প্রত্যাশা ডেস্ক: নিজেদের তিন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার কড়া জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, ভারতে ও ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে শনিবার (১০ মে) গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এর মধ্যে একটি পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরের বিয়াস এলাকায়। এখানে ভারতের ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতাগার রয়েছে।
‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। সামরিক যান, সাবমেরিন ও জাহাজ থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা যায়। ছোড়া যায় যুদ্ধবিমান থেকেও। ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সর্বোচ্চ ৮০০ কিলোমিটার বা ৪৯৭ মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। এটি ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ও রাশিয়ার রকেট ডিজাইন ব্যুরো এনপিও মাশিনোসট্রোয়েনিয়ার একটি যৌথ উদ্যোগ।
ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদ ও রাশিয়ার মস্কভা নদীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে এ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের নাম রাখা হয়েছে ব্রহ্মস।
এদিকে আরবি শব্দ ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’-এর অর্থ ‘সুদৃঢ় প্রাচীর’। শনিবার পাকিস্তানের তিন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উল্লেখ করে পাকিস্তান সরকার এক বিবৃতিতে বলে, ‘ভারত আমাদের দেশ, জনগণ ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাই আমরা এই জবাব দিয়েছি।’
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ সেনা অভিযানের পাল্টা জবাব দিতে ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ অভিযানের আওতায় ইতোমধ্যে গত শুক্রবার রাতে ভারতের ১১টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এই স্থাপনাগুলোর মধ্যে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটি, উধামপুর বিমান ঘাঁটি, গুজরাট বিমান ঘাঁটি, রাজস্থান বিমান ঘাঁটি এবং ভারতের সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রাহমোসের একটি মজুতস্থান উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জিও নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চত করেছেন।
পাল্টা এ হামলায় ফাতাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ১২০ কিলোমিটার।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ওই কমর্কর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতের হামলায় ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের বারামুলা জেলার উরি শহরে ভারতীয় সেনবাহিনীর একটি ব্রিগেডের হেডকোয়ার্টার এবং সরবরাহ বা রসদ ডিপো, নাগরোটা শহরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি ব্যাটারি ধ্বংস হয়েছে।
এছাড়া ভারতের পাঞ্জাবের আদমপুর বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন করা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ সিস্টেমও ক্ষেপণাস্ত্র চালিয়ে ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান জেএফ-১৭। শুক্রবারের হামলায় এটিকে সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন পকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওই কর্মকর্তা।
কাশ্মিরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে আসছে ভারত, যদিও তা নাকচ করেছে পাকিস্তান। এ ঘটনার জেরে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশ দুটি।
এমন উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে হামলা চালায় ভারত। ওই অভিযানের নাম ছিল ‘অপরারেশন সিঁদুর’। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা। হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।