ঢাকা ০৭:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ভালো কাজে যেমন পুরস্কার, খারাপ কাজে শাস্তিও হবে: প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:০৭:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভালো কাজ করলে যেমন পুরস্কার পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনি খারাপ কাজের জন্যও কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলে সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ এর উদ্বোধন এবং ২০২০ ও ২০২১ সালের জনপ্রশাসন পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে আপনারা অনেক বেশি জানার সুযোগ পান, মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানতে পারেন। কীভাবে একেকটা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায়, সেটা আপনারা সব থেকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেন।
“এবং আমি আশা করি, সেভাবেই আপনারা ভবিষ্যত পরিকল্পনা কীভাবে নেওয়া যায়, কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়, কীভাবে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন যেন আমরা যাতে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, সেটাই আমরা চাই।”
জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ৩৫ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে এ অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের জন্য জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৫টি এবং ২০২১ সালের জন্য ২০টি পদক দেওয়া হয় এ অনুষ্ঠানে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অনুষ্ঠানে তাই দুই বছরের পদক একসঙ্গে দেওয়া হল।
জাতীয় পর্যায়ে তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারপ্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক এবং সনদ পেয়েছেন । এর বাইরে জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে জনপ্রতি এক লাখ টাকা এবং দলগত ভূমিকার জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এইটুকু বলব, ভালো কাজের আপনি যেমন পুরস্কার পাবেন, আবার কেউ যদি কোনো খারাপ কিছু করে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই। তাদেরও কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে, এই নিয়মটা থাকতে হবে। সেটাও অবশ্যই আমরা করব।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে অনুষ্ঠানে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে, তারা জনগনের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণেরৃ ভাই, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে’।
“অর্থাৎ আপনারা তো এই দেশেরই মানুষ। আপনারা তো পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। কাজেই এই বাংলাদেশের সব জায়গায় তো আপনার আত্মীয়, স্বজন সবাই জড়িয়ে আছে। কাজেই বাংলাদেশ যত উন্নত হবে আপনার আপনজনরাই তো সুন্দর জীবন পাবেন, ভবিষ্যত পাবেন। সেই কথা চিন্তা করেই দেশের জন্য কাজ করবেন। আপনাদের পেশাদরিত্ব, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা যাতে বজায় থাকে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি যেন দেশের কাজে লাগে, সেটাই আমরা চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে জাতির পিতা সরকারি কর্মচারীদের অনুশাসন দিয়ে বলেছিলেন, তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে তারা ‘শাসক নন, সেবক’।
“জাতির পিতা তার এই চিন্তা ধারার প্রতিফলন ঘটান আমাদের সংবিধানে। সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট কিন্তু লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। কাজেই এটা কিন্তু সংবিধানের নির্দেশ, যেই সংবিধান নিয়ে আমাদের এই দেশটা পরিচালিত হচ্ছে, সেটা আশা করি সকলে মনে রাখবেন।”
মহামারীর এই সময়ে বাজেট দেওয়া কঠিন ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “সেই বাজেট যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন মান ঠিক রেখে বাস্তবায়ন করা যায়, আর যত্রতত্র যেখানে সেখানে শুধুমাত্র একটা কিছু নির্মাণের জন্য নির্মাণ যেন না হয়, যেটা আদতে প্রয়োজন দেশের জন্য, মানুষের জন্য, সেই রকমই যেন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পটা হয়, পরিকল্পনাটা হয়।”
করোনাভাইরাসের মহামারী দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাসহ সবক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি করেছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, “এখান থেকে আমাদের যত দ্রুত মুক্ত হওয়া যায়, বাংলাদেশকে মুক্ত করা যায়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলে, সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে।”
জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে ‘ব্যাপকভাবে’ করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ভ্যাকসিন কিনতে যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা দেওয়া হবে। “ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরি করব, যাতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়। সেটাই আমরা করব।”
ইতোমধ্যে দেশের ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষের টিকা পাওয়ার তথ্য দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের কোনো মানুষ, টিকা পাওয়ার যাদের বয়স হয়েছে, তারা কেউ বাদ যাবে না। আমাদের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলের জন্য এই টিকা ক্রয় করতে থাকব, আনতে থাকব এবং দিতে থাকব। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা অবশ্যই করব।” সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জীবনমানের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন ৩৫ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান : সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিতে ৩২ জন সরকারি কর্মকর্তা (দলগত ক্ষেত্রের সবাইসহ) ও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ২০২১ ও ২০২০ সালের জনপ্রশাসন পদক দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মনোনীতদের পদক তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা, ২০১৫ (সংশোধিত-২০১৬)’ অনুযায়ী, জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে দুটি ক্ষেত্রে (সাধারণ ও কারিগরি) শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান শ্রেণিতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে (সাধারণ ক্ষেত্র) জনপ্রশাসন পদক-২০২১ পেয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান। ইউনেস্কোতে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে অভিযোজিত প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক তৎপরতার জন্য দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) পদক পেয়েছেন ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন ও তার দল। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীন বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প।
