নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু; আগস্ট মাসের নয় দিনেই এইডিস মশাবাহিত এ রোগে প্রাণ গেছে ১০১ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮৪৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা এ বছরের সর্বোচ্চ। এর আগে গত রোববার ২৭৬৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সেই রেকর্ড তিন দিনও টিকল না। নতুন রোগীদের নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৬৯ জনে। এর মধ্যে অগাস্টের প্রথম ৯ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ২৩৭ জন। গত এক দিনে মৃত্যু হয়েছে আরও ১২ জনের। তাদের নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মোট ৩৫২ জনের মৃত্যু হল।
বাংলাদেশে এর আগে কেবল ২০১৯ সালের এর চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আর মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫০ ছাড়াল এবারই প্রথম। জুলাই মাস থেকে ঢাকার বাইরে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ফলে ভর্তি রোগী ও মৃত্যুর এই সংখ্যা সামনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল বুধবার সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৪২৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৪২১ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৫ হাজার ৬ জন। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল বর্ষা মৌসুমের আগেই। ভরা বর্ষায় জুলাই মাসে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। জুলাই মাসের ৩১ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন রোগী, মৃত্যু হয় ২০৪ জনের। এক মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই সংখ্যা এ বছরের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ। এছাড়া জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন এবং মে মাসে দুজন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। এ বছর এইডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।