প্রত্যাশা ডেস্ক: সংঘাত ক্রমেই বেড়ে চলেছে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। চলমান এ সংঘাত বন্ধ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য দেশদুটিকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-৭।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতায় পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশকে অবিলম্বে উত্তেজনা নিরসনে আহ্বান জানিয়েছে শিল্পোন্নত ৭টি দেশের জোট জি৭।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসলামাবাদে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ‘গঠনমূলক আলোচনার’ জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এতে আরো বলা হয়, পাকিস্তান-ভারত উভয়পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন রুবিও। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের সংঘাত এড়াতে গঠনমূলক আলোচনা শুরুর জন্য মার্কিন সহায়তা দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জি-৭ জোট। জোটের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে উত্তেজনা কমানো’ ও ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ‘আমরা, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ, গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হওয়া জঘন্য সন্ত্রাসী হামলার দৃঢ় নিন্দা জানাচ্ছি এবং ভারত ও পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে অনুরোধ করছি,” শনিবার এক বিবৃতিতে তারা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। বিবৃতিতে উত্তেজনা আরো বাড়লে তা ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি’ হয়ে দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। শিল্পোন্নত এ দেশগুলো সংঘাতের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষের বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বিগ্ন।’ অবিলম্বে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানাচ্ছি আমরা, পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে উভয় দেশকে সরাসরি সংলাপে বসতে উৎসাহিতও করছি। আমরা পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছি এবং দ্রুত ও স্থায়ী কূটনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে আমাদের সমর্থন ব্যক্ত করছি’- বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
কানাডা এ বছর জি৭ এর নেতৃত্ব নিতে যাচ্ছে। অ্যালবার্টার কানানাস্কিসে ১৫-১৭ জুন জোটের শীর্ষ সম্মেলনে নেতৃত্বের এ হাতবদল হবে।
কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা কমিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
শনিবার (১০ মে) তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিফ মুনির ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রুবিও মুনিরের সঙ্গে ফোনালাপে ‘ভবিষ্যৎ সংঘাত এড়াতে’ দুই দেশের মধ্যে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি। একইদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভারতীয় কাউন্টারপার্ট জয়শঙ্করের সঙ্গেও কথা বলেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেও আলাদাভাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলে উত্তেজনা হ্রাসে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমে আসুক এমনটা দেখতে চান। প্রেসিডেন্ট চান এই উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব কমুক। যদিও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বৈরিতা রয়েছে এটা তিনি বোঝেন- বলেছেন তিনি।
রুবিও দুই পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে এলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স দুই দিন আগেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ‘আমাদের দেখার বিষয় নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
‘আমরা যেটা করতে পারি তা হলো উত্তেজনা কমাতে তাদেরকে খানিকটা উৎসাহিত করার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু আমরা একটা যুদ্ধের মাঝখানে গিয়ে জড়িয়ে পড়তে পারি না, কার্যত যেটা আমাদের দেখারই বিষয় নয় এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণক্ষমতার বাইরে,- বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের ‘দ্য স্টোরি উইথ মার্থা ম্যাককালাম’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর পাল্টা জবাব দিতে ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ শুরু করেছে পাকিস্তান। এ অভিযানের আওতায় ইতোমধ্যে গত শুক্রবার (৯ মে) রাতে ভারতের ১১টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী।