ঢাকা ০৮:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূপৃষ্ঠে কীভাবে উঠে আসে সোনা, জানা গলে ব্যাখ্যা

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৬:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: স¤প্রতি নতুন এক গোল্ড-সালফার যৌগ আরিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানী’সহ গবেষকদের একটি দল। যা আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে সোনা কীভাবে জমে তা ব্যাখ্যা করতে সহায়ক বলে দাবি তাদের।

গবেষণায় পৃথিবীর গভীরে ঘটে যাওয়া এমন বিভিন্ন প্রক্রিয়ার উপর নজর দিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান’-এর গবেষকরা, যা মূলত সোনা নিয়ে আসে পৃষ্ঠে।

আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি জমাট আকরিকে পাওয়া সোনা উঠে আসে পৃথিবীর ম্যান্টল থেকে, যা পৃষ্ঠ থেকে ৩০-৫০ মাইল নীচে। এটি বিশেষ করে দেখা যায় ‘প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার’ অঞ্চলের আশপাশে।

ম্যান্টল থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে সোনা নিয়ে আসে ম্যাগমা- যা দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের জানা। তবে এ প্রক্রিয়াটির পিছনে সঠিক কারণ কি তা নিয়ে এখনও রয়েছে বিতর্ক।

ম্যান্টলের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সালফারের সঙ্গে সোনার অনন্য উপায়ে কীভাবে বন্ধন তৈরি করে তা দেখতে এখন উন্নত কম্পিউটার মডেলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।

এ বন্ধনটি এক ‘গোল্ড-ট্রাইসালফার’ যৌগ গঠন করে, যা ম্যাগমায় থাকা সোনাকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ।

প্রথমবারের মতো আমরা এই পরিস্থিতিতে গোল্ড-ট্রাইসালফার যৌগের অস্তিত্ব দেখাতে পেরেছি, বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান’-এর অধ্যাপক অ্যাডাম সাইমন।

কিছু আগ্নেয়গিরির অঞ্চল কেন এত সোনায় সমৃদ্ধ সে সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারে এ গবেষণাটি।

যেভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আসে সোনা: বেশিরভাগ সময়ই পৃথিবীর সাবডাকশন জোনে মেলে জমে থাকা সোনা। এ জোনে একটি টেকটোনিক প্লেট অন্য আরেকটি প্লেটের নীচে থাকে। এসব অঞ্চল রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের আশপাশে, যা অসংখ্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরির আবাসস্থল। যেমন- নিউ জিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, আলাস্কা ও চিলির অঞ্চল।

পৃথিবীর পৃষ্ঠে সোনা উঠে আসার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় সমুদ্রের সাবডাকশন প্লেট দিয়ে, যা পানি ও সালফারওয়ালা তরল বহন করে ম্যান্টলে। সঠিক তাপমাত্রা ও চাপের অবস্থায় ম্যান্টলে থাকা সোনার সঙ্গে সংযোগ ঘটায় এসব তরল।

সালফারের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে সোনার-ট্রাইসালফার যৌগ গঠন করে সোনা, যা ম্যাগমার ভেতরে ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই জটিল যৌগটিও বহন করে আনে ম্যাগমা। অবশেষে আকরিক বা প্রাকৃতিক শিলায় এসে জমে সোনা।

এ গবেষণাটিই প্রথমবারের মতো ‘থার্মোডাইনামিক মডেল’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে কীভাবে গোল্ড-ট্রাইসালফার যৌগ গঠন ও কাজ করে।

নিয়ন্ত্রিত ল্যাব পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে মডেলটি, যেটি অনুকরণ করেছে ম্যান্টলের উচ্চ-চাপ ও উচ্চ-তাপমাত্রার অবস্থা।

পৃথিবীর ম্যান্টল থেকে সোনা কীভাবে পৃষ্ঠে আসে এর রহস্য উন্মোচনের এ গবেষণা কেবল বিজ্ঞানকেই এগিয়ে নিয়ে যায় না, বরং আগ্নেয়গিরির অঞ্চলে মূল্যবান সোনার মজুদ সন্ধানের জন্যও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভূপৃষ্ঠে কীভাবে উঠে আসে সোনা, জানা গলে ব্যাখ্যা

