প্রত্যাশা ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের প্রতিটি নাগরিকের রক্ত ফুটছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, ভারতীয়দের প্রত্যেকেই নিহতদের পরিবারের যন্ত্রণায় শোকাহত।
এছাড়া হামলাকারীরা কঠিনতম শাস্তি পাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আর তাই এই সংকটের সময়ে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মোদি। মন কি বাত অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে এমন মন্তব্যই করেন তিনি।
রোববার (২৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতীয় এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেহেলগামের এই হামলা সন্ত্রাসের মদতদাতাদের হতাশা এবং কাপুরুষতার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, কাশ্মিরে শান্তি ফিরছিল, স্কুল-কলেজ ছিল সরব, উন্নয়নকাজ চলছিল দ্রুত গতিতে, গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছিল, পর্যটক সংখ্যা ছিল রেকর্ড পর্যায়ে, মানুষের আয় বাড়ছিল এবং তরুণদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। দেশের ও কাশ্মিরের শত্রুরা এই অগ্রগতি মেনে নিতে পারেনি।
মোদি আরো বলেন, দেশের প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে এই হামলার যন্ত্রণা গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। তিনি বলেন, হামলার সেই ছবি দেখে প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুঁটছে।
তিনি আশ্বাস দেন, যারা এই হামলার পেছনে রয়েছে তাদের কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। ভারতীয় এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই ঐক্যের ওপর ভর করেই আমরা চূড়ান্তভাবে সন্ত্রাসকে পরাস্ত করব।
গত ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামের বাইসরান অঞ্চলে হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও এক কাশ্মিরি বাসিন্দা নিহত হন। এটিকে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মোদি বলেন, আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করব এবং এমন শাস্তি দেব যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প সন্ত্রাসের মদতদাতাদের চূর্ণ করে দেবে।
শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষক, আইনজীবীসহ ১৯ জন গ্রেফতার: কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের তিন রাজ্যের ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এনডিটিভি লিখেছে, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় গ্রেফতারদের মধ্যে বিধায়ক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। বেশিরভাগই গ্রেফতার হয়েছেন সোশাল মিডিয়ার পোস্টের কারণে।
কেবল আসামেই এখন পর্যন্ত ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। প্রথম গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম আমিনুল ইসলাম। আসামের বিরোধী দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের এই বিধায়ক গ্রেফতার হন বৃহস্পতিবার।
কাশ্মীরের পুলওয়ামা ও পেহেলগাম হামলাকে ‘সরকারি ষড়যন্ত্র’ বলায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আসামে শুক্রবার পর্যন্ত গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন- হাইলাকান্দির জাবির হুসাইন, শিলচরের এ কে বাহাউদ্দিন ও জাভেদ মজুমদার, মরিগাঁওয়ের মহাহার মিয়া এবং শিবসাগরের সাহিল আলী। এছাড়া ফেসবুকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ পোস্ট করার অভিযোগে শুক্রবার রাতে করিমগঞ্জের মুস্তা আহমেদ ওরফে সাহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এনডিটিভি লিখেছে, তাদের মধ্যে জাবির একজন সাংবাদিক; বাহাউদ্দিন শিলচরে অবস্থিত আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ের শিক্ষার্থী এবং জাভেদ একজন আইনজীবী। এদিকে শনিবার বিশ্বনাথ থেকে ২৫ বছর বয়সী জারিফ আলী এবং ছাত্র সংগঠন ‘শত্রু মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’র জেলা সম্পাদক অনিল বানিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অনলাইনে ‘ভারতবিরোধী মন্তব্য’ করার অভিযোগে হাইলাকান্দি থেকে সুমন মজুমদার ওরফে বুলবুল আলম মজুমদার, নগাঁওয়ের মাসুদ আজহার এবং গুয়াহাটি সংলগ্ন হাজো থেকে আরেকজন গ্রেফতার হয়েছে। অন্যদিকে সোশাল মিডিয়ায় ‘পাকিস্তানের পক্ষে কন্টেন্ট’ পোস্ট করায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে কাছাড় জেলা পুলিশ।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, প্রয়োজনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করব। আমরা সোশাল মিডিয়ার সব পোস্ট পরীক্ষা করছি এবং আমরা যাদেরকে দেশবিরোধী মনে করছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো মিল নেই। এই দুই দেশ শত্রু রাষ্ট্র এবং আমাদের এভাবেই থাকতে হবে।