ঢাকা ০২:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

ভারত বদলেছে, যৌতুক প্রথা বদলায়নি: প্রতিবেদন

  • আপডেট সময় : ০৮:১৬:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ জুলাই ২০২১
  • ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : আইনে নিষিদ্ধ হলেও ভারতের গ্রামগুলোতে গত কয়েক দশক ধরে যৌতুক প্রথায় বিশেষ কোনো ‘পরিবর্তন আসেনি’ বলে বিশ্ব ব্যাংকের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪০ হাজার বিয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি চালানো হয়। ভারতে ১৯৬১ সাল থেকে যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া বেআইনি হলেও গবেষণায় ৯৫ শতাংশ বিয়েতেই যৌতুক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ভারতের ৯৬ শতাংশ লোকের বসবাস এমন ১৭টি রাজ্যের যৌতুকের তথ্য এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করায় গ্রামগুলোর ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ গবেষণার কাজে যুক্ত অর্থনীতিবিদ এস অনুকৃতি, নিশিথ প্রকাশ ও সুংহ কৌন জানান, বিয়ের সময় দেওয়া উপহারের মূল্য এবং নগদ লেনদেন করা অর্থের তথ্য তারা ব্যবহার করেছেন যৌতুকের হিসাব বুঝতে। কনের পরিবার থেকে বরকে দেওয়া ‘উপহার’ এবং কনেকে বরের পরিবারের দেওয়া ‘উপহারের’ মূল্যের ব্যবধান থেকে ‘প্রকৃত যৌতুক’ বের করা হয়েছে। যেখানে গুটি কয়েক বিয়েতে কনেকে বেশি মূল্যের উপহার দেওয়ার নজির মিলেছে। গবেষণায় বলা হয়, কনে পক্ষকে ‘উপহার’ সামগ্রী দিতে গড়ে ৫ হাজার রুপি খরচ করেছে বরের পরিবার। কনের পরিবার থেকে এই খরচ গড়ে ৩২ হাজার রুপি যা ৭ গুনেরও বেশি। সেক্ষেত্রে ‘প্রকৃত যৌতুক’ দাঁড়ায় গড়ে ২৭ হাজার রুপি।
পরিবারগুলোর আয় এবং সঞ্চয়ের বড় একটি অংশই যৌতুকের পেছনে খরচ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে ভারতের গ্রামগুলোতে প্রকৃত যৌতুকের গড় হার দাঁড়িয়েছে বার্ষিক আয়ের ১৪ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের গবেষক দলের অর্থনীতিবিদ ড. অনুকৃতি বলেন, “আয় বিবেচনা করলে সময়ের সঙ্গে যৌতুকের পরিমাণ কমে এসেছে, কারণ ভারতে গ্রামীণ জনজীবনে বার্ষিক আয় বেড়েছে। “কিন্তু এটা একটা গড় ধারণা- প্রত্যেক পরিবারের আয়ের বিপরীতে যৌতুকের অঙ্কটি আসলে কত বড় তা হিসাব করতে হলে আমাদের পরিবারের আয়-ব্যয়ের তথ্য লাগবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের কাছে এমন তথ্য নেই।”
২০০৮ সালের পর ভারতে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন হলেও বিয়ের আইন-কানুন এবং কাঠামো না বদলানোয় যৌতুক দেওয়ার রীতি বা প্রথায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ১৯৭৫ সালের আগে এবং ২০০০ সালের পর যৌতুক লেনদেনের হার কিছুটা বেশি বলে বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় কয়েকশ বছর ধরে যৌতুকের রীতি প্রচলিত আছে। সাধারণত কনের বাবা-মা বরের পরিবারকে ‘উপহার হিসেবে’ নগদ অর্থ, পোশাক এবং গয়না যৌতুক দিয়ে থাকে। ‘সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন’ হিসেবে চিহ্নিত এই প্রথার কারণে নারীরা প্রায়ই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন, এমনকি এমন ঘটনায় অনেকে নারীর মৃত্যুও হয়। ভারতে সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই যৌতুকের রীতি প্রচলিত আছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, খ্রিস্টান এবং শিখদের মধ্যে ‘যৌতুক অনেকে বেড়ে গেছে’ যা হিন্দু এবং মুসলমানদের যৌতুকের উচ্চ হারকেও ছাড়িয়ে গেছে। গবেষণায় ১৯৭০ সালের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় ‘ব্যাপকভাবে যৌতুক বেড়েছে’ জানিয়ে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই হার সর্বোচ্চ হয়ে উঠেছে। এছাড়া হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং গুজরাটেও যৌতুকের মাত্রা বেড়েছে। অন্যদিকে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিল নাড়ু এবং মহারাষ্ট্রে যৌতুকের গড় হার কমে এসেছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদঅনুকৃতি বলেন, “এই পার্থক্যের বিষয়ে সঠিক উত্তর আমাদের কাছে নেই। পরবর্তী গবেষণায় আমরা এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার আশা করছি।”
গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি লেখায় অর্থনীতিবিদ গৌরব চিপলুঙ্কার এবং জেফরি উইভার গত শতকে ভারতের ৭৪ হাজার বিয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে সময়ের সঙ্গে ‘যৌতুক ব্যবস্থাপনা’ বদলে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরেন। গবেষকরা জানান, ১৯৩০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যৌতুকের বিয়ের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে এবং যৌতুকের গড় হার হয়েছে তিনগুণ। তবে ১৯৭৫ সালের পর থেকে যৌতুকের পরিমাণ কমে এসেছে। তারা জানিয়েছেন, ভারতে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত সময়ে যৌতুকের মোট পরিমাণ প্রায় ৩৩ হাজার কোটি ডলারের সমান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারত বদলেছে, যৌতুক প্রথা বদলায়নি: প্রতিবেদন

