ঢাকা ১২:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’

  • আপডেট সময় : ০৬:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ -ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: রাজধানীর বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙা হয় গত বছরের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন। এবার সেই ভাস্কর্যকে ঘিরে থাকা ম্যুরাল সংবলিত সাতটি দেয়ালও ভেঙে ফেলেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ নামে এই ম্যুরালের জায়গাটিকে উন্মুক্ত স্থান করা হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে এরই মধ্যে সেখানে ‘গণমিনার’ নির্মাণ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল থেকেই ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ ভাঙার কাজ শুরু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেউ কেউ একে ‘ইতিহাস মুছে ফেলার প্রয়াস’ বলেও মন্তব্য করেন।

২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অধ্যায় তুলে ধরা সাতটি দেয়াল নিয়ে গঠিত ছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে ওই স্থানটি একরকম পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এখন বাকি অংশও পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হলো।

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণপ্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে বিজয় সরণিতে ‘গণমিনার’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে গত ২০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ জানায়, এই উদ্যোগে গণমানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে গণচাঁদা সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের স্মরণেই নির্মিত হবে গণমিনার।’ আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে এর একটি দৃশ্যমান রূপ দিতে চায় কমিটি।

নির্মাণ কমিটির আরেক সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খোরশেদ আলম। গত শুক্রবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদসংস্থা বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনায় পুরো বিজয় সরণিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হবে।’

এদিকে, ২৫ জুন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সপ্তম করপোরেশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এ জুলাই শহীদদের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ এবং একটি উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘সপ্তম করপোরেশন সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি কনসেপ্ট তৈরি করা হয়েছে, তার ওপর কাজ চলছে। ১০-১২ দিনের মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে।’

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়া কতটা যৌক্তিক। অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন, ‘একটি ইতিহাস মুছে নতুন ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ কেউ কেউ আবার লিখেছেন, ‘ভবিষ্যতের শহীদদের জন্য মিনার গড়া ভালো, তবে তা যেন অতীতের শহীদদের মুছে না দেয়।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংগঠনের প্রতি উমামার কমিটমেন্ট ছিল কি না, প্রশ্ন রিফাতের

ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’

আপডেট সময় : ০৬:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: রাজধানীর বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙা হয় গত বছরের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন। এবার সেই ভাস্কর্যকে ঘিরে থাকা ম্যুরাল সংবলিত সাতটি দেয়ালও ভেঙে ফেলেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ নামে এই ম্যুরালের জায়গাটিকে উন্মুক্ত স্থান করা হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে এরই মধ্যে সেখানে ‘গণমিনার’ নির্মাণ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল থেকেই ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ ভাঙার কাজ শুরু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেউ কেউ একে ‘ইতিহাস মুছে ফেলার প্রয়াস’ বলেও মন্তব্য করেন।

২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অধ্যায় তুলে ধরা সাতটি দেয়াল নিয়ে গঠিত ছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে ওই স্থানটি একরকম পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এখন বাকি অংশও পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হলো।

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণপ্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে বিজয় সরণিতে ‘গণমিনার’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে গত ২০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ জানায়, এই উদ্যোগে গণমানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে গণচাঁদা সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের স্মরণেই নির্মিত হবে গণমিনার।’ আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে এর একটি দৃশ্যমান রূপ দিতে চায় কমিটি।

নির্মাণ কমিটির আরেক সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খোরশেদ আলম। গত শুক্রবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদসংস্থা বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনায় পুরো বিজয় সরণিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হবে।’

এদিকে, ২৫ জুন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সপ্তম করপোরেশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এ জুলাই শহীদদের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ এবং একটি উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘সপ্তম করপোরেশন সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি কনসেপ্ট তৈরি করা হয়েছে, তার ওপর কাজ চলছে। ১০-১২ দিনের মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে।’

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়া কতটা যৌক্তিক। অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন, ‘একটি ইতিহাস মুছে নতুন ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ কেউ কেউ আবার লিখেছেন, ‘ভবিষ্যতের শহীদদের জন্য মিনার গড়া ভালো, তবে তা যেন অতীতের শহীদদের মুছে না দেয়।’