নীলফামারী সংবাদদাতা: আলুর ভান্ডার বলে খ্যাত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে এখন মাঠজুড়ে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ভালো দামের আশায় মাঠের পর মাঠ উঁচু সমতল জমিতে আগাম জাতের অর্থাৎ (৫৫-৬০ দিনে) সেভেন জাতের আলুর বীজ রোপণ করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
মৌসুমের প্রথম দিকে ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে আলু উৎপাদন হলে ভালো দাম পাওয়া যাবে এমনটাই আশা ওই এলাকার কৃষকদের। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম ধান কেটে মাঠে সেভেন জাতের আলুসহ গ্র্যানুল্যা, সাকিতা, কারেজ ও জামপ্লাস আলু রোপণ করছে কৃষক।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বল্পমেয়াদী আউশ, আগাম জাতের ধান কাটা, মাড়াই শেষ করে সেই জমিতে সেভেন জাতের আলু রোপণের জন্য হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ, হাল চাষ, আগাছা পরিষ্কার, সেচের জন্য ক্যানেল তৈরি ও জৈবসার প্রয়োগ করছেন তারা।
স্থানীয় আলু চাষি আব্দুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক কেজি নতুন আলু বাজারে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। তখন বাজারে চাহিদাও প্রচুর। ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে বড় বড় পাইকারি মহাজনরা এসে আগাম বায়না করে যান। পরে মাঠ থেকে ট্রাকে করে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, এককেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় ৩৫-৪০ টাকা আর এককেজি নতুন আলু বিক্রি হবে ৮০-১০০ টাকা। এতে প্রতি কেজিতে লাভ হবে ৫০-৬০ টাকা।
কৃষিনির্ভর উত্তরের জেলা নীলফামারীর অন্যতম হলো কিশোরগঞ্জ উপজেলা আলু চাষের ভান্ডার বলে সারা দেশে পরিচিত। এখানকার মাটি দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ হওয়ায় বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। এর মধ্যে আলু একটি উল্লেখযোগ্য ফসল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে চলছে আলুর বীজ বপন ও জমি তৈরির কাজ। বসে নেই কৃষি শ্রমিকরাও। এতে বেড়েছে শ্রমিকের চাহিদা, বাড়ছে মজুরিও। নারী পুরুষ মিলে সমানতালে চলছে আলু রোপণের কাজ।
জানতে চাইলে উপজেলার রণচন্ডী ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের কৃষক রহিদুল ইসলাম বলেন, উঁচু জমিতে গত বছর দেড় বিঘা জমির আলু ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। তাতে খরচ বাদে অর্ধেক টাকা লাভ হয়েছে। এবারও বেশি লাভের আশায় আড়াই বিঘা (৮০ শতাংশ) জমিতে ৫৫ দিনে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের আলু বীজ রোপণ করছি। আশা করি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভবান হতে পারবো।
একই উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, ১৬ বিঘা (৪৮০ শতাংশ) জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছি। বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তাদের লাভ তত বেশি হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগাম আলু চাষে কৃষকের কোনো লোকসান বা ক্ষতির আশঙ্কা নাই।
এখানকার জমি উঁচু ও বালু মিশ্রিত হাওয়ায়, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আগাম আলু চাষে তেমন কোনো লোকসানের ভয় থাকে না। বাজারে চড়া দাম পেলে আলু বিক্রি করে গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিয়ে লাভবান হওয়া যাবে।
একই গ্রামের কৃষক আসাদুল হক বলেন, কৃষিই আমাদের একমাত্র জীবিকার উৎস। ফলে গত বছরও সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছিলাম। প্রথমদিকে কিছুটা লাভ হলেও পড়ে বাজারে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কিছুটা লোকসান গুনতে হয়েছে। তবুও এবার লাভের আশায় আলু রোপণ করেছি। আশা করি, গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিয়ে লাভবান হতে পারব।
আলু চাষি মজিবর রহমান বলেন, ২৩০ বস্তা আলু হিমাগার থেকে এনে সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছি। বাকি আলু বাজারে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বীজ হিসেবে বিক্রি করছি। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী প্রতি কেজি আলুর দাম পড়েছে ৩০ টাকা। এবার বাজার খারাপ হওয়ায় কেজিতে ১০-১২ টাকা লোকসান হয়েছে। তারপরও লাভের আশায় ওই পরিমাণ জমিতে আলু লাগিয়েছি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে। আগাম জাতের ধান কেটে কৃষকেরা আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ছাড়াও বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু বেলে, দোঁআশ ও দোঁআশ মাটিতে আলু চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত জেলার কিশোরগঞ্জে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু মাঠে রোপণ করেছে কৃষক। ফলে আলুর ভান্ডার বলে পরিচিত কিশোরগঞ্জ। গত বছর জেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। এবার চলতি মৌসুমে আগামজাতের আলু ৮ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
এসি/আপ্র/১৮/১০/২০২৫