পরিবার পরিচিতি কার্ডের জন্য ব্যক্তিগত (কারিগরি) শ্রেণিতে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, দলগত (কারিগরি) শ্রেণিতে যৌথ মূলধন কোম্পানি বা ফার্মসমূহের পরিদফতরের তৎকালীন নিবন্ধক (বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব) মো. মকবুল হোসেন ও তার দল এবং অর্থ বিভাগ প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে (কারিগরি) পদক পেয়েছে।
জেলা পর্যায়ে কন্যারতেœর (বাল্য বিবাহ রোধ, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী ক্ষমতায়ন সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ) জন্য ব্যক্তিগত শ্রেণিতে (সাধারণ) পঞ্চগড়ের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবিনা ইয়াসমিন (ব্যক্তিগত) এবং দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ও তার দল এই পদক পান।
২০২০ সালের জনপ্রশাসন পদক পান দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) গাজীপুরের কাপাসিয়ার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও তার দল।
ওই বছরের জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে (সাধারণ) পদক পেয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন। দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর রশীদ ও তার দল এ পদক পেয়েছেন। টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক (বর্তমানে ঢাকার ডিসি) মো. শহীদুল ইসলাম ও তার দল এই পদক পেয়েছেন। ২০২০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে (সাধারণ) হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় এই পদক পেয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কারপ্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং নগদ অর্থ। ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং জনপ্রতি ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। দলগত অবদানের জন্য স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও নগদ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ৫০ হাজার টাকা ও সম্মাননাপত্র, দলগতভাবে অবদানের জন্য সম্মাননাপত্র ও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভালো কাজে যেমন পুরস্কার, খারাপ কাজে শাস্তিও হবে: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:০৭:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভালো কাজ করলে যেমন পুরস্কার পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনি খারাপ কাজের জন্যও কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলে সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ এর উদ্বোধন এবং ২০২০ ও ২০২১ সালের জনপ্রশাসন পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে আপনারা অনেক বেশি জানার সুযোগ পান, মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানতে পারেন। কীভাবে একেকটা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায়, সেটা আপনারা সব থেকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেন।
“এবং আমি আশা করি, সেভাবেই আপনারা ভবিষ্যত পরিকল্পনা কীভাবে নেওয়া যায়, কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়, কীভাবে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন যেন আমরা যাতে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, সেটাই আমরা চাই।”
জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ৩৫ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে এ অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের জন্য জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৫টি এবং ২০২১ সালের জন্য ২০টি পদক দেওয়া হয় এ অনুষ্ঠানে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অনুষ্ঠানে তাই দুই বছরের পদক একসঙ্গে দেওয়া হল।
জাতীয় পর্যায়ে তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারপ্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক এবং সনদ পেয়েছেন । এর বাইরে জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে জনপ্রতি এক লাখ টাকা এবং দলগত ভূমিকার জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এইটুকু বলব, ভালো কাজের আপনি যেমন পুরস্কার পাবেন, আবার কেউ যদি কোনো খারাপ কিছু করে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই। তাদেরও কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে, এই নিয়মটা থাকতে হবে। সেটাও অবশ্যই আমরা করব।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে অনুষ্ঠানে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে, তারা জনগনের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণেরৃ ভাই, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে’।
“অর্থাৎ আপনারা তো এই দেশেরই মানুষ। আপনারা তো পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। কাজেই এই বাংলাদেশের সব জায়গায় তো আপনার আত্মীয়, স্বজন সবাই জড়িয়ে আছে। কাজেই বাংলাদেশ যত উন্নত হবে আপনার আপনজনরাই তো সুন্দর জীবন পাবেন, ভবিষ্যত পাবেন। সেই কথা চিন্তা করেই দেশের জন্য কাজ করবেন। আপনাদের পেশাদরিত্ব, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা যাতে বজায় থাকে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি যেন দেশের কাজে লাগে, সেটাই আমরা চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে জাতির পিতা সরকারি কর্মচারীদের অনুশাসন দিয়ে বলেছিলেন, তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে তারা ‘শাসক নন, সেবক’।
