প্রত্যাশা ডেস্ক :ভ্যাকসিন কিংবা লকডাউন। ভারতে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না করোনার। সর্বশেষ একদিনে আবারও রেকর্ড চার লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু দিল্লিতেই প্রতিদিন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। অক্সিজেন ও শয্যা সংকট এখনও চরমে। এ অবস্থায় দিল্লির লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে টিকার জন্যও চলছে হাহাকার।
দৈনিক শনাক্ত করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা চার লাখ পেরিয়ে যাওয়ার একদিন পর মহামারিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে দেশটিতে। গতকাল রোববার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অক্সিজেন ট্যাংকার তো নয় যেন প্রাণশক্তি। করোনার কারণে দিল্লিজুড়ে চরম অক্সিজেন সংকটের মধ্যেই ওড়িশা থেকে দুটি ট্রেনে করে ১০০ টনের বেশি অক্সিজেনবাহী ট্যাংকার নিয়ে আসা হয় দিল্লির ফরিদাবাদে। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ এর পাশপাশের এলাকায় অক্সিজেনের জন্য চরম হাহাকার। রাজ্যটিতে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দিল্লিতে এখনও প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতেও রেকর্ডসংখ্যক রোগী ভিড় করছেন। শয্যার অভাবে অনেকের স্থান হয়েছে হাসপাতালের বাইরে।
দিল্লির হাসপাতালের যেদিকেই চোখ যায় সবই করোনা রোগী। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিনিয়ত প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে দিল্লি সরকার।
এদিকে, মুম্বাইয়ের অবস্থাও বেশ নাজুক। উপায় না পেয়ে টিকার পেছনে দৌড়াচ্ছেন সবাই। বিশেষ করে ১৮ বছর বয়সের ওপরে সবাইকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার কার্যক্রম শুরুর পর থেকে দলে দলে টিকা নিতে যাচ্ছেন মানুষ। তবে অনেককেই টিকা না নিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে। রাজ্যে রাজ্যে অক্সিজেন সংকটের মধ্যেই টিকার সংকটও দেখা দিয়েছে। তবে চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে ভারতের বাইরে টিকা উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে প্রতি মাসে ১০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যেই করোনায় বিপর্যস্ত ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ। করোনা মোকাবিলায় ১২০টি ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছে জার্মানি। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরঞ্জামসহ মেডিকেল সহায়তা পাঠিয়েছে ফ্রান্স। এছাড়া রাশিয়ার পক্ষ থেকেও দেড় লাখ ডোজ স্পুটনিক-ভি পাঠিয়েছে পুতিন সরকার।
একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু : ভারতে দৈনিক শনাক্ত করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা চার লাখ পেরিয়ে যাওয়ার একদিন পর মহামারীতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে। গতকাল রোববার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে একই সময় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম পাওয়া গেছে, শনাক্ত হয়েছেন তিন লাখ ৯২ হাজার ৪৮৮ জন নতুন রোগী। এদের নিয়ে ভারতে শনাক্ত মোট করোনভাইরাস রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৯৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। আর মোট দুই লাখ ১৫ হাজার ৫৪২টি মৃত্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পর চতুর্থ স্থানে আছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল দেশটি। এই নিয়ে টানা চার দিন ধরে কোভিড-১৯ এ তিন হাজারের বেশি মৃত্যু দেখল ভারত। শ্মশানগুলো মৃত্যুর এ চাপ সামাল দিতে না পারায় বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী চিতা তৈরি করে মৃতদের দাহ করা হচ্ছে।
ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে শৃঙ্খলা ধরে রাখা যাচ্ছে না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শয্যা ও তীব্র অক্সিজেন সংকট। অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যেই বহু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবারও রাজধানী দিল্লির একটি হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে একজন চিকিৎসকসহ অন্তত ১২ জন রোগীর মৃত্যু হয়। ভয়াবহ পরিস্থিতির চাপ সহ্য করতে না পেরে দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের একজন চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। মহামারিতে ভারতের এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক দেশের পাঠানো জরুরি সহায়তা ইতোমধ্যে ভারতে পৌঁছতে শুরু করেছে। এপ্রিলে ভারতে ৬৬ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মার্চের ১০ লাখ ২৫ হাজার শানক্তের চেয়ে যা অনেক বেশী। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে সাড়ে তিন লাখ ও জানুয়ারিতে চার লাখ ৭৯ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল। শুধু এপ্রিলেই কোভিড-১৯ এ ভারতে ৪৫ হাজারেরও বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মার্চে সংখ্যাটি ৫৪১৭, ফেব্রুয়ারিতে ২৭৭৭ ও জানুয়ারিতে ৫৫৩৬ জন ছিল। নজিরবিহীনভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকার মুখে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা পর্যালোচনা করতে রোববার সকালে জরুরি বৈঠকে বসেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে ‘ঝড়ের মতো আঘাত হেনেছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
ভারতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু, অক্সিজেন-শয্যা সংকট চরমে, টিকার জন্য হাহাকার
ট্যাগস :
ভারতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু
জনপ্রিয় সংবাদ