প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারতের সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে আছে। অর্থনীতি বিধ্বস্ত। ২০২০ সালে অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে ৭ শতাংশের ওপরে। এ বছর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু এখনো প্রাক্-কোভিড পর্যায়ে ফিরতে পারেনি ভারত। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে সাধারণ মানুষ নিজেদের স্বপ্নের গ-ি আরও ছোট করে আনতে বাধ্য হচ্ছে। গুজরাটের আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘ভার্চ্যুয়াল’ সমাবেশে এই আশঙ্কার কথাই তুলে ধরেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটিতে পড়ান বাঙালি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি দিন দশেক ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগঞ্জে ঘুরেছেন তিনি। কথা বলেছেন খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে। তা থেকেই তাঁর মনে হয়েছে, মানুষ নিদারুণ কষ্টে আছে। তাঁর বক্তব্য, ‘এই মুহূর্তে চরম কষ্টে আছি আমরা। ২০১৯ সালে (করোনা হানা দেওয়ার আগে) অর্থনীতি যেখানে দাঁড়িয়েছিল, এখন তার চেয়েও খারাপ অবস্থায়। তবে ঠিক কতখানি, তা নিশ্চিতভাবে হয়তো এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু আমার ধারণা, এই অবনমন অনেকটাই।’ তিনি জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির জন্য কাউকে দোষারোপ করা উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু গ্রামবাংলায় ঘুরে সাধারণ মানুষের গল্পগাথা শোনার সময় তাদের স্বপ্ন চুরমার হওয়ার এবং বহু ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে স্বপ্নের ছোট্ট গ-িকে আরও ছোট করে আনার নির্মম বাস্তবতা ধরা পড়েছে তাঁর চোখে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ১ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে ভারতীয় অর্থনীতি। কেন্দ্রের দাবি, এর বদৌলতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির শিরোপা ধরে রেখেছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, ছয় মাসে এই প্রবৃদ্ধির বদৌলতে ভারতের অর্থনীতির আকার করোনা-পূর্ববর্তী আকার পেরিয়ে গিয়েছে বলেও মোদি সরকারের দাবি। সব মিলিয়ে, উত্তর প্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে যখন নরেন্দ্র মোদির সরকার ও দল অর্থনীতি আবারও মুখ তুলতে শুরু করেছে বলে প্রচারে নামতে প্রস্তুত, তখন অভিজিতের এই পর্যবেক্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার থেকে অবকাঠামো কিংবা শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি-কোভিডের ধাক্কা সামলে ভারতের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ছাপ সর্বত্র স্পষ্ট বলে সম্প্রতি দাবি করতে শুরু করেছে বিভিন্ন সরকারি মহল। কিন্তু বিরোধী শিবির ও অর্থনীতিবিদদের একাংশ অবশ্য শুরু থেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে, প্রথম প্রান্তিকে ২০ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আগের বছরের একই সময়ে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ সংকোচনের সাপেক্ষে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকেও তা–ই ঘটেছে, ভিত্তি সেই আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ চুপসে যাওয়া অর্থনীতি। ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, ‘অর্থনীতির বহু ক্ষেত্র এখনো পঙ্গু ও সাহায্যপ্রত্যাশী।’ কিন্তু অনেকের মতে, ভারতীয় অর্থনীতির ‘ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার বিজ্ঞাপন’ অভিজিৎ ব্যানার্জির পর্যবেক্ষণে আবার ধাক্কা খেল। যদিও পাল্টা প্রশ্ন উঠতে পারে, শেষমেশ পশ্চিম বাংলার দৈন্যদশাও অভিজিতের বক্তব্যে উঠে এল কি না, যে রাজ্যে সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা তিনিই। অর্থনীতির জটিল আলোচনার পাশাপাশি অবশ্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হালকা গল্পেও মেতেছিলেন অভিজিৎ ব্যানার্জি। শুনিয়েছেন জেএনইউ থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে গবেষণার জন্য পাড়ি দেওয়ার আগে কীভাবে ছাত্র আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য তিহাড় জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। অনেকে তখন ভয় দেখিয়েছিলেন, শুধু এ কারণে ভেস্তে যেতে পারে তাঁর আমেরিকা যাত্রা।
শিক্ষার্থীদের সেদিন কিছুটা নতুন মোড়কে ক্লিশে কথাও শুনিয়েছেন অভিজিৎ—বলেছেন, ‘বাড়ির চাপে নয়, ক্যারিয়ার বেছে নাও নিজের পছন্দ অনুযায়ী।’ আর সেই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন দুই প্রখ্যাত চিত্রপরিচালকের কথা—সত্যজিৎ রায় ও শ্যাম বেনেগাল, অর্থনীতির স্নাতক হয়েও একটু অন্য রকম ক্যারিয়ার বেছে নিয়ে এই দুই ভদ্রলোক জীবনে নেহাত মন্দ করেননি।
ভারতের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে: অভিজিৎ ব্যানার্জি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