ঢাকা ১১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

বয়সে ফের ছাড় পাচ্ছেন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা

  • আপডেট সময় : ০১:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মে ২০২১
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে


নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউনের (বিধিনিষেধ) কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরি প্রার্থীরা বয়সে ছাড় পাচ্ছেন। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কারও নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের বয়স শিথিলের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আবারও নির্দেশনা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের।
করোনা মাহামারির প্রথম দফায় সাধারণ ছুটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় দেয় সরকার। তখন গত ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছিল তাদের পরবর্তী ৫ মাস, অর্থাৎ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু গত এপ্রিল থেকে ফের লকডাউন চলছে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থাগুলো চাকরির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিতে পারছে না।
এদিকে, করোনা মহামারি বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক লাখ চাকরি প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স লকডাউনের মধ্যে চলে গেছে বলে জানিয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোজাম্মেল মিয়াজী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যাচ্ছে না। কারণ নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে সেশনজট নেই। কিন্তু করোনার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট শুরু হয়েছে। এখানেও শিক্ষার্থীরা ভুগছে। সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দিচ্ছে। শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সেভাবে কোনো কিছু নেই। চাকরি প্রার্থীরা খুবই কষ্টে আছেন। করোনা বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
‘আমি মনে করি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে দুই বছর শিথিল করা উচিত সরকারের।’
পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা করোনার আগে একটি জরিপে দেখেছি, প্রতি ছয় মাসে সরকারিসহ সব ধরনের চাকরিতে ২৮ লাখ প্রার্থী আবেদন করে থাকে। করোনার কারণে বেকারত্ব বেড়ে গিয়ে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। আমরা মনে করি এখন চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখের চাকরির বয়স করোনার মধ্যে পেরিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিধিনিষেধের কারণে যে চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে চেষ্টা করব। যে সময়টা তাদের লস হয়েছে, যখন যে সময় অ্যাডভারটাইজমেন্টটা হওয়ার কথা ছিল, আগের সময়টা ধরেই পরবর্তীকালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বয়সটা যাতে ছাড় দেয়া হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নেব।’
তিনি বলেন, ‘যে টাইমটা লস হয়েছে আমরা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বলে দেব, বয়সে ছাড় দিয়ে সেই সময়টা যাতে পুষিয়ে দেয়া হয়। যখন পরিস্থিতি স্বাভবিক হবে আমরা আবারও সবাইকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে দেব।’
গত বছরের মার্চ মাসের শুরুতে দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা জানায় সরকার। পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে থাকলে ওই বছলের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। ওই বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ছিল। পরে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়া হয়, চালু করা হয় গণপরিবহন। পরে এই ব্যবস্থা তিন দফায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ফের উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দেয় সরকার। তবে গণপরিবহন, মার্কেট খোলা রেখে এই নিষেধাজ্ঞা ছিল অনেকটাই অকার্যকর।
পরে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পরে সাতদিন করে দু-দফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৫ মে (বুধবার) মধ্যরাতে। এদিকে, সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বয়সে ফের ছাড় পাচ্ছেন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা

আপডেট সময় : ০১:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মে ২০২১


নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউনের (বিধিনিষেধ) কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরি প্রার্থীরা বয়সে ছাড় পাচ্ছেন। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কারও নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের বয়স শিথিলের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আবারও নির্দেশনা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের।
করোনা মাহামারির প্রথম দফায় সাধারণ ছুটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় দেয় সরকার। তখন গত ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছিল তাদের পরবর্তী ৫ মাস, অর্থাৎ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু গত এপ্রিল থেকে ফের লকডাউন চলছে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থাগুলো চাকরির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিতে পারছে না।
এদিকে, করোনা মহামারি বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক লাখ চাকরি প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স লকডাউনের মধ্যে চলে গেছে বলে জানিয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোজাম্মেল মিয়াজী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যাচ্ছে না। কারণ নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে সেশনজট নেই। কিন্তু করোনার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট শুরু হয়েছে। এখানেও শিক্ষার্থীরা ভুগছে। সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দিচ্ছে। শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সেভাবে কোনো কিছু নেই। চাকরি প্রার্থীরা খুবই কষ্টে আছেন। করোনা বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
‘আমি মনে করি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে দুই বছর শিথিল করা উচিত সরকারের।’
পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা করোনার আগে একটি জরিপে দেখেছি, প্রতি ছয় মাসে সরকারিসহ সব ধরনের চাকরিতে ২৮ লাখ প্রার্থী আবেদন করে থাকে। করোনার কারণে বেকারত্ব বেড়ে গিয়ে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। আমরা মনে করি এখন চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখের চাকরির বয়স করোনার মধ্যে পেরিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিধিনিষেধের কারণে যে চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে চেষ্টা করব। যে সময়টা তাদের লস হয়েছে, যখন যে সময় অ্যাডভারটাইজমেন্টটা হওয়ার কথা ছিল, আগের সময়টা ধরেই পরবর্তীকালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বয়সটা যাতে ছাড় দেয়া হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নেব।’
তিনি বলেন, ‘যে টাইমটা লস হয়েছে আমরা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বলে দেব, বয়সে ছাড় দিয়ে সেই সময়টা যাতে পুষিয়ে দেয়া হয়। যখন পরিস্থিতি স্বাভবিক হবে আমরা আবারও সবাইকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে দেব।’
গত বছরের মার্চ মাসের শুরুতে দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা জানায় সরকার। পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে থাকলে ওই বছলের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। ওই বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ছিল। পরে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়া হয়, চালু করা হয় গণপরিবহন। পরে এই ব্যবস্থা তিন দফায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ফের উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দেয় সরকার। তবে গণপরিবহন, মার্কেট খোলা রেখে এই নিষেধাজ্ঞা ছিল অনেকটাই অকার্যকর।
পরে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পরে সাতদিন করে দু-দফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৫ মে (বুধবার) মধ্যরাতে। এদিকে, সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।