ঢাকা ১০:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ভারতে নারী ক্রীড়াবিদদের বিক্ষোভ

  • আপডেট সময় : ১১:২৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

ক্রীড়া ডেস্ক : ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিক্ষোভে ফুঁসছে অলিম্পিকসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ইভেন্টে পদক পাওয়া দেশটির কুস্তিগিররা। সর্বশেষ এই আন্দোলনে চড়াও হয় পুলিশ। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে পদকজয়ী বেশ কয়েকজন কুস্তিগিরকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আটক হওয়া সাক্ষী মালিক ২০১৬ সালে অলিম্পিকে কুস্তিতে পদকজয়ী প্রথম ভারতীয় নারী ক্রীড়াবিদ। তার সঙ্গে আটক হওয়া বজরঙ্গ পুনিয়া টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগীর। এছাড়া দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদকজয়ী বিনেশ ফোগাত এবং তার বোন সঙ্গীতাও আটক হয়েছেন। আন্দোলনের সূত্রপাত: গত ২৩ এপ্রিল থেকে অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসেজয়ী বিনেশ ফোগাত, সাক্ষী মালিক, বজরঙ্গ পুনিয়াদের মতো কুস্তিগিররা দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্দোলনে বসেছিলেন। জানা যায়, এটা ছিল তাদের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন। তাদের অভিযোগ, কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং দিনের পর দিন নারী কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্তা করে চলেছেন। এক নাবালিকাসহ সাত নারী কুস্তিগির এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেও সরকার তাকে ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে বরখাস্ত করেনি। পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কুস্তিগিররা ব্রিজভূষণের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবি করছেন। অভিযুক্তকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দিল্লি পুলিশ। যদিও যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। একইসঙ্গে ফেডারেশন সভাপতি তার বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।
পদক গঙ্গায় বিসর্জন দিতে চাচ্ছেন কুস্তিগীররা: টানা আন্দোলনে সরকারের উদাসীনতার প্রতিবাদে অর্জিত অলিম্পিক ও কমনওয়েলথ গেমসের পদক গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন কুস্তিগিররা। গত মঙ্গলবার বিকেলে তাদের পদক ফেলে দেওয়ার কথা থাকলেও, সরকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নতুন করে পাঁচ দিন সময় দিয়েছেন তারা। কুস্তিগির সাক্ষী মালিক এক টুইটবার্তায় দীর্ঘ চিঠি জুড়ে দেন। যাতে লেখা হয়েছে, ‘মনে হচ্ছে, আমাদের গলায় ঝোলানো এসব পদক আজ অর্থহীন হয়ে গেছে। একবার ভেবেছিলাম এই পদক ফিরিয়ে দিই। কিন্তু কাকে দেব? রাষ্ট্রপতিকে? তিনি তো নারী? আমাদের কীভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে, তা তো তিনি মাত্র দুই কিলোমিটার দূর থেকে দেখলেন? একটা কথাও তো বললেন না? তার কাছে পদক ফেরত দেওয়া যায়?’
এর আগে আরেক টুইটে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও চেন্নাই সুপার কিংসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কটাক্ষের সুরে তিনি লেখেন, ‘দেখে ভালো লাগছে যে কোনো ক্রীড়াবিদ এখনো সম্মান পাচ্ছেন। আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’ বিক্ষোভকারী কুস্তিগিরদের মধ্যে মূলত বজরঙ্গ পুনিয়া, সাক্ষী মালিক এবং বিনেশ ফোগাতের আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য সবচেয়ে বেশি। তিন কুস্তিগীরই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে পদক জিতেছেন। সব পদকই বিসর্জন দিতে চান তারা। ভারতের স্থানীয় পদক বাদ দিলেও যদি বাকি সব পদক তারা বিসর্জন দেয় তাহলেও ৪৯টি পদক হারাবে ভারত।
অবশ্য পদক বিসর্জন দিলে শাস্তি পেতে পারেন কুস্তিগিররা। ভারতের কুস্তি সংস্থা তো বটেই, আন্তর্জাতিক সংস্থারও সেই অধিকার রয়েছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মানবিক দিক থাকার কারণে শাস্তি দেওয়া হয় না। ঠিক যে রকম বর্ণবিদ্বেষী আচরণের প্রতিবাদে মোহাম্মদ আলি পদক ছুঁড়ে ওহায়ো নদীতে ফেলে দিলেও তার কোনো শাস্তি হয়নি।
বিশ্ব কুস্তি ফেডারেশনের হুঁশিয়ারি: নারী ক্রীড়াবিদদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে ভারতের শীর্ষ কুস্তিগিরদের সঙ্গে আচরণের নিন্দা করেছে বিশ্ব কুস্তি ফেডারেশন। ভারতের কুস্তি ফেডারেশনকে সতর্ক করে বলা হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে ভাফেডারেশন স্থগিত করা হবে। সংস্থাটির তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিং অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে ভারতের পরিস্থিতি অনুসরণ করেছে যেখানে কুস্তিগীররা ফেডারেশনের সভাপতির দ্বারা অপব্যবহার এবং হয়রানির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদ করছেন।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভারতে নারী ক্রীড়াবিদদের বিক্ষোভ

