নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা নিঃশ্বেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ শক্তি তৈরি করা দরকার। তিনি বলেন, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে দুই দেশের বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার দুই দেশের নাগরিক এবং সরকারকে বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করে সম্পর্কের নার্সিং করতে হবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা গ্যালারি মিলনায়তনে বাংলাদেশ- ভারত মৈত্রী দিবস উপলক্ষে মিট দ্যা সোসাইটি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডেপুটি স্পিকার। টুকু বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, রাজনৈতিক দিক দিয়ে এ উপমহাদেশে টিকে থাকতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি সৃষ্টি করতে হবে। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সংস্কৃতিক দিক থেকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। আর এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। বিশ্ব শান্তির লক্ষে, আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে; বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং অর্থনীতির বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ শক্তি ছাড়া কিন্তু আমাদের কোনো পথ নেই। একটি চক্র দু’দেশের সম্পর্কের বিরোধীতায় এখনও সক্রিয় জানিয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন কাজ চলছে। বিরোধীতাও আছে। একটা চক্র আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল রাজাকার-আলবদর-আল শামস এবং জামায়েতে ইসলাম। এখনও তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়নি। এখনও তাদের অস্তিত্ব আমরা টের পাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে; যারা ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিল। সেই শক্তিকে আমরা এখনও দেখতে পাই। আমরা এই শক্তিকে নিস্তেজ-নিশ্বেষ করতে হলে আমাদের উপমহাদেশের রাজনীতিকে একটা স্বচ্ছতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ শক্তি তৈরি করা দরকার। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও উন্নত হচ্ছে বলেও জানান ডেপুটি স্পিকার। এ সময় টুকু যুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি যদি আশ্রয় না পেতাম, ট্রেনিং না পেতাম তাহলে তো আমি এদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখতে পারতাম না।’ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘রক্ত দিয়ে দেশ গড়ার সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চ্যালেঞ্জ রাখবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে দুই দেশের সরকার ও জনগনকে। রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীনের চ্যালেঞ্জ ভারতেরও আছে আমাদেরও আছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে এশিয়া মহাদেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তি সৃষ্টি করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ শক্তি ছাড়া আমাদের এগোনোর কোনো পথ নেই।’ অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘একটা রক্তাক্ত ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম জীবন্ত রাখা খুব মুশকিল যেকোন রাষ্ট্রের পক্ষে। ভারতের পক্ষেও সেটা হয়েছে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল এখনকার প্রজন্মের কাছে সেটা অস্পর্শ্য। বাংলাদেশের পক্ষ্যেও এমনটা হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশের পক্ষ্যে বিল্পবের স্মৃতি রক্ষা করা কঠিন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা শুধু একসঙ্গে অতীতকে শেয়ার করছি না ভবিষ্যৎকেও শেয়ার করছি। আমাদের স্বপ্নগুলোও একসঙ্গে দেখতে হবে। এই স্বপ্ন সত্য করার জন্য দুই দেশকে প্রানপণ চেষ্টা করতে হবে। ভারতের মধ্যে এখন প্রচুর শুভবোধ ও শুভেচ্ছা বাংলাদেশের জন্য আছে। আমি ১৯৮৮ এর পর থেকে বহুবার বাংলাদেশে এসেছি নানান কাজে ভারতের মানুষের জন্য বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসা আমি ভীষণরকম বুঝতে পারি। সমস্যা আছে সংকট আছে তবে বেশিরভাগ মানুষ এই ভালোবাসা বহন করে।’
অনুষ্ঠানে লে কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, দুই দেশের নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস ভুলে যাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম ১৯৭১ সালের ইতিহাস প্রায় ভুলতে বসেছে। ভারতে এটাকে বলা হচ্ছে ইন্দো-পাক যুদ্ধ। এখানে বলছি, আমরাই শুধু যুদ্ধ করেছি। আমি দুই দেশের যোদ্ধাদের রক্ত দেখেছি। ভারতীয় সেনাদের রক্ত আমাদের মতোই। আমি সব সময় বলি, ভারতীয় সেনাদের রক্ত সব সময়ই পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা দিয়েই প্রবাহিত হবে। এটা আমাদের জমিকে উর্বর করবে, আমাদের বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী করবে।’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার মান্যবর প্রণয় ভার্মা।
ভারত-বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ শক্তি দরকার: ডেপুটি স্পিকার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