ঢাকা ১২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের মন্ত্রী বললেন এক ফোঁটা পানিও পাকিস্তানে যাবে না

  • আপডেট সময় : ০৬:৫৪:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: সিন্ধু নদের পানিবণ্টন নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করা সম্ভব, সে নিয়ে ভারত এখনো স্পষ্ট রূপরেখা ঠিক করতে পারেনি। তবে গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ডাকা বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিন্ধু উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না যায়, আমরা তা নিশ্চিত করব।’

গুজরাটের নবসারি আসন থেকে চারবার লোকসভায় নির্বাচিত চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল গুজরাট রাজ্য বিজেপির সভাপতি। শুক্রবার ওই বৈঠকের পর তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে মোদি সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। আমরা নিশ্চিত করব, এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে প্রবাহিত না হয়।’
ওই বৈঠকে পানিপ্রবাহ বন্ধ নিয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এখনই কী করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর ভারতের সিন্ধু জল কমিশনারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাক্সেনা গণমাধ্যমকে শুধু বলেছেন, উঁচু অববাহিকার দেশ হিসেবে ভারতের কাছে একাধিক বিকল্প রয়েছে।

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানাজানির পর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিল, ‘পানিচুক্তি স্থগিত রাখা যুদ্ধের শামিল।’ শুক্রবার এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে পাকিস্তানের বিরোধী দল পিপিপির নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘সিন্ধু নদ আমাদের, আমাদেরই থাকবে। সেখানে হয় জল বইবে, নয়তো তাদের (ভারত) রক্ত।’

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির বয়স ৬৫ বছর। ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খানের মধ্যে ওই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে তিন-তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। চুক্তি কিন্তু ব্যাহত হয়নি। এই প্রথমবার, পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠী পর্যটকদের নির্বিচারে হত্যার পর ভারত ওই চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে। ঘোষণা কীভাবে কার্যকর করা যায়, সেই বিষয়েই ভারতীয় নেতৃত্ব এখন চিন্তাভাবনা করছে।

চুক্তি অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধু, ঝিলম, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেরই প্রাপ্য। এই ছয় নদ-নদী ছাড়া তাদের শাখা নদীর পানিপ্রবাহের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি। শাখা নদীগুলোর পানিপ্রবাহে কোনো বাধাও নেই।
ঘটনা হচ্ছে, প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে বিপুল জলাধার নির্মাণ প্রয়োজন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে যা সহায়ক, তেমন বড় প্রকল্প ভারত তৈরিও করেনি। ওই ছয় নদ-নদীর পানি প্রধানত দুই দেশের কৃষিপ্রধান অঞ্চলের সেচের কাজেই ব্যবহৃত হয়। কিছুটা ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পাকিস্তানকে সেই পানি থেকে বঞ্চিত করতে গেলে যে বিশাল প্রকল্প ভারতের তৈরি করা প্রয়োজন, তার দ্রুত রূপায়ণও সম্ভব নয়। সেই কারণে তিন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণের বিষয় গতকালের বৈঠকে আলোচিত হয়। এখনই কী করণীয়, তার পাশাপাশি আলোচিত হয় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

এই পানি-বিতর্কে অংশ নিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও। শুক্রবার তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত অন্যতম। সত্যি বলতে কী, আমরা কাশ্মীরি জনতা কখনো ওই চুক্তির পক্ষে ছিলাম না। সমর্থনও করিনি। এখন দেখতে হবে, ওই চুক্তি স্থগিত রাখা নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেমন হতে পারে।’
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আরো বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের কাছে ওই পানিচুক্তি সবচেয়ে অন্যায্য নথি।’

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভারতের মন্ত্রী বললেন এক ফোঁটা পানিও পাকিস্তানে যাবে না

আপডেট সময় : ০৬:৫৪:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: সিন্ধু নদের পানিবণ্টন নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করা সম্ভব, সে নিয়ে ভারত এখনো স্পষ্ট রূপরেখা ঠিক করতে পারেনি। তবে গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ডাকা বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিন্ধু উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না যায়, আমরা তা নিশ্চিত করব।’

গুজরাটের নবসারি আসন থেকে চারবার লোকসভায় নির্বাচিত চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল গুজরাট রাজ্য বিজেপির সভাপতি। শুক্রবার ওই বৈঠকের পর তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে মোদি সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। আমরা নিশ্চিত করব, এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে প্রবাহিত না হয়।’
ওই বৈঠকে পানিপ্রবাহ বন্ধ নিয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এখনই কী করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর ভারতের সিন্ধু জল কমিশনারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাক্সেনা গণমাধ্যমকে শুধু বলেছেন, উঁচু অববাহিকার দেশ হিসেবে ভারতের কাছে একাধিক বিকল্প রয়েছে।

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানাজানির পর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিল, ‘পানিচুক্তি স্থগিত রাখা যুদ্ধের শামিল।’ শুক্রবার এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে পাকিস্তানের বিরোধী দল পিপিপির নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘সিন্ধু নদ আমাদের, আমাদেরই থাকবে। সেখানে হয় জল বইবে, নয়তো তাদের (ভারত) রক্ত।’

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির বয়স ৬৫ বছর। ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খানের মধ্যে ওই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে তিন-তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। চুক্তি কিন্তু ব্যাহত হয়নি। এই প্রথমবার, পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠী পর্যটকদের নির্বিচারে হত্যার পর ভারত ওই চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে। ঘোষণা কীভাবে কার্যকর করা যায়, সেই বিষয়েই ভারতীয় নেতৃত্ব এখন চিন্তাভাবনা করছে।

চুক্তি অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধু, ঝিলম, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেরই প্রাপ্য। এই ছয় নদ-নদী ছাড়া তাদের শাখা নদীর পানিপ্রবাহের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি। শাখা নদীগুলোর পানিপ্রবাহে কোনো বাধাও নেই।
ঘটনা হচ্ছে, প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে বিপুল জলাধার নির্মাণ প্রয়োজন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে যা সহায়ক, তেমন বড় প্রকল্প ভারত তৈরিও করেনি। ওই ছয় নদ-নদীর পানি প্রধানত দুই দেশের কৃষিপ্রধান অঞ্চলের সেচের কাজেই ব্যবহৃত হয়। কিছুটা ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পাকিস্তানকে সেই পানি থেকে বঞ্চিত করতে গেলে যে বিশাল প্রকল্প ভারতের তৈরি করা প্রয়োজন, তার দ্রুত রূপায়ণও সম্ভব নয়। সেই কারণে তিন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণের বিষয় গতকালের বৈঠকে আলোচিত হয়। এখনই কী করণীয়, তার পাশাপাশি আলোচিত হয় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

এই পানি-বিতর্কে অংশ নিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও। শুক্রবার তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত অন্যতম। সত্যি বলতে কী, আমরা কাশ্মীরি জনতা কখনো ওই চুক্তির পক্ষে ছিলাম না। সমর্থনও করিনি। এখন দেখতে হবে, ওই চুক্তি স্থগিত রাখা নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেমন হতে পারে।’
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আরো বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের কাছে ওই পানিচুক্তি সবচেয়ে অন্যায্য নথি।’