প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত ও তার স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত তামিল নাড়ুতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর এমআই সেভেনটিন ভি৫ হেলিকপ্টারটি বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কুন্নুরের গভীর জঙ্গলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আগুন ধরে যায়। কপ্টারে ১৪ জন আরোহীর মধ্যে বাঁচতে পেরেছেন কেবল একজন। দুর্ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক টুইটে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়। সেখানে বলা হয়, “গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, দুর্ভাগ্যজনক ওই ঘটনায় জেনারেল বিপিন রাওয়াত, মিসেস মধুলিকা রাওয়াত এবং হেলিকপ্টারে থাকা আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।”
আরোহীদের মধ্যে বেঁচে গেছেন কেবল গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুন সিং। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ওয়েলিংটনের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সকালে দিল্লি থেকে আকাশ পথে কোইমবাটোরের সুলুর সেনাঘাঁটিতে গিয়েছিলেন জেনারেল রাওয়াত। দুপুরে সেখান থেকে নীলগিরির ওয়েলিংটনের ডিফেন্স স্টাফ কলেজে যাওয়ার পথে তার হেলিকপ্টার কুন্নুরে দুর্ঘটনায় পড়ে। তার পিএসও, সিকিউরিটি কমান্ডো এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন ওই হেলিকপ্টারে।
টেলিভিশনে দেখানো ভিডিওতে পাহাড়ের ধারে ছড়ানো ছিটানো কপ্টারের ধ্বংসাবশেষ জ্বলতে দেখা যায়। গাঢ় ধোঁয়া আর উপড়ানো গাছের কারণে উদ্ধারকর্মীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কৃষ্ণস্বামী নামে কুন্নুরের এক বাসিন্দা আনন্দবাজারকে বলেছেন, “প্রথমে একটা কানফাটানো আওয়াজ শুনতে পেলাম। ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতেই দেখতে পেলাম, হেলিকপ্টারটি প্রচ- গতিতে প্রথমে একটি গাছে ধাক্কা মারল। তারপরই দেখতে পেলাম একটা আগুনের গোলা। পরমুহূর্তেই সেটা সজোরে আরও একটি গাছে ধাক্কা মারল।
“দেখলাম, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই কপ্টারটি থেকে দুতিন জন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের গোটা শরীরই পুড়ে গিয়েছে ততক্ষণে।”
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং দিল্লিতে জেনারেল রাওয়তের বাসভবনে ছুটে যান। সেখানে তিনি প্রতিরক্ষা প্রধানের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার তার পার্লামেন্টে এ বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৬৩ বছর বয়সী জেনারেল রাওয়াত ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের দায়িত্ব নিয়েছিলেন; সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করতেই পদটি সৃষ্টি করা হয়। নতুন সৃষ্ট সামরিক বিষয়ক বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এই চার তারকা জেনারেল। চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ ভারতের চিফস অব স্টাফ কমিটির স্থায়ী চেয়ারম্যান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা। নতুন সৃষ্ট ডিপার্টমেন্ট অব মিলিটারি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান হিসেবেও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে সেকেন্ড সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বিপিন রাওয়াত। চার দশক ধরে তিনি জম্মু-কাশ্মিরের বাহিনী এবং চীন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় দায়িত্ব পালন করেছেন। নিহতের ঘটনায় বেশ কয়েকজন সাবেক সেনাপ্রধান শোক প্রকাশ করেছেন।
ভারতের প্রতিরক্ষাপ্রধান ও স্ত্রী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ


























