ঢাকা ০৮:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

বয়সের সঙ্গে বদলায় শরীরে পানির চাহিদা

  • আপডেট সময় : ১০:৪০:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অগাস্ট ২০২২
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্যা ও পরিচর্যা ডেস্ক : দিনে আট গ্লাস পানি পান করাকে আদর্শ ধরা হলেও বয়সের সঙ্গে শরীরের পানির চাহিদাতেও পরিবর্তন আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইন্ডফার্স্ট হেল্থ অ্যান্ড ফিটনেস’য়ের ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’ বিভাগের পরিচালক ম্যারি কেট কিইস বলেন, “বয়স অনুযায়ী শরীরের আর্দ্রতার চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়ার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, পানি শরীরের বর্জ্য অপসারণ করে। প্রতিদিন আমরা যা কিছু খাই সবকিছুই কিছু না কিছু বর্জ্য তৈরি করে। বৃক্ক পানির মাধ্যমে সেই বর্জ্যকে মূত্রে পরিণত করে। এখন শরীরে যদি পর্যাপ্ত পানি না থাকে তাহলে মূত্র তৈরি হওয়া প্রধান উপাদানেই ঘাটতি রয়ে যায়।” ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন ঋতুর প্রভাব ও শারীরিক কসরতের সময় শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পানি অত্যন্ত জরুরি। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি প্রয়োজন। রক্তনালীর মধ্যে এমন একটা চাপ বজায় রাখতে হয় যাতে রক্ত শরীরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব জায়গায় পৌঁছায়, আবার এত বেশিও না যে রক্তনালীর ক্ষতি হয়।” সুক্ষ্ম এই চাপের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শরীরকে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করতে হবে যার প্রধান হল পানি।
কিইস বলেন, “বয়সের সঙ্গে শরীরের গঠনে পরিবর্তন হয়। শরীরে চর্বি বাড়ে, আর পেশি কমে। পেশি চর্বির তুলনায় বেশিমাত্রায় সিক্ত বা আর্দ্র, অর্থাৎ চর্বির তুলনায় পেশির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি। এখন বয়সের সঙ্গে যদি পেশি কমে, তাহলে শরীরের পানি ধরে রাখার ক্ষমতাও কমছে। তাই এসময় বাড়াতে হবে পানির সরবরাহ।” “ডাই-ইউরেটিক’ এই ধরনের ওষুধ শরীরের মূত্র উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এসময় বাড়তি পানির সরবরাহ না থাকলে অন্যান্য কাজের জন্য পানির ঘাটতি দেখা দেবে।” বয়সে বাড়ার সঙ্গে শরীরে নানান জটিলতা দেখা দেওয়া কারণে ওষুধ আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। যেমন- উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ‘ক্লোরথালিডন’ ধরনের ওষুধ খাওয়া পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসক যা ‘ডাই-ইউরেটিক ড্রাগ’।” কেইস আরও বলেন, “অপরদিকে তৃষ্ণা অনুভব করার ক্ষমতাও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। পানিশূন্যতা তখন তৃষ্ণা নয়, অবসাদ কিংবা দ্বিধাগ্রস্ততা হয়ে দেখা দিতে পারে। দিনে আট গ্লাস পানি পানের নিয়ম সিংহভাগ মানুষের জন্যই যথেষ্ট।” ‘দ্য ইউএস ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিস অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন’য়ের পরামর্শ মতে, পুরুষের প্রতিদিন ৩.৭ লিটার আর নারীর ২.৭ লিটার পানি পান করতেই হবে। শুধু সাদা পানি নয়, চা, কফি, ফল ইতাদি সকল তরল মিলিয়ে এই মাত্রা।”
যে কোনো বয়সেই পানির চাহিদার পূরণের জন্য যা করতে হবে :
পানির স্বাদ বাড়ানো : সাদা পানি পান করায় যদি বিরক্তি আসে তবে পানিতে ফলের রস মেশান। লেবু, শসা, তরমুজ ইত্যাদি পানির স্বাদকে ভিন্ন মাত্রা দেবে, সুস্বাদু করে তুলবে। তবে চিনি থেকে আবার সাবধান থাকতে হবে।
মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ : মদও তরল কিন্তু তা শরীরের আর্দ্রতা কমিয়ে। কারণ অ্যালকোহল হল ‘ডাই-ইউরেটিক’। তাই মদ্যপান পরিহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পানির তাপমাত্রা : বরফশীতল, ঠা-া, কক্ষ তাপমাত্রা, কুসুম গরম, গরম এসবই কিছু নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বোঝায়। সবাই ঠা-া পানি যেমন পছন্দ করেন না তেমনি সবাই কুসুম গরম পানিও পান করতে পারেন না। তাই আপনার যেমন তাপমাত্রা পানি পছন্দ সেই তাপমাত্রায় পানিকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে আপনাকেই।
চুমুকে চুমুকে পানি পান : তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আবার সারাদিনে তিন চার লিটার পানি পান করতে হবে বলে এক বসাতেই এক লিটার পান করে ফেললে সেটাও শরীরে কোনো কাজে আসবে না। আবার বয়সের সঙ্গে তৃষ্ণার অনুভূতি কমে যাওয়া ব্যাপারটাও আছে। তাই হাতের কাছে বিশুদ্ধ পানি রাখুন। ২০ মিনিট পর পর তাতে চুমুক দিন। এভাবে সারাদিনে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করুন। এতে কখনই আপনার শরীরে পানির অভাবে হাহাকার করবে না।
মনে রাখা : শরীরে পানির অভাব হওয়া প্রধান কারণ হল, পানি পান করতে ভুলে যাই। চোখের সামনে থাকলেও ভুলে যান অনেকেই। এক্ষেত্রে পানি পান করাকে একটা অভ্যাস বানাতে হবে। হাতে কিংবা ব্যাগে ছোট একটা পানির বোতল রাখুন সবসময়। গল্প করছেন, পানিতে চুমুক দিন। ভিডিও দেখছেন কিংবা মিটিংয়ে আছেন, আনমনে পানিতে চুমুক দিন। কাজের ফাঁকে গভীর কোনো চিন্তা করছেন, পানি পান করতে করতে চিন্তার করুন। এই অভ্যাসটা হয়ে গেলেই শরীরে আর পানির ঘাটতি তৈরি হবে না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বয়সের সঙ্গে বদলায় শরীরে পানির চাহিদা

আপডেট সময় : ১০:৪০:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অগাস্ট ২০২২

স্বাস্থ্যা ও পরিচর্যা ডেস্ক : দিনে আট গ্লাস পানি পান করাকে আদর্শ ধরা হলেও বয়সের সঙ্গে শরীরের পানির চাহিদাতেও পরিবর্তন আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইন্ডফার্স্ট হেল্থ অ্যান্ড ফিটনেস’য়ের ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’ বিভাগের পরিচালক ম্যারি কেট কিইস বলেন, “বয়স অনুযায়ী শরীরের আর্দ্রতার চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়ার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, পানি শরীরের বর্জ্য অপসারণ করে। প্রতিদিন আমরা যা কিছু খাই সবকিছুই কিছু না কিছু বর্জ্য তৈরি করে। বৃক্ক পানির মাধ্যমে সেই বর্জ্যকে মূত্রে পরিণত করে। এখন শরীরে যদি পর্যাপ্ত পানি না থাকে তাহলে মূত্র তৈরি হওয়া প্রধান উপাদানেই ঘাটতি রয়ে যায়।” ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন ঋতুর প্রভাব ও শারীরিক কসরতের সময় শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পানি অত্যন্ত জরুরি। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি প্রয়োজন। রক্তনালীর মধ্যে এমন একটা চাপ বজায় রাখতে হয় যাতে রক্ত শরীরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব জায়গায় পৌঁছায়, আবার এত বেশিও না যে রক্তনালীর ক্ষতি হয়।” সুক্ষ্ম এই চাপের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শরীরকে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করতে হবে যার প্রধান হল পানি।
কিইস বলেন, “বয়সের সঙ্গে শরীরের গঠনে পরিবর্তন হয়। শরীরে চর্বি বাড়ে, আর পেশি কমে। পেশি চর্বির তুলনায় বেশিমাত্রায় সিক্ত বা আর্দ্র, অর্থাৎ চর্বির তুলনায় পেশির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি। এখন বয়সের সঙ্গে যদি পেশি কমে, তাহলে শরীরের পানি ধরে রাখার ক্ষমতাও কমছে। তাই এসময় বাড়াতে হবে পানির সরবরাহ।” “ডাই-ইউরেটিক’ এই ধরনের ওষুধ শরীরের মূত্র উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এসময় বাড়তি পানির সরবরাহ না থাকলে অন্যান্য কাজের জন্য পানির ঘাটতি দেখা দেবে।” বয়সে বাড়ার সঙ্গে শরীরে নানান জটিলতা দেখা দেওয়া কারণে ওষুধ আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। যেমন- উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ‘ক্লোরথালিডন’ ধরনের ওষুধ খাওয়া পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসক যা ‘ডাই-ইউরেটিক ড্রাগ’।” কেইস আরও বলেন, “অপরদিকে তৃষ্ণা অনুভব করার ক্ষমতাও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। পানিশূন্যতা তখন তৃষ্ণা নয়, অবসাদ কিংবা দ্বিধাগ্রস্ততা হয়ে দেখা দিতে পারে। দিনে আট গ্লাস পানি পানের নিয়ম সিংহভাগ মানুষের জন্যই যথেষ্ট।” ‘দ্য ইউএস ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিস অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন’য়ের পরামর্শ মতে, পুরুষের প্রতিদিন ৩.৭ লিটার আর নারীর ২.৭ লিটার পানি পান করতেই হবে। শুধু সাদা পানি নয়, চা, কফি, ফল ইতাদি সকল তরল মিলিয়ে এই মাত্রা।”
যে কোনো বয়সেই পানির চাহিদার পূরণের জন্য যা করতে হবে :
পানির স্বাদ বাড়ানো : সাদা পানি পান করায় যদি বিরক্তি আসে তবে পানিতে ফলের রস মেশান। লেবু, শসা, তরমুজ ইত্যাদি পানির স্বাদকে ভিন্ন মাত্রা দেবে, সুস্বাদু করে তুলবে। তবে চিনি থেকে আবার সাবধান থাকতে হবে।
মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ : মদও তরল কিন্তু তা শরীরের আর্দ্রতা কমিয়ে। কারণ অ্যালকোহল হল ‘ডাই-ইউরেটিক’। তাই মদ্যপান পরিহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পানির তাপমাত্রা : বরফশীতল, ঠা-া, কক্ষ তাপমাত্রা, কুসুম গরম, গরম এসবই কিছু নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বোঝায়। সবাই ঠা-া পানি যেমন পছন্দ করেন না তেমনি সবাই কুসুম গরম পানিও পান করতে পারেন না। তাই আপনার যেমন তাপমাত্রা পানি পছন্দ সেই তাপমাত্রায় পানিকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে আপনাকেই।
চুমুকে চুমুকে পানি পান : তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আবার সারাদিনে তিন চার লিটার পানি পান করতে হবে বলে এক বসাতেই এক লিটার পান করে ফেললে সেটাও শরীরে কোনো কাজে আসবে না। আবার বয়সের সঙ্গে তৃষ্ণার অনুভূতি কমে যাওয়া ব্যাপারটাও আছে। তাই হাতের কাছে বিশুদ্ধ পানি রাখুন। ২০ মিনিট পর পর তাতে চুমুক দিন। এভাবে সারাদিনে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করুন। এতে কখনই আপনার শরীরে পানির অভাবে হাহাকার করবে না।
মনে রাখা : শরীরে পানির অভাব হওয়া প্রধান কারণ হল, পানি পান করতে ভুলে যাই। চোখের সামনে থাকলেও ভুলে যান অনেকেই। এক্ষেত্রে পানি পান করাকে একটা অভ্যাস বানাতে হবে। হাতে কিংবা ব্যাগে ছোট একটা পানির বোতল রাখুন সবসময়। গল্প করছেন, পানিতে চুমুক দিন। ভিডিও দেখছেন কিংবা মিটিংয়ে আছেন, আনমনে পানিতে চুমুক দিন। কাজের ফাঁকে গভীর কোনো চিন্তা করছেন, পানি পান করতে করতে চিন্তার করুন। এই অভ্যাসটা হয়ে গেলেই শরীরে আর পানির ঘাটতি তৈরি হবে না।