আপডেট সময় : ০৮:১৬:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ জুলাই ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : আইনে নিষিদ্ধ হলেও ভারতের গ্রামগুলোতে গত কয়েক দশক ধরে যৌতুক প্রথায় বিশেষ কোনো ‘পরিবর্তন আসেনি’ বলে বিশ্ব ব্যাংকের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪০ হাজার বিয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি চালানো হয়। ভারতে ১৯৬১ সাল থেকে যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া বেআইনি হলেও গবেষণায় ৯৫ শতাংশ বিয়েতেই যৌতুক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ভারতের ৯৬ শতাংশ লোকের বসবাস এমন ১৭টি রাজ্যের যৌতুকের তথ্য এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করায় গ্রামগুলোর ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ গবেষণার কাজে যুক্ত অর্থনীতিবিদ এস অনুকৃতি, নিশিথ প্রকাশ ও সুংহ কৌন জানান, বিয়ের সময় দেওয়া উপহারের মূল্য এবং নগদ লেনদেন করা অর্থের তথ্য তারা ব্যবহার করেছেন যৌতুকের হিসাব বুঝতে। কনের পরিবার থেকে বরকে দেওয়া ‘উপহার’ এবং কনেকে বরের পরিবারের দেওয়া ‘উপহারের’ মূল্যের ব্যবধান থেকে ‘প্রকৃত যৌতুক’ বের করা হয়েছে। যেখানে গুটি কয়েক বিয়েতে কনেকে বেশি মূল্যের উপহার দেওয়ার নজির মিলেছে। গবেষণায় বলা হয়, কনে পক্ষকে ‘উপহার’ সামগ্রী দিতে গড়ে ৫ হাজার রুপি খরচ করেছে বরের পরিবার। কনের পরিবার থেকে এই খরচ গড়ে ৩২ হাজার রুপি যা ৭ গুনেরও বেশি। সেক্ষেত্রে ‘প্রকৃত যৌতুক’ দাঁড়ায় গড়ে ২৭ হাজার রুপি।
পরিবারগুলোর আয় এবং সঞ্চয়ের বড় একটি অংশই যৌতুকের পেছনে খরচ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে ভারতের গ্রামগুলোতে প্রকৃত যৌতুকের গড় হার দাঁড়িয়েছে বার্ষিক আয়ের ১৪ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের গবেষক দলের অর্থনীতিবিদ ড. অনুকৃতি বলেন, “আয় বিবেচনা করলে সময়ের সঙ্গে যৌতুকের পরিমাণ কমে এসেছে, কারণ ভারতে গ্রামীণ জনজীবনে বার্ষিক আয় বেড়েছে। “কিন্তু এটা একটা গড় ধারণা- প্রত্যেক পরিবারের আয়ের বিপরীতে যৌতুকের অঙ্কটি আসলে কত বড় তা হিসাব করতে হলে আমাদের পরিবারের আয়-ব্যয়ের তথ্য লাগবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের কাছে এমন তথ্য নেই।”
২০০৮ সালের পর ভারতে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন হলেও বিয়ের আইন-কানুন এবং কাঠামো না বদলানোয় যৌতুক দেওয়ার রীতি বা প্রথায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ১৯৭৫ সালের আগে এবং ২০০০ সালের পর যৌতুক লেনদেনের হার কিছুটা বেশি বলে বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় কয়েকশ বছর ধরে যৌতুকের রীতি প্রচলিত আছে। সাধারণত কনের বাবা-মা বরের পরিবারকে ‘উপহার হিসেবে’ নগদ অর্থ, পোশাক এবং গয়না যৌতুক দিয়ে থাকে। ‘সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন’ হিসেবে চিহ্নিত এই প্রথার কারণে নারীরা প্রায়ই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন, এমনকি এমন ঘটনায় অনেকে নারীর মৃত্যুও হয়। ভারতে সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই যৌতুকের রীতি প্রচলিত আছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, খ্রিস্টান এবং শিখদের মধ্যে ‘যৌতুক অনেকে বেড়ে গেছে’ যা হিন্দু এবং মুসলমানদের যৌতুকের উচ্চ হারকেও ছাড়িয়ে গেছে। গবেষণায় ১৯৭০ সালের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় ‘ব্যাপকভাবে যৌতুক বেড়েছে’ জানিয়ে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই হার সর্বোচ্চ হয়ে উঠেছে। এছাড়া হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং গুজরাটেও যৌতুকের মাত্রা বেড়েছে। অন্যদিকে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিল নাড়ু এবং মহারাষ্ট্রে যৌতুকের গড় হার কমে এসেছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদঅনুকৃতি বলেন, “এই পার্থক্যের বিষয়ে সঠিক উত্তর আমাদের কাছে নেই। পরবর্তী গবেষণায় আমরা এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার আশা করছি।”
গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি লেখায় অর্থনীতিবিদ গৌরব চিপলুঙ্কার এবং জেফরি উইভার গত শতকে ভারতের ৭৪ হাজার বিয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে সময়ের সঙ্গে ‘যৌতুক ব্যবস্থাপনা’ বদলে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরেন। গবেষকরা জানান, ১৯৩০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যৌতুকের বিয়ের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে এবং যৌতুকের গড় হার হয়েছে তিনগুণ। তবে ১৯৭৫ সালের পর থেকে যৌতুকের পরিমাণ কমে এসেছে। তারা জানিয়েছেন, ভারতে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত সময়ে যৌতুকের মোট পরিমাণ প্রায় ৩৩ হাজার কোটি ডলারের সমান।