ঢাকা ১১:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি

  • আপডেট সময় : ০৯:২১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক:  ১ ফেব্রুয়ারি। বছরঘুরে আবারও ফিরে এলো রক্তস্নাত এই মাস। বাঙালির জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মাসটির পরিচিতি ‘ভাষার মাস’ হিসাবে। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল স্মৃতিমাখা এ মাস এলেই বিদ্যুৎচমকের মতো মনে ভিড় জমায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর-এসব ভাষা শহিদদের নাম। সাতচল্লিশে দেশভাগের পরেই যখন বাঙালির ভাষার ওপর আঘাত এলো, তখন বুকের রক্ত ঢেলে লেখা হলো এক নতুন ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের সেই লড়াই থেকে সঞ্চিত শক্তিই পরবর্তীকালে যুগিয়েছে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা।

বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, জাতির স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভাষা আন্দোলন সবসময় আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে। এখনো জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। ভাষা আন্দোলন তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবসকে ঘিরে প্রতিবছর এ মাসের শুরু থেকেই নানা কর্মসূচির আয়োজন হয়ে থাকে। ৭৩ বছর আগে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাজপথে প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই সব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি, এসব আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্য।

‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণা এ দেশের সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ তুলেছিল। বাংলা ভাষার সমান মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলার মানুষ রাজপথে নেমে পড়ে। দেশের প্রতিটি শহর-বন্দরে চলতে থাকে মিটিং-মিছিল। কিন্তু এই আন্দোলন দমনে নেমে পড়ে তৎকালীন সরকার। ঢাকা শহরে নিষিদ্ধ করা হয় মিছিল-সমাবেশ। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে রাস্তায় নামে প্রতিবাদী জনতা।

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে নিহত হন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না-জানা আরও অনেকে।

পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য এমন মহান আত্মত্যাগের ঘটনা বিরল। বাংলার দামাল সন্তানদের এই আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে দিনটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে পালিত হয়।

আজ ১ ফেব্রুয়ারি ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসহ রাজধানী ও বিভিন্ন জেলা শহরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি

আপডেট সময় : ০৯:২১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক:  ১ ফেব্রুয়ারি। বছরঘুরে আবারও ফিরে এলো রক্তস্নাত এই মাস। বাঙালির জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মাসটির পরিচিতি ‘ভাষার মাস’ হিসাবে। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল স্মৃতিমাখা এ মাস এলেই বিদ্যুৎচমকের মতো মনে ভিড় জমায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর-এসব ভাষা শহিদদের নাম। সাতচল্লিশে দেশভাগের পরেই যখন বাঙালির ভাষার ওপর আঘাত এলো, তখন বুকের রক্ত ঢেলে লেখা হলো এক নতুন ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের সেই লড়াই থেকে সঞ্চিত শক্তিই পরবর্তীকালে যুগিয়েছে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা।

বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, জাতির স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভাষা আন্দোলন সবসময় আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে। এখনো জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। ভাষা আন্দোলন তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবসকে ঘিরে প্রতিবছর এ মাসের শুরু থেকেই নানা কর্মসূচির আয়োজন হয়ে থাকে। ৭৩ বছর আগে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাজপথে প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই সব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি, এসব আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্য।

‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণা এ দেশের সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ তুলেছিল। বাংলা ভাষার সমান মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলার মানুষ রাজপথে নেমে পড়ে। দেশের প্রতিটি শহর-বন্দরে চলতে থাকে মিটিং-মিছিল। কিন্তু এই আন্দোলন দমনে নেমে পড়ে তৎকালীন সরকার। ঢাকা শহরে নিষিদ্ধ করা হয় মিছিল-সমাবেশ। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে রাস্তায় নামে প্রতিবাদী জনতা।

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে নিহত হন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না-জানা আরও অনেকে।

পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য এমন মহান আত্মত্যাগের ঘটনা বিরল। বাংলার দামাল সন্তানদের এই আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে দিনটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে পালিত হয়।

আজ ১ ফেব্রুয়ারি ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসহ রাজধানী ও বিভিন্ন জেলা শহরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।