আপডেট সময় : ০৭:৪৬:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: স¤প্রতি নতুন এক গোল্ড-সালফার যৌগ আরিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানী’সহ গবেষকদের একটি দল। যা আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে সোনা কীভাবে জমে তা ব্যাখ্যা করতে সহায়ক বলে দাবি তাদের।

গবেষণায় পৃথিবীর গভীরে ঘটে যাওয়া এমন বিভিন্ন প্রক্রিয়ার উপর নজর দিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান’-এর গবেষকরা, যা মূলত সোনা নিয়ে আসে পৃষ্ঠে।

আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি জমাট আকরিকে পাওয়া সোনা উঠে আসে পৃথিবীর ম্যান্টল থেকে, যা পৃষ্ঠ থেকে ৩০-৫০ মাইল নীচে। এটি বিশেষ করে দেখা যায় ‘প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার’ অঞ্চলের আশপাশে।

ম্যান্টল থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে সোনা নিয়ে আসে ম্যাগমা- যা দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের জানা। তবে এ প্রক্রিয়াটির পিছনে সঠিক কারণ কি তা নিয়ে এখনও রয়েছে বিতর্ক।

ম্যান্টলের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সালফারের সঙ্গে সোনার অনন্য উপায়ে কীভাবে বন্ধন তৈরি করে তা দেখতে এখন উন্নত কম্পিউটার মডেলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।

এ বন্ধনটি এক ‘গোল্ড-ট্রাইসালফার’ যৌগ গঠন করে, যা ম্যাগমায় থাকা সোনাকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ।

প্রথমবারের মতো আমরা এই পরিস্থিতিতে গোল্ড-ট্রাইসালফার যৌগের অস্তিত্ব দেখাতে পেরেছি, বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান’-এর অধ্যাপক অ্যাডাম সাইমন।

কিছু আগ্নেয়গিরির অঞ্চল কেন এত সোনায় সমৃদ্ধ সে সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারে এ গবেষণাটি।

যেভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আসে সোনা: বেশিরভাগ সময়ই পৃথিবীর সাবডাকশন জোনে মেলে জমে থাকা সোনা। এ জোনে একটি টেকটোনিক প্লেট অন্য আরেকটি প্লেটের নীচে থাকে। এসব অঞ্চল রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের আশপাশে, যা অসংখ্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরির আবাসস্থল। যেমন- নিউ জিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, আলাস্কা ও চিলির অঞ্চল।

পৃথিবীর পৃষ্ঠে সোনা উঠে আসার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় সমুদ্রের সাবডাকশন প্লেট দিয়ে, যা পানি ও সালফারওয়ালা তরল বহন করে ম্যান্টলে। সঠিক তাপমাত্রা ও চাপের অবস্থায় ম্যান্টলে থাকা সোনার সঙ্গে সংযোগ ঘটায় এসব তরল।

সালফারের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে সোনার-ট্রাইসালফার যৌগ গঠন করে সোনা, যা ম্যাগমার ভেতরে ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই জটিল যৌগটিও বহন করে আনে ম্যাগমা। অবশেষে আকরিক বা প্রাকৃতিক শিলায় এসে জমে সোনা।

এ গবেষণাটিই প্রথমবারের মতো ‘থার্মোডাইনামিক মডেল’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে কীভাবে গোল্ড-ট্রাইসালফার যৌগ গঠন ও কাজ করে।

নিয়ন্ত্রিত ল্যাব পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে মডেলটি, যেটি অনুকরণ করেছে ম্যান্টলের উচ্চ-চাপ ও উচ্চ-তাপমাত্রার অবস্থা।

পৃথিবীর ম্যান্টল থেকে সোনা কীভাবে পৃষ্ঠে আসে এর রহস্য উন্মোচনের এ গবেষণা কেবল বিজ্ঞানকেই এগিয়ে নিয়ে যায় না, বরং আগ্নেয়গিরির অঞ্চলে মূল্যবান সোনার মজুদ সন্ধানের জন্যও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।