ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক: যদি বাংলা ও ইংরেজির বাইরে অন্য কোনো বিদেশি ভাষা শিখতে পারেন, চাকরির জগতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার আপনার সামনে খুলে যাবে। যেকোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিতেই একাধিক ভাষায় পারদর্শী কর্মীদের কদর রয়েছে। বাংলাদেশেও রয়েছে জাতিসংঘের অধীন বিভিন্ন সংস্থা, বিদেশি এনজিও এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দূতাবাস, যেখানে আকর্ষণীয় চাকরি পাওয়ার জন্য ভিনদেশি ভাষায় দক্ষতাসম্পন্ন লোকবল প্রয়োজন হয়। ঢাকায় আপনি ইংরেজির পাশাপাশি শিখতে পারেন ফরাসি, চীনা, আরবি, জাপানি, কোরিয়ান, জার্মান, স্প্যানিশ, রুশ প্রভৃতি ভাষা।
ভাষাজ্ঞান ব্যবধান গড়ে দেয়: আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে একাধিক ভাষায় দক্ষতা থাকলে আপনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে বাড়তি যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। জীবনবৃত্তান্তে (সিভি) বিদেশি ভাষাজ্ঞানের বিষয়টি তুলে ধরতে পারলে নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন আপনি। এখন কথা হলো, পেশাজীবনে অগ্রগতির জন্য কোন ভাষাটি শিখবেন? যুক্তরাজ্যভিত্তিক কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিবিআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে যথাক্রমে জার্মান (৫০%), ফরাসি (৪৯%) ও স্প্যানিশ (৩৭%) ভাষার। হিসাবটা যুক্তরাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি করা হলেও এতে আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারের একটা চিত্র ফুটে ওঠে।
বিকাশমান বাজারটাকে জানুন: বিশ্ব-বাণিজ্যে লাতিন আমেরিকাও ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় চাকরি করতে গেলে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষা জানতে হবে। আবার আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা ওইসিডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার মানে, চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তার মানে এই নয় যে আপনাকে অনর্গল চীনা ভাষায় কথা বলতে জানতে হবে। কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার মতো মৌলিক ধারণা থাকলেই আপনি স্থানীয় সংস্কৃতিটা বুঝতে পারবেন। আর শিখতে গিয়ে, বলতে গিয়ে ভুল তো হবেই-তা নিয়ে ভয় পেলে চলবে না। মনে রাখবেন, আপনি অন্যদের ভাষা শেখার চেষ্টা করলে যেকোনো দেশের মানুষই সানন্দে সহযোগিতা করবে।
পেশাগত অগ্রগতির জন্য যাঁরা নতুন ভাষা শিখতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ:
১. সঠিক খোঁজখবর: যে খাতে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইছেন, তার অর্থনৈতিক পরিবেশ ও পরিধি সম্পর্কে জেনে নিন। দৈনিক সংবাদপত্রগুলো পড়ুন-আপনি যে ভাষা শিখছেন সেই ভাষার। এতে অর্থনৈতিক অবস্থা ও প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে পারবেন, যা পরে আপনার কাজে লাগবে।
২. কার্যকর পদ্ধতি বাছাই: ভাষা শেখা যায় নানা উপায়ে। তবে কোনো দেশে গিয়ে সেখানকার ভাষা শিখলে সবচেয়ে ভালো হয়। তা ছাড়া শ্রেণিকক্ষে, সিডি বাজিয়ে বা ইন্টারনেটেও শেখা যায়। নিজের আওতার মধ্যে যে পদ্ধতিটা সবচেয়ে সুবিধাজনক মনে হয়, সেটা বেছে নেওয়াই ভালো। তবে নিজস্ব কিছু কৌশলও বের করে নিতে পারেন, যেগুলো যেকোনো পরিবেশে আপনার সহায়ক হবে, সেটা শ্রেণিকক্ষভিত্তিক হোক আর প্রযুক্তিনির্ভরই হোক। প্রথম প্রথম ভুল হলেও তাকে পাত্তা না দিয়ে নতুন ভাষায় বেশি বেশি কথা বলতে হবে, অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। নিজস্ব ভাষার সঙ্গে নতুন ভাষাটির ব্যাকরণ ও সরাসরি অনুবাদ মিলিয়ে শিখতে গেলে ঝামেলায় পড়তে পারেন। তার চেয়ে ভালো হয় সরাসরি নতুন ভাষার জগতে প্রবেশের চেষ্টা করলে। আজকাল স্মার্টফোন বা ট্যাবে ভাষা শিক্ষার বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন বা অ্যাপ ব্যবহার করেও সুফল পাওয়া যায়। এতে চলাফেরার সময় বা আপনি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থাকেন, ভাষা শেখার কাজটা চালিয়ে যেতে পারবেন।
৩. ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ: বিদেশে বসবাস ও কাজ করার মধ্য দিয়ে আপনি কোনো ভাষা ও সংস্কৃতি সবচেয়ে ভালো শিখতে পারবেন। এতে ভাষার পাশাপাশি আপনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও আচার-আচরণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবেন। স্থানীয় ভাষায় কথা বলার পাশাপাশি যোগাযোগের দক্ষতাও বাড়াতে পারবেন। নতুন একটি ভাষায় মৌলিক যোগাযোগের দক্ষতা খুবই ফলপ্রসূ এবং কার্যকর একটি অর্জন। ভাষার সবচেয়ে সহজ নিয়মগুলোও যদি তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করার সুযোগ পান, আপনার শেখার উৎসাহটা অনেক বেড়ে যাবে।
বিদেশি ভাষা শিখতে গেলে আপনাকে আবার শিশুদের মতো করে শিখতে হবে। আর এভাবেই একটু একটু করে ভাষার নতুন এক পৃথিবীতে প্রবেশ করবেন।
ভাষা শিখে নিজের সুযোগ বাড়ান
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