“জাতির পিতা তার এই চিন্তা ধারার প্রতিফলন ঘটান আমাদের সংবিধানে। সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট কিন্তু লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। কাজেই এটা কিন্তু সংবিধানের নির্দেশ, যেই সংবিধান নিয়ে আমাদের এই দেশটা পরিচালিত হচ্ছে, সেটা আশা করি সকলে মনে রাখবেন।”
মহামারীর এই সময়ে বাজেট দেওয়া কঠিন ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “সেই বাজেট যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন মান ঠিক রেখে বাস্তবায়ন করা যায়, আর যত্রতত্র যেখানে সেখানে শুধুমাত্র একটা কিছু নির্মাণের জন্য নির্মাণ যেন না হয়, যেটা আদতে প্রয়োজন দেশের জন্য, মানুষের জন্য, সেই রকমই যেন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পটা হয়, পরিকল্পনাটা হয়।”
করোনাভাইরাসের মহামারী দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাসহ সবক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি করেছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, “এখান থেকে আমাদের যত দ্রুত মুক্ত হওয়া যায়, বাংলাদেশকে মুক্ত করা যায়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলে, সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে।”
জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে ‘ব্যাপকভাবে’ করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ভ্যাকসিন কিনতে যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা দেওয়া হবে। “ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরি করব, যাতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়। সেটাই আমরা করব।”
ইতোমধ্যে দেশের ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষের টিকা পাওয়ার তথ্য দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের কোনো মানুষ, টিকা পাওয়ার যাদের বয়স হয়েছে, তারা কেউ বাদ যাবে না। আমাদের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলের জন্য এই টিকা ক্রয় করতে থাকব, আনতে থাকব এবং দিতে থাকব। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা অবশ্যই করব।” সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জীবনমানের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন ৩৫ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান : সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিতে ৩২ জন সরকারি কর্মকর্তা (দলগত ক্ষেত্রের সবাইসহ) ও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ২০২১ ও ২০২০ সালের জনপ্রশাসন পদক দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মনোনীতদের পদক তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা, ২০১৫ (সংশোধিত-২০১৬)’ অনুযায়ী, জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে দুটি ক্ষেত্রে (সাধারণ ও কারিগরি) শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান শ্রেণিতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে (সাধারণ ক্ষেত্র) জনপ্রশাসন পদক-২০২১ পেয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান। ইউনেস্কোতে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে অভিযোজিত প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক তৎপরতার জন্য দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) পদক পেয়েছেন ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন ও তার দল। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীন বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প।
পরিবার পরিচিতি কার্ডের জন্য ব্যক্তিগত (কারিগরি) শ্রেণিতে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, দলগত (কারিগরি) শ্রেণিতে যৌথ মূলধন কোম্পানি বা ফার্মসমূহের পরিদফতরের তৎকালীন নিবন্ধক (বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব) মো. মকবুল হোসেন ও তার দল এবং অর্থ বিভাগ প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে (কারিগরি) পদক পেয়েছে।
জেলা পর্যায়ে কন্যারতেœর (বাল্য বিবাহ রোধ, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী ক্ষমতায়ন সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ) জন্য ব্যক্তিগত শ্রেণিতে (সাধারণ) পঞ্চগড়ের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবিনা ইয়াসমিন (ব্যক্তিগত) এবং দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ও তার দল এই পদক পান।
২০২০ সালের জনপ্রশাসন পদক পান দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) গাজীপুরের কাপাসিয়ার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও তার দল।
ওই বছরের জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে (সাধারণ) পদক পেয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন। দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর রশীদ ও তার দল এ পদক পেয়েছেন। টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক (বর্তমানে ঢাকার ডিসি) মো. শহীদুল ইসলাম ও তার দল এই পদক পেয়েছেন। ২০২০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে (সাধারণ) হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় এই পদক পেয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কারপ্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং নগদ অর্থ। ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং জনপ্রতি ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। দলগত অবদানের জন্য স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও নগদ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ৫০ হাজার টাকা ও সম্মাননাপত্র, দলগতভাবে অবদানের জন্য সম্মাননাপত্র ও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়।