঙ্গার দূষণ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে; সেসব বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।
যে কোনো পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই অত্যন্ত জরুরি, যেটা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়নি উল্লেখ করে ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সমন্বিত উন্নয়নে ঢাকা ওয়াসার পরিকল্পনা ও পরিচালনাধীন সমীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় ও সময়াবদ্ধ উন্নয়ন কৌশল, বিনিয়োগ কৌশল মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি একাধিকবার বলা হলেও তা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলে তা বাস্তবনির্ভর হবে না।
ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান সভায় বলেন, মেয়র তাপসের তিন বছরের বেশি দায়িত্ব পালন শেষ হলেও মহাপরিকল্পনা তৈরির কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। এ কাজে মুখ্য পেশাদার জনবলও নিযুক্ত করা হয়নি। পাশাপাশি জরিপ পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ডিএসসিসির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কামরাঙ্গীরচরের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের প্লটের পরিমাণ ও লোকেশন ম্যাপ নিয়ে বছরাধিকাল থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। সংস্থার স্বার্থে চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত ও প্রযোজ্য বিধি অনুসারে এবং দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ, দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্ত কমিটি গঠন এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ডিএসসিসির মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ডিডিসিএল এবং সাতত্য আর্কিটেকচারের দলপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন গোলাম হাফিজ। এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাতত্য আর্কিটেকের প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট রফিক আজম বলেন, এই মহাপরিকল্পনা করার আগে আমরা ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে একাধিকবার করে গিয়েছি। সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে কামরাঙ্গীরচরকে অগ্রাধিকার দিয়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের শতভাগ কাজ করেছি। কিন্তু আমরা সিটি করপোরেশন থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তেমন সহযোগিতা পায়নি। তথ্য চেয়ে তাদের চিঠি দিলেও তারা কোনো ফিডব্যাক দিতেন না। এক কথায় আমরা সিটি করপোরেশন থেকে তেমন কোনো সাপোর্ট পায়নি।
তিনি বলেন, এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ডিএসসিসির আট কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে মাত্র দুই কোটি টাকা দিয়েছে। আমরা মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে দেশের সব বিখ্যাত পরিকল্পনাবিদ, আর্কিটেকদের যুক্ত করেছি। তারা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষ। এখন সিটি করপোরেশন বলছে মহাপরিকল্পনায় ত্রুটি রয়েছে। আমরা বলেছি, কোথায় কোথায় ত্রুটি সেটা আমাদের লিখিতভাবে জানাতে। কিন্তু এ কাজটিও তারা ঠিকমত করছেন না। এখন সিটি করপোরেশন যদি সব ত্রুটি চিহ্নিত করে আমাদের দেয়, আমরা সেগুলো সংশোধন করে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা জমা দিতে পারবো।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কারিগরি কমিটির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, মহাপরিকল্পনা তৈরির গুরুত্ব বিবেচনায় দুই ধাপে ছয় মাস করে এক বছর সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু তাদের প্রতিবেদন বাস্তবনির্ভর নয়। যে কারণে সভায় কারিগরি কমিটির সদস্যরা আপত্তি জানিয়েছেন। ডিডিসিএল ও সাতত্য আর্কিটেকচার কেন কাজটি যথাযথভাবে করতে পারল না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেদনের যে অংশগুলো নিয়ে আপত্তি উঠেছে, তা সংশোধন করতেও বলা হয়েছে। তারা যদি সঠিক ব্যাখ্যা এবং সংশোধন করে মহাপরিকল্পনার খসড়া দিতে পারেন, তা হলে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে। অন্যথায় বিকল্প ভাবতে হবে।