আপডেট সময় : ১১:২৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

ক্রীড়া ডেস্ক : ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিক্ষোভে ফুঁসছে অলিম্পিকসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ইভেন্টে পদক পাওয়া দেশটির কুস্তিগিররা। সর্বশেষ এই আন্দোলনে চড়াও হয় পুলিশ। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে পদকজয়ী বেশ কয়েকজন কুস্তিগিরকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আটক হওয়া সাক্ষী মালিক ২০১৬ সালে অলিম্পিকে কুস্তিতে পদকজয়ী প্রথম ভারতীয় নারী ক্রীড়াবিদ। তার সঙ্গে আটক হওয়া বজরঙ্গ পুনিয়া টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগীর। এছাড়া দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদকজয়ী বিনেশ ফোগাত এবং তার বোন সঙ্গীতাও আটক হয়েছেন। আন্দোলনের সূত্রপাত: গত ২৩ এপ্রিল থেকে অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসেজয়ী বিনেশ ফোগাত, সাক্ষী মালিক, বজরঙ্গ পুনিয়াদের মতো কুস্তিগিররা দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্দোলনে বসেছিলেন। জানা যায়, এটা ছিল তাদের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন। তাদের অভিযোগ, কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং দিনের পর দিন নারী কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্তা করে চলেছেন। এক নাবালিকাসহ সাত নারী কুস্তিগির এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেও সরকার তাকে ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে বরখাস্ত করেনি। পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কুস্তিগিররা ব্রিজভূষণের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবি করছেন। অভিযুক্তকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দিল্লি পুলিশ। যদিও যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। একইসঙ্গে ফেডারেশন সভাপতি তার বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।
পদক গঙ্গায় বিসর্জন দিতে চাচ্ছেন কুস্তিগীররা: টানা আন্দোলনে সরকারের উদাসীনতার প্রতিবাদে অর্জিত অলিম্পিক ও কমনওয়েলথ গেমসের পদক গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন কুস্তিগিররা। গত মঙ্গলবার বিকেলে তাদের পদক ফেলে দেওয়ার কথা থাকলেও, সরকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নতুন করে পাঁচ দিন সময় দিয়েছেন তারা। কুস্তিগির সাক্ষী মালিক এক টুইটবার্তায় দীর্ঘ চিঠি জুড়ে দেন। যাতে লেখা হয়েছে, ‘মনে হচ্ছে, আমাদের গলায় ঝোলানো এসব পদক আজ অর্থহীন হয়ে গেছে। একবার ভেবেছিলাম এই পদক ফিরিয়ে দিই। কিন্তু কাকে দেব? রাষ্ট্রপতিকে? তিনি তো নারী? আমাদের কীভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে, তা তো তিনি মাত্র দুই কিলোমিটার দূর থেকে দেখলেন? একটা কথাও তো বললেন না? তার কাছে পদক ফেরত দেওয়া যায়?’
এর আগে আরেক টুইটে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও চেন্নাই সুপার কিংসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কটাক্ষের সুরে তিনি লেখেন, ‘দেখে ভালো লাগছে যে কোনো ক্রীড়াবিদ এখনো সম্মান পাচ্ছেন। আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’ বিক্ষোভকারী কুস্তিগিরদের মধ্যে মূলত বজরঙ্গ পুনিয়া, সাক্ষী মালিক এবং বিনেশ ফোগাতের আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য সবচেয়ে বেশি। তিন কুস্তিগীরই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে পদক জিতেছেন। সব পদকই বিসর্জন দিতে চান তারা। ভারতের স্থানীয় পদক বাদ দিলেও যদি বাকি সব পদক তারা বিসর্জন দেয় তাহলেও ৪৯টি পদক হারাবে ভারত।
অবশ্য পদক বিসর্জন দিলে শাস্তি পেতে পারেন কুস্তিগিররা। ভারতের কুস্তি সংস্থা তো বটেই, আন্তর্জাতিক সংস্থারও সেই অধিকার রয়েছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মানবিক দিক থাকার কারণে শাস্তি দেওয়া হয় না। ঠিক যে রকম বর্ণবিদ্বেষী আচরণের প্রতিবাদে মোহাম্মদ আলি পদক ছুঁড়ে ওহায়ো নদীতে ফেলে দিলেও তার কোনো শাস্তি হয়নি।
বিশ্ব কুস্তি ফেডারেশনের হুঁশিয়ারি: নারী ক্রীড়াবিদদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে ভারতের শীর্ষ কুস্তিগিরদের সঙ্গে আচরণের নিন্দা করেছে বিশ্ব কুস্তি ফেডারেশন। ভারতের কুস্তি ফেডারেশনকে সতর্ক করে বলা হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে ভাফেডারেশন স্থগিত করা হবে। সংস্থাটির তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিং অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে ভারতের পরিস্থিতি অনুসরণ করেছে যেখানে কুস্তিগীররা ফেডারেশনের সভাপতির দ্বারা অপব্যবহার এবং হয়রানির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদ করছেন।