ঢাকা ০৮:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হারানোদের সন্ধান দেন ‘বজরঙ্গী ভাইজান’

  • আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী সংবাদদাতা : ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হারিয়ে যাওয়া কিংবা দু’দেশের কারাগারে আটক ব্যক্তিদের দেশে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেন শামসুল হুদা। এই কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’ খ্যাতি। এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটক থাকা বা হারিয়ে যাওয়া ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তবে একদিনে এসব সম্ভব হয়নি। পদে পদে বাধা পেয়েছেন তিনি। ব্যর্থ হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন স্বজনের খোঁজে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ভারত সীমান্তে নিখোঁজ এক ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফেরানোর চেষ্টা করেন তিন। প্রথমে চেয়েছিলেন ভালোবাসা দিবসে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে। তবে হেরে যান তিনি। আবোরো নতুন উদ্যোমে শুরু করেন মানুষকে তার আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার। সেই চেষ্টা থেকেই কখনো ৪২ বছর পর আবার কখনো ৫০ বছর পর, কাউকেতো তৃতীয় প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন শামসুল হুদা।

এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটকে থাকা কিংবা হারিয়ে যাওয়া ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর এরই মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’। শামসুল হুদা বলেন, আমাদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন আছে। যার নাম অ্যামেচার রেডিও ক্লাব। আমি বাংলাদেশের এই ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২০ সালে প্রথম ভারতে অ্যামেচার রেডিও ক্লাব থেকে একটি এসএমএস এলো যে বাংলাদেশি নাসির নামে একজন মেদেনীপুর জেলার গঙ্গা সাগর মেলার কাছে আছে। তার বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে ঠিকানা পাঠাই।

 

তবে বাংলাদেশের ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখি তার পরিবারের কেউ তাকে নিতে আগ্রহী না। এমনকি সবাই বলে তার বিয়ে হয়নি। কিন্তু নাসিরের দাবি, সন্তানকে দেখতে গিয়ে কোনোভাবে তিনি ভারতে হারিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আবারো খোঁজ নিয়ে কথা হয় নাসিরের শাশুড়ির সঙ্গে। তিনি জানান, মেয়ে আরেকটি বিয়ে করেছে। তাই তারা তাকে ফেরত চান না। তখন আমি ভেঙে পড়ি। মনে মনে ভাবি মানুষ কীভাবে মানুষকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সেইদিন ছিল ভালোবাসা দিবস। আমরা মনে হলো ভালোবাসার জন্য মানুষ এতকিছু করে কিন্তু তারা কিছু করছে না। অনেক কষ্ট পাই। ভেঙে পড়ি। এরপর ৩ মাস পর মে মাসে আরও এক নারীর খোঁজ দেয় অ্যামেচার ক্লাস।

তার নাম ছায়াদেবী। পরিবারকে খুঁজছেন বহুকাল থেকে। এখানেও একটি সমস্যা হয়ে যায়। তিনি যে ঠিকানা দেন সেখানে অনেক সমস্যা ছিল। ঠিকানায় ছিল খুলনার একটি নদীর নাম। তবে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি রূপসা নদী ছাড়া আর কোনো নদী নেই। কিন্তু তারা বলেন কালী নদী। পরে আমি নদীর ওয়েবসাইট ঘুরে খুঁজে পাই কালিগঙ্গা নদী। এরপর সেখান থেকে প্রযুক্তির সহায়তায় সেখানকার চেয়ারম্যানের সহায়তা নিয়ে তার পরিবারে একজনকে পাই। তিনি বলেন, ছায়াদেবী তার বোন। পরে ভাই-বোনকে ৪০ মিনিট কথা বলিয়ে দিলাম। ৪২ বছর পর তাদের কথা হলো। অন্যরকম অনুভূতি হলো। এরপর ভাবলাম এভাবে অনেককেইতো এক করতে পারি।

সেই থেকেই কাজ করা শুরু। এভাবে একে একে ৪৩ জনকে সংযোগ করিয়ে দিয়েছি, যোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এসব করতে গিয়ে সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকানা। অনেক সময় ঠিকানা সঠিক না থাকার কারণে অনেকেই বছরের পর বছর জেলে পড়ে থাকছেন। এর পাশাপাশি ভারতের মানুষ অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে বলছি বললেই সংযোগ কেটে দেন। তখন পূর্বে সহায়তাকারীদের মাধ্যমে সংযোগ করাতে হয়। এটিই বড় বাধা। আরেকটি বড় বাধা হলো, দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে কারা অধিদপ্তরের কাছে যায়। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।

তারা এটি করতে চায় না। এটি সহজ করা দরকার। পেশায় সাংবাদিক হলেও বর্তমানে তাকে ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’ বলে ডাকে সবাই। সর্বশেষ একটি বেসরকারি টেলিভিশন থেকে চাকরি হারিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, এসব কাজ করে অনেক শান্তি পাই। এখন অনেক কাজ বাড়ছে। অনেকেই এখন আমাকে খবর দিচ্ছে। এসবের পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের অর্থ যায়। তবে কিছু অর্থ সহায়তা দেন রোটারি ক্লাব অব বনানীর সদস্যরা। শামসুল হুদা বলেন, আমি নিজ ইচ্ছা থেকেই সীমান্তে নিখোঁজ কিংবা সীমান্ত পেরিয়ে কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। সর্বশেষ সেই চেষ্টা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ভারতীয় নাগরিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হারানোদের সন্ধান দেন ‘বজরঙ্গী ভাইজান’

আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

রাজশাহী সংবাদদাতা : ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হারিয়ে যাওয়া কিংবা দু’দেশের কারাগারে আটক ব্যক্তিদের দেশে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেন শামসুল হুদা। এই কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’ খ্যাতি। এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটক থাকা বা হারিয়ে যাওয়া ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তবে একদিনে এসব সম্ভব হয়নি। পদে পদে বাধা পেয়েছেন তিনি। ব্যর্থ হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন স্বজনের খোঁজে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ভারত সীমান্তে নিখোঁজ এক ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফেরানোর চেষ্টা করেন তিন। প্রথমে চেয়েছিলেন ভালোবাসা দিবসে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে। তবে হেরে যান তিনি। আবোরো নতুন উদ্যোমে শুরু করেন মানুষকে তার আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার। সেই চেষ্টা থেকেই কখনো ৪২ বছর পর আবার কখনো ৫০ বছর পর, কাউকেতো তৃতীয় প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন শামসুল হুদা।

এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটকে থাকা কিংবা হারিয়ে যাওয়া ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর এরই মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’। শামসুল হুদা বলেন, আমাদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন আছে। যার নাম অ্যামেচার রেডিও ক্লাব। আমি বাংলাদেশের এই ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২০ সালে প্রথম ভারতে অ্যামেচার রেডিও ক্লাব থেকে একটি এসএমএস এলো যে বাংলাদেশি নাসির নামে একজন মেদেনীপুর জেলার গঙ্গা সাগর মেলার কাছে আছে। তার বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে ঠিকানা পাঠাই।

 

তবে বাংলাদেশের ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখি তার পরিবারের কেউ তাকে নিতে আগ্রহী না। এমনকি সবাই বলে তার বিয়ে হয়নি। কিন্তু নাসিরের দাবি, সন্তানকে দেখতে গিয়ে কোনোভাবে তিনি ভারতে হারিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আবারো খোঁজ নিয়ে কথা হয় নাসিরের শাশুড়ির সঙ্গে। তিনি জানান, মেয়ে আরেকটি বিয়ে করেছে। তাই তারা তাকে ফেরত চান না। তখন আমি ভেঙে পড়ি। মনে মনে ভাবি মানুষ কীভাবে মানুষকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সেইদিন ছিল ভালোবাসা দিবস। আমরা মনে হলো ভালোবাসার জন্য মানুষ এতকিছু করে কিন্তু তারা কিছু করছে না। অনেক কষ্ট পাই। ভেঙে পড়ি। এরপর ৩ মাস পর মে মাসে আরও এক নারীর খোঁজ দেয় অ্যামেচার ক্লাস।

তার নাম ছায়াদেবী। পরিবারকে খুঁজছেন বহুকাল থেকে। এখানেও একটি সমস্যা হয়ে যায়। তিনি যে ঠিকানা দেন সেখানে অনেক সমস্যা ছিল। ঠিকানায় ছিল খুলনার একটি নদীর নাম। তবে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি রূপসা নদী ছাড়া আর কোনো নদী নেই। কিন্তু তারা বলেন কালী নদী। পরে আমি নদীর ওয়েবসাইট ঘুরে খুঁজে পাই কালিগঙ্গা নদী। এরপর সেখান থেকে প্রযুক্তির সহায়তায় সেখানকার চেয়ারম্যানের সহায়তা নিয়ে তার পরিবারে একজনকে পাই। তিনি বলেন, ছায়াদেবী তার বোন। পরে ভাই-বোনকে ৪০ মিনিট কথা বলিয়ে দিলাম। ৪২ বছর পর তাদের কথা হলো। অন্যরকম অনুভূতি হলো। এরপর ভাবলাম এভাবে অনেককেইতো এক করতে পারি।

সেই থেকেই কাজ করা শুরু। এভাবে একে একে ৪৩ জনকে সংযোগ করিয়ে দিয়েছি, যোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এসব করতে গিয়ে সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকানা। অনেক সময় ঠিকানা সঠিক না থাকার কারণে অনেকেই বছরের পর বছর জেলে পড়ে থাকছেন। এর পাশাপাশি ভারতের মানুষ অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে বলছি বললেই সংযোগ কেটে দেন। তখন পূর্বে সহায়তাকারীদের মাধ্যমে সংযোগ করাতে হয়। এটিই বড় বাধা। আরেকটি বড় বাধা হলো, দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে কারা অধিদপ্তরের কাছে যায়। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।

তারা এটি করতে চায় না। এটি সহজ করা দরকার। পেশায় সাংবাদিক হলেও বর্তমানে তাকে ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’ বলে ডাকে সবাই। সর্বশেষ একটি বেসরকারি টেলিভিশন থেকে চাকরি হারিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, এসব কাজ করে অনেক শান্তি পাই। এখন অনেক কাজ বাড়ছে। অনেকেই এখন আমাকে খবর দিচ্ছে। এসবের পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের অর্থ যায়। তবে কিছু অর্থ সহায়তা দেন রোটারি ক্লাব অব বনানীর সদস্যরা। শামসুল হুদা বলেন, আমি নিজ ইচ্ছা থেকেই সীমান্তে নিখোঁজ কিংবা সীমান্ত পেরিয়ে কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। সর্বশেষ সেই চেষ্টা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ভারতীয় নাগরিